Advertisement
E-Paper

দাদুদের শিকড় ছেঁড়ার ‘গল্প’ লিখছে খুদেরা

কিন্তু কোনও পাড়ার ইতিহাস? তার পত্তনের গোড়ার কথা? তার প্রাচীন চায়ের দোকানের গুঞ্জন? আর তার সব কিছুর সঙ্গে যদি জড়িয়ে থাকে ভিন দেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের শিকড় ছেঁড়ার যন্ত্রণার স্মৃতি?

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৬
ছবিতে সেই সব গল্প।

ছবিতে সেই সব গল্প।

রাজারাজড়াদের কাহিনি জানি। প্রাচীন, মধ্য এবং আধুনিক যুগের ইতিহাস জানার সূত্রও অজস্র।

কিন্তু কোনও পাড়ার ইতিহাস? তার পত্তনের গোড়ার কথা? তার প্রাচীন চায়ের দোকানের গুঞ্জন? আর তার সব কিছুর সঙ্গে যদি জড়িয়ে থাকে ভিন দেশ থেকে আসা উদ্বাস্তুদের শিকড় ছেঁড়ার যন্ত্রণার স্মৃতি?

এ সব জানি কি?

যাতে জানা যায়, তার জন্য অভিনব একটি প্রকল্প জোরদকমে চলেছে নয়াদিল্লির ‘মিনি কলকাতা’ হিসেবে খ্যাত চিত্তরঞ্জন পার্কে। ইপিডিপি (ইস্ট পাকিস্তান ডিসপ্লেসড পার্সন) কলোনি নামে একদা পরিচিত এই এলাকায় জায়গার জন্য ষাটের দশকের শেষ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার শুরু করেন কিছু বাঙালি আমলা। ১৯৭১-এর পরে ২৫০০টি পরিবার বাংলাদেশ থেকে এসে বসতি গড়েন এখানে।

সিআর পার্কের বাসিন্দাদের সেই ইতিহাসকেই সংরক্ষিত করে রাখার কাজ শুরু হয়েছে ‘স্বপ্ন এখন’ বলে দিল্লির একটি অসরকারি সংস্থার উদ্যোগে। সেই কাজের পোশাকি নাম ‘নেবারহুড ডায়েরিজ’। আর তার লেখকরা কিন্তু স্কুলের খুদেরা! এখনও পর্যন্ত একটি প্রদর্শনী এবং পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে। ৩৪ জন প্রবীণ বাসিন্দার (ওপার বাংলা থেকে আসা) বয়ান লিপিবদ্ধ করেছে ১৫ জন খুদে। আগামী বছরের গোড়ার দিকে বই হয়ে বেরোবে সেই বয়ান।

সেই আদি বাসিন্দাদের একজন ‘সেন দাদু’। ৭৬ বছরের অধ্যাপক কল্যাণ সেন। চোখ গোল গোল করে তাঁর ‘গল্প’ শুনে বারো বছরের তুষার বলছে, ‘‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সেনদাদুর বাড়িতে হামলা হয়। মাথা প্রায় দু’ভাগ করে দেওয়া হয়! সবটাই ওঁদের বাবার সামনে। তিনি নাকি সারাজীবন খুব ভয়ে কাটিয়েছেন।’’

আরও পড়ুন: তেলঙ্গানায় এক সঙ্গে সভা রাহুল-চন্দ্রবাবুর

যাদের হাতে বিধৃত হচ্ছে এই ইতিহাস, সেই সব খুদেদের অনেকের কাছেই বিষয় হিসেবে ইতিহাস কিন্তু প্রিয় নয়। তাতে কি! এ সব দুর্দান্ত গপ্পো তো বটে! পনেরো বছরের যশস্বিনী যেমন বলছে, ‘‘আমি চাই একজন সাংবাদিক হতে। তাই সাক্ষাৎকার নেওয়ার একটা প্রশিক্ষণ তো হয়ে যাচ্ছে। আর এই গল্প শুনতে শুনতে ইতিহাসকে যেন আরও জমজমাট লাগছে।’’

প্রকল্পের অন্যতম কর্ত্রী সাহানা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘নতুন প্রজন্ম যেন কোথাও একটু শিকড়হীন, বিচ্ছিন্ন। এই প্রয়াসের মাধ্যমে অতীতের সঙ্গে তাদের একটা যোগসূত্র গড়ে তোলা যাচ্ছে। দাদু-ঠাকুমাদের সঙ্গে একটি বুনন তৈরি হচ্ছে। আমরা পনেরো জনকে এখনও পর্যন্ত কাজে লাগাতে পেরেছি। যদি প্রত্যেক পরিবার থেকে বাচ্চাদের সামিল করা যায়, তা হলে তিন প্রজন্মের মধ্যে বোঝাপড়া বাড়বে।’’ শুধু দেশভাগের ইতিহাস নয়। সিআর পার্কের গোড়াপত্তনের ছবি, তখনকার বাড়িঘর, চায়ের আড্ডা, পুজো প্যান্ডেল, পৌষমেলার পুরনো তথ্য একত্রিত করে একটি স্থায়ী মিউজিয়াম গড়ার লক্ষ্যও রয়েছে ‘স্বপ্ন এখন’-এর।

আরও পড়ুন: এ বার টিকিট কেটে দর্শন পুরীর মন্দিরে

এমন কাজের মধ্যেও ব্যথা লুকিয়ে আছে। প্রকল্পের অন্যতম উপদেষ্টা শমীক রায়ের কথায়, ‘‘এই পর্যায়ে যে ১৫ জন শিশু গবেষক অংশ নিয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র দু’জন সিআর পার্কের। বাকিরা পার্শ্ববর্তী এলাকার। প্রথম বা দ্বিতীয় প্রজন্ম বলতে আগ্রহী হলেও তৃতীয় প্রজন্ম তা শুনতে কতটা আগ্রহী, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আশা করব, পরবর্তী পর্যায়ে স্থানীয় শিশুদের বেশি করে পাওয়া যাবে।’’

Delhi CR Park History Unique
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy