সংক্রমণ এড়াতে দোকানে দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা চলছে। হায়দরাবাদে। ছবি: পিটিআই।
লকডাউনেই করোনা-মোকাবিলায় সাফল্য আসছে বলে আজ বিকেলে দাবি করল কেন্দ্র। অথচ রাত সাড়ে ৯টার আপডেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইটই জানাল, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন ভাবে সংক্রমিত হয়েছেন ২২৭ জন! যা সাম্প্রতিক কালের রেকর্ড। চিন্তা রইল নতুন করে ১১টি মৃত্যুর ঘটনা নিয়েও।
তেলঙ্গানা থেকে আজ ৬টি মৃত্যুর খবর জানিয়েছে কেসিআর-এর সরকার। যদিও রোগীরা ঠিক কবে মারা গিয়েছেন, জানানো হয়নি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক মৃতের মোট সংখ্যা ৩২ বলে জানিয়েছিল। সেই হিসেবে রবিবার অবধি মৃতের সংখ্যা ২৭ ছিল। অর্থাৎ ৫টি নতুন মৃত্যুর খবর যোগ হয়েছিল। কিন্তু সেখানে তেলঙ্গানায় মৃতের সংখ্যা এখনও পুরনো হিসেব, অর্থাৎ ১ বলেই দেখানো হয়েছে। তেলঙ্গনা সরকারের দাবি অনুযায়ী আরও ৬টি মৃত্যু যোগ করলে নতুন মৃত্যুর সংখ্যা ১১ এবং মোট মৃত্যুর সংখ্যা অন্তত ৩৮।
গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে সাংবাদিক বৈঠকে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়, দেশে সংক্রমণ এখনও দ্বিতীয় অর্থাৎ স্থানীয় পর্যায়েই আটকে। একইসঙ্গে ২১ দিনের লকডাউন আরও বাড়ানোর খবরও নেহাত গুজব বলে দাবি করল কেন্দ্র। আজ ছিল লকডাউনের ষষ্ঠ দিন। এই ক’দিনের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে মন্ত্রকের দাবি, সংক্রমণের হার কিছুটা হলেও কমছে। আজ বিকেলের সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল জানান, ভারতে সংক্রমণ একশো থেকে হাজারে পৌঁছেছে ১২ দিনে। যেখানে অনেক উন্নত দেশেই এই সময়সীমায় রোগীর সংখ্যা একশো থেকে পাঁচ এমনকি সাত হাজারেও পৌঁছে গিয়েছে। তাই ভারতের পরিস্থিতি ইতিবাচক বলেই দাবি কেন্দ্রের। যদিও পরিসংখ্যান যথেষ্ট আশঙ্কার বলে মত চিকিৎসকদের একাংশের।
সরকারের সাফল্যের দাবিকে সমর্থন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন সদস্য শমিকা রবি। তাঁর কথায়, ‘‘সংক্রমণের হার ২৩ মার্চের পর থেকেই কমতে শুরু করেছে। ১২ মার্চ থেকে কিছু দেশ থেকে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা জারি, স্কুল-কলেজ বন্ধ করা এবং পরে লকডাউনের ঘোষণা, আন্তঃরাজ্য সীমানা সিল করার কারণেই এই সাফল্য এসেছে।’’ তিনি আরও জানান, আক্রান্ত উন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারতে প্রতি ১০ লক্ষ করোনা-রোগীর ক্ষেত্রে মৃত্যুর হারও অনেক কম। ইটালি ও স্পেনের মতো দেশে যেখানে প্রতি দশ লক্ষে যথাক্রমে ১৬৫.৮৬ ও ১২১.৭৮ জন মারা গিয়েছেন, সেখানে ভারতে ওই সংখ্যাটি হল ০.০২। মন্ত্রকের দাবি, ভারতে আক্রান্তদের মধ্যে ১ থেকে ২ শতাংশ মারা গিয়েছেন। যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই ক্রনিক রোগে ভুগছিলেন। এ দেশের ৮০ শতাংশ রোগী সাধারণ ওষুধেই সুস্থ হচ্ছেন। স্রেফ ৫ থেকে ৭ শতাংশ আক্রান্তকে আইসিইউ বা ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে বলেও দাবি করেছে মন্ত্রক।
কিন্তু সরকার ইতিবাচক ছবি দেখালেও, যে ভাবে দেশের বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকা থেকেও সংক্রমণের খবর আসছে তাতে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে বলেই দাবি বিশেষজ্ঞদের একাংশের। এমনকি কাল রাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, দেশের কিছু অংশে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণের পাশাপাশি স্বল্পমাত্রার গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। নির্দেশিকায় ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ শব্দ ব্যবহার নিয়ে আজ প্রশ্ন করা হলে অস্বস্তিতে পড়েন স্বাস্থ্য-কর্তারা। লব আগরওয়াল বলেন, ‘‘গোষ্ঠী সংক্রমণের প্রচলিত যে ধারণা রয়েছে, তা বোঝাতে ওই ‘কমিউনিটি’ শব্দটির ব্যবহার হয়নি। খুব সীমিত ক্ষেত্রের জন্য ওই শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আমি আশ্বস্ত করছি, গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হলে তা নিশ্চিত জানানো হবে। কারণ সে ক্ষেত্রে দেশবাসীকে নতুন করে সতর্ক করতে হবে।’’
মন্ত্রকের হিসেব, দেশে আক্রান্তের সংখ্যা এখন ১২৫১। যদিও রাজ্যগুলির দেওয়া তথ্য ধরলে আক্রান্তের সংখ্যা ১২৮৪ বলে জানাচ্ছে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। আজ দুপুরেই মৃত্যু হয়েছে পুণের পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তির। এ নিয়ে মহারাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ৯। মহারাষ্ট্র স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব, আজ পাওয়া ১২ জনের সংক্রমণ ধরে রাজ্যে মোট আক্রান্ত ২২০।
মধ্যপ্রদেশে ইনদওরের বছর চল্লিশের এক ব্যক্তি মারা গিয়েছেন। তিনিও ডায়াবিটিসে ভুগছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, নতুন আটটি ধরে সোমবার পর্যন্ত মধ্যপ্রদেশে করোনায় আক্রান্ত মোট ৪৭।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy