Advertisement
E-Paper

ভোটের সঙ্গেই দিনভর চলল গেরিলা-যুদ্ধ 

সকাল সাড়ে ছ’টাও বাজেনি। ভোটকেন্দ্রগুলি ‘স্যানিটাইজ’ করার কাজ চলছে। সাতটা থেকে ভোট। গ্রামের লোক সকাল সকাল ভোট দিতে পৌঁছে যান। তার আগে নায়ানারের কাছে আধাসেনা জওয়ানরা রাস্তা ধরে বোমা খুঁজতে খুঁজতে এগোচ্ছেন। ঠিক এই সময় প্রথম হামলা চালাল মাওবাদীরা। প্রায় দু’কেজি ওজনের আইইডি বিস্ফোরণ। অল্পের বেঁচে গেলেন জওয়ানেরা।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:২৫
ছবি: এএফপি।

ছবি: এএফপি।

ডঙ্কিনী নদীর ধারে দন্তেশ্বরী মন্দির পার হলেই, দন্তেওয়াড়া থেকে জঙ্গল-পাহাড়ে ঘেরা গা ছমছমে রাস্তা ছুটেছে কাটেকল্যাণের দিকে।

সকাল সাড়ে ছ’টাও বাজেনি। ভোটকেন্দ্রগুলি ‘স্যানিটাইজ’ করার কাজ চলছে। সাতটা থেকে ভোট। গ্রামের লোক সকাল সকাল ভোট দিতে পৌঁছে যান। তার আগে নায়ানারের কাছে আধাসেনা জওয়ানরা রাস্তা ধরে বোমা খুঁজতে খুঁজতে এগোচ্ছেন। ঠিক এই সময় প্রথম হামলা চালাল মাওবাদীরা। প্রায় দু’কেজি ওজনের আইইডি বিস্ফোরণ। অল্পের বেঁচে গেলেন জওয়ানেরা।

সুকমার কোন্টায় হলুদ রঙের স্কুল বাড়ির দেওয়ালের নীচে আইইডি পোঁতা ছিল। সিআরপি জওয়ানরা উদ্ধার করলেন। ভোট শুরুর পরে বিস্ফোরণ হলে গোটা বাড়িটাই উড়ে যেত। সুকমার বান্দার ভোটকেন্দ্রের মধ্যেও মিলল আইইডি। ঝুঁকি না নিয়ে দূরের গাছতলাতেই শামিয়ানা টাঙিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হল। বিজাপুরে আবার ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তায় একের পর এক আইইডি। আধাসেনা জওয়ানেরা নিজেরাই বোমাগুলো ফাটিয়ে দিলেন।

বেলা গড়াতে মরিয়া মাওবাদীরা বিজাপুরের পামেডে সিআরপির কোবরা বাহিনীর উপরে হামলা চালাল। প্রথমে এমপুর গ্রামের কাছে। মাওবাদীদের ঝাঁকে ঝাঁকে গুলিতে দু’জন জওয়ান আহত হন। পাল্টা গুলির জবাবে পিছু হটে মাওবাদীরা। কিছু ক্ষণ পরে মাজিগুডা গ্রামের কাছে জঙ্গলের মধ্যে ফের ওই বাহিনীর উপরেই মাওবাদীরা হামলা চালায়। আরও তিন জন আহত হন। মাওবাদীদেরও পাঁচ জন মারা গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। বিকেলের পরে সংঘর্ষে দু’জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে সুকমায়।

ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদীদের চারণক্ষেত্র বস্তার-ভূমির ১২টি বিধানসভা আসন-সহ মোট ১৮টি আসনে আজ প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ হল। আর সারা দিনই বস্তার-ভূমি জুড়ে মাওবাদীদের সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধ চলল প্রায় দেড় লক্ষ আধাসেনা ও ভিন্ রাজ্যের পুলিশের।

ভোট করতে দেব না। ভোট দিলে আঙুল কেটে নেব। মাওবাদীদের এই সন্ত্রাসের মুখে রমন সিংহ সরকারের চ্যালেঞ্জ ছিল, মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় যত বেশি সম্ভব মানুষকে দিয়ে ভোট দেওয়ানো। যে কারণে ১৮টি কেন্দ্রের প্রায় ৩১ লক্ষ ৮০ হাজার ভোটারের জন্য কালাশনিকভ হাতে প্রায় দেড় লক্ষ জওয়ান নামানো হয়েছিল। তার পরেও মাওবাদীদের হামলার ভয়ে অনেক জায়গায় নির্ধারিত জায়গা থেকে ভোটকেন্দ্র সরাতে হয়েছে। বস্তারের গ্রামগুলিতে আদিবাসীদের বাড়িতে বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী রমন সস্তার চাল, ফ্রি-তে সাইকেল, রান্নার গ্যাস, স্মার্ট ফোন পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল, মাওবাদীদের লাল চোখ পরোয়া না করে গ্রামের মানুষ ভোট দিতে এলে, বিশেষ করে মহিলারা—ভোটটা বিজেপিতেই পড়বে।

মাওবাদীরা পুরোপুরি সফল হয়নি। কিন্তু দিনের শেষে হাসি ফোটেনি রমনের মুখেও। ১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে অতি-স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত ছিল ১০টি। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত এগুলিতে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ভোট

পড়েছে মাত্র ৫২ শতাংশ। মাওবাদীদের ডেরা বিজাপুরে ভোট পড়েছে মাত্র ৩৩ শতাংশ। মাওবাদীদের সদর দফতর অবুঝমাঢ়-সহ নারায়ণপুরে ভোটের হার ৪০ শতাংশের কম। দন্তেওয়াড়ায় ভোট পড়েছে ৪৯ শতাংশ। সুকমার কোন্টায় ৪৬ শতাংশের কিছু বেশি।

তুলনায় নিরাপদ ৮টি কেন্দ্রে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট হয়েছে। সেখানে ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে।

রমনের কপালে চিন্তার ভাঁজের কারণ, ১৫ বছর তিনি মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে থাকলেও, পাঁচ বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ও কংগ্রেসের ভোটের হারের ফারাক ছিল মাত্র ০.৭৫ শতাংশ। রমন জানেন, এ বার বিরোধীদের পক্ষে এই ব্যবধান মুছে ফেলা মোটে কঠিন নয়। তাঁর আরও চিন্তার কারণ, আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকাতেও কংগ্রেসের থেকে পিছিয়ে আছে বিজেপি।

২০১৩-তে সুকমায় মাওবাদী হামলায় কংগ্রেসের গোটা রাজ্য নেতৃত্ব কার্যত মুছে যায়। মারা যান মাওবাদী মোকাবিলায় তৈরি সালওয়া জুড়ুমের জনক মহেন্দ্র কর্মাও। সেই মহেন্দ্র কর্মার স্ত্রী দেবতী কর্মা এখন দন্তেওয়াড়ার বিধায়ক, এ বারও কংগ্রেসের প্রার্থী। দেবতীর অভিযোগ, “বিজেপিই এখন মাওবাদীদের হাত শক্ত করছে। ওরা চায় না মানুষ কংগ্রেসকে ভোট দিক।”

মাওবাদীদের বাধা কাটিয়ে ভোটের হার বাড়াতে নির্বাচন কমিশন অবশ্য চেষ্টার কসুর করেনি। রাজনৈতিক দল যত না হোর্ডিং টাঙিয়েছে, বস্তার জুড়ে কমিশন ‘ভোট পন্ডুম (ভোট দিতে যান) স্লোগানের প্রচার করেছে তার থেকে বেশি। ছত্তীসগঢ়ের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সুব্রত সাহু জানান, সুকমার পালমবুড়ায় মাওবাদীদের হুমকির মধ্যেও গত ১৫ বছরে এই প্রথম ৪৪ জন ভোট দিয়েছেন। দন্তেওয়াড়ার মুলর, নিলয়ায়াতেও এই প্রথম ভোট পড়ল।

কোথাও উল্টো ফলও হয়েছে। কাঙ্কেড়ের আমাপানিতে মাওবাদীদের হামলার ভয়ে ভোটকেন্দ্র টেমাতে সরিয়ে নেওয়া হয়। আমাপানির কোনও মানুষই তাই ভোট দেননি।

Assembly Elections 2018 Chhattisgarh Assembly Elections 2018 Chhattisgarh Soldiers Naxals Maoists
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy