Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

চিন-পাকিস্তান নিয়ে বিরোধের ছায়া বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র, দুই মন্ত্রকে

সম্প্রতি এই দুই মন্ত্রকের মধ্যে ঘোষিত নীতির প্রশ্নে পারস্পরিক বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে বলে জানাচ্ছে রাজনৈতিক সূত্র।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৮
Share: Save:

রাইসিনা হিলস-এর এ পারে বিদেশ মন্ত্রক, ও পারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

সম্প্রতি এই দুই মন্ত্রকের মধ্যে ঘোষিত নীতির প্রশ্নে পারস্পরিক বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে বলে জানাচ্ছে রাজনৈতিক সূত্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের ঘরানা এতটাই আলাদা যে এই বিরোধ অবশ্যম্ভাবী ছিল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। পাশাপাশি এটাও বলা হচ্ছে, এটি কোনও ব্যক্তি বিশেষের সংঘাত নয়। ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় এমন অনেক কথা অনেক সময়ে বলতে হয়, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে করা শুধু অসম্ভব নয়, বিপজ্জনকও।

সদ্য সমাপ্ত অধিবেশনে অখণ্ড কাশ্মীরের হুঙ্কার দিয়ে অমিত শাহ জানিয়েছেন, যতক্ষণ না পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং আকসাই চিন দখলে আসছে, ততক্ষণ তিনি থামবেন না। ঘটনা হল, আকসাই চিনের ভূখণ্ড চিন নিয়ন্ত্রণ করে এবং একে দীর্ঘদিন আগেই বিতর্কিত এলাকা বলে মেনে নিয়েছে ভারত। কূটনৈতিক শিবিরের প্রশ্ন, অনভিজ্ঞ অমিত শাহকে বিদেশ মন্ত্রক থেকে কি বলে দেওয়া হয়নি যে, ১৯৬২ সাল থেকে বকেয়া সীমান্ত বিবাদ মেটানোর জন্য একগুচ্ছ দিশা নির্ধারক নীতিতে ২০০৫ সালেই সই করেছিল ভারত এবং চিন? ফলে হঠাৎ করে এ সব কথা বলা মানে নিজেদেরই সমস্যা ডেকে আনা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য এবং কাশ্মীর থেকে বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে লাদাখকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেজিং। জয়শঙ্করকে চিনে গিয়ে সে দেশের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-কে বোঝাতে হয়েছে যে, চিনের সার্বভৌমত্ব এবং সীমান্তে শান্তি সংক্রান্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ভঙ্গ করা ভারতের উদ্দেশ্য নয়। জয়শঙ্করের আশ্বাসে বেজিং কতটা আশ্বস্ত হয়েছে, সে প্রশ্ন আলাদা। কিন্তু বিদেশ এবং স্বরাষ্ট্রের মধ্যে সমন্বয়হীনতাই প্রকট হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কথার ফের আকসাই চিন

• বিদেশ মন্ত্রক: ঘোষিত আলোচনার পথ মেনেই চলা হবে
• স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক: আকসাই
চিন দখলে জীবন দিয়ে দেওয়া হবেপরমাণু অস্ত্র ব্যবহার
• বিদেশ মন্ত্রক: হঠকারী মন্তব্য দেশের পরমাণু-রেকর্ডকে লঘু করবে
• প্রতিরক্ষা মন্ত্রক: প্রয়োজনে আগেই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের কথা ভাবা হবে


কাশ্মীর উত্তেজনা

• বিদেশ মন্ত্রক: পাক ফাঁদ এড়িয়ে উত্তেজনা কমাতে হবে
• স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক: পাক-বিরোধিতায় আগ্রাসী হতে হবে

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে জীবন দেওয়ার কথা বলেছেন অমিত শাহ। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের যে হুমকি দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, তা-ও অমিতের আগ্রাসী লাইন মেনে। জয়শঙ্করের নেতৃত্বাধীন বিদেশ মন্ত্রকের একটি বড় অংশ মনে করে, এই ধরনের মন্তব্য শুধু হঠকারী নয়, এর ফলে পরমাণু-বিশ্বে ভারতের অবস্থানও কিছুটা লঘু হয়ে যায়। পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজি-তে ঢোকার জন্য যে চেষ্টা দিল্লি চালাচ্ছে, তাকেও দুর্বল করে দিতে পারে এমন সরকারি মন্তব্য।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে সাউথ ব্লক। সামনেই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক। সেখানে কাশ্মীর তুলে ধরে ইমরান খানের সরকার কোনও বাড়তি সুবিধা পাক, তা চায় না বিদেশ মন্ত্রক। বরং বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বারবার বলছেন, দ্বিপাক্ষিক পরিস্থিতি যে অত্যন্ত খারাপ, এটা দেখানো ইসলামাবাদের চাল। আজ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনার ক্রিস্টোস স্টালিয়ান্ডার্স-এর সঙ্গে বৈঠকের পরে বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর টুইট করে জানিয়েছেন, সন্ত্রাস এবং হিংসামুক্ত পরিবেশে পাকিস্তানের সঙ্গে বসে সমস্ত বকেয়া বিষয় নিয়ে আলোচনায় তৈরি ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, আন্তর্জাতিক মানচিত্রে যখন কাশ্মীর নিয়ে উত্তাপ কমিয়ে রাখা কৌশল হওয়া উচিত, তখন অনর্থক হাওয়া গরম করে লাভ নেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সেটাই করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

China Pakistan Amit Shah Subrahmanyam Jaishankar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE