ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। —নিজস্ব চিত্র।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাঁর একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যে ‘বিপ্লব’ ঘটাচ্ছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। নিজের নামকে যেন আক্ষরিক অর্থেই সার্থক করে চলেছেন তিনি। কাজে না হোক, অন্তত কথার মাধ্যমে! কখনও মহাভারতে ইন্টারনেটের অস্তিত্ব ছিল বলে মন্তব্য করেছেন। কখনও বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরই সিভিল সার্ভিসে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তো কখনও প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরী ডায়ানা হেডেনে সৌন্দর্যের মাপকাঠি বিচার করেছেন। কখনও আবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল বর্জন করেছেন বলে দাবি করেছেন। এ বার তাঁর দাবি, ত্রিপুরার রাজপরিবারের সন্তান সোমদেব দেববর্মণ ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। যা শুনে ফের সমালোচনার মুখে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
শনিবার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে টেনিস খেলোয়াড় সোমদেব দেববর্মণ, জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার, ফুলবল খেলোয়াড় লক্ষ্মিতা রিয়াং এবং দীপার কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীকে সংবর্ধনা দেয় রাজ্যের যুব বিষয়ক এবং ক্রীড়া মন্ত্রক। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব, উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা, ক্রীড়ামন্ত্রী মনোজ দেব-সহ বহু বিশিষ্টজন। সেখানে ভাষণ দেন বিপ্লব দেব। উদ্দেশ্য ছিল, রাজ্যে খেলাধুলোকে আরও উৎসাহ দেওয়া। তবে নিজের ভাষণে তিনি সোমদেবকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন। বিপ্লব দেবের কথায়, “ব্যাডমিন্টনে আমাদের গর্ব সোমদেব দেববর্মা রাজপরিবারের ছেলে।” মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এ কথা শুনে রাজ্য রাজনীতির অন্দরে ফের সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিরোধী দলের নেতারা তো বটেই সমালোচনায় মুখর হয়েছেন স্বয়ং সোমদেবের দাদু।
বিপ্লব দেবের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিয়ে গিয়ে তাঁকে কড়া ভাষায় বিঁধেছে বিরোধী দল কংগ্রেস। কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক ও মুখপাত্র তাপস দে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দিতে লজ্জাবোধ হয়। তিনি রাজ্যের ইতিহাস-ভূগোল কিছুই জানেন না। এমনকী, রাজ্যের কৃতি সন্তানদের সম্পর্কেও কিছু জানেন না। যাঁদের সংবর্ধিত করতে গেলেন, তাঁদের সম্পর্কেও ভুল তথ্য দিলেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর এই অজ্ঞতা এ রাজ্যের পক্ষে অসম্মানজনক।” গোটা বিষয়ে অসন্তুষ্ট সোমদেবের দাদু তথা বিশিষ্ট সমাজকর্মী সলিল দেববর্মণও। তাঁর কটাক্ষ, “এঁদের অজ্ঞতার কারণে দুঃখবোধ হয়।”
কী বললেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব? দেখুন ভিডিয়ো
এই প্রথম নয়। এর আগেও বহু বিতর্কিত মন্তব্য করে ব্যঙ্গ-বিস্ময়-সমালোচনা মুখে পড়েছেন বিপ্লব দেব। ত্রিপুরায় দীর্ঘ বাম জমানার অবসার ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসার পর একাধিক বার এ ধরনের মন্তব্য করেছিলেন শিরোনামে উঠে এসেছেন তিনি। কখনও বলেছেন, ‘‘মহাভারতের যুগেও ইন্টারনেট ছিল। তা না হলে সঞ্জয় কী ভাবে ধৃতরাষ্ট্রকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের ধারাবিবরণী দেবেন?’’ আবার কখনও বা তাঁর মন্তব্য, “সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদেরই সিভিল সার্ভিসে যাওয়া উচিত। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের নয়।”
নিজের ভাষণে সোমদেব দেববর্মণের পরিচয় জানাতে গিয়েই ফের বিতর্কে বিপ্লব দেব। —নিজস্ব চিত্র।
নতুন প্রজন্মের কাছে নিজস্ব ভঙ্গিতে এক সময় তাঁর পরামর্শ ছিল, “চাকরির বদলে গরুর দুধ বিক্রি করলে ১০ বছরের মধ্যে ১০ লক্ষ টাকার মালিক হয়ে যাবেন।” প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরী ডায়না হেডেনকে নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণ, “ডায়না হেডেন এমন কিছু সুন্দরী নন যে তাঁকে বিশ্বসুন্দরী করতে হবে!” এ ভাবে একের পর এক বেলাগাম মন্তব্যে দেশ জুড়েই হাসির খোরাক হয়েছেন তিনি। তাতে অস্বস্তিতে পড়েছে তাঁর দল বিজেপি। তবুও তাঁর বেলাগাম মন্তব্যের রেশ থামেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy