Advertisement
E-Paper

কান ধরে ওঠবোস, লাঠিপেটা করে ‘লকডাউন’ করল পুলিশ, বাহবা আমজনতার

কেউ কেউ পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন তুলেছেন। তবে তা সংখ্যায় খুবই কম।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০২০ ১৮:২৮
কলকাতার রাস্তায় লকডাউন করতে সক্রিয় পুলিশ। ছবি: পিটিআই

কলকাতার রাস্তায় লকডাউন করতে সক্রিয় পুলিশ। ছবি: পিটিআই

করোনাভাইরাসের ত্রাসে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। ভারতে সংক্রমণ রুখতে জারি হয়েছে তিন সপ্তাহের লকডাউন। কিন্তু তার পরেও বহু মানুষ রাস্তায়। কেউ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার হিড়িকে, কেউ বা শুধুই দর্শক। তবে যে পুলিশকে অনেক সময়েই ‘নীরব দর্শক’ কিংবা ‘কাঠের পুতুল’ কটাক্ষ শুনতে হয় হামেশাই, তাঁরাই কিন্তু আজ সক্রিয় হয়েছেন। বাহবা কুড়িয়েছেন আমজনতার।

কোথাও লাঠিপেটা করে, কোথাও কান ধরে ওঠবোস করিয়ে, কোনও জায়গায় আবার রাস্তায় গড়াগড়ির শাস্তি দিয়ে পুলিশকর্মীরা অনেকটাই সফল করেছেন ‘লকডাউন’। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের এমন ছবি, ভিডিয়ো উঠে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এ রাজ্যের মালদহ তার মধ্যে অন্যতম। একই রকম ছবি ধরা পড়েছে পঞ্জাব-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

যে কোনও ঘটনায় সবচেয়ে আগে যাঁদের কাঠগড়ায় তোলা হয়, সেই পুলিশকেই ‘সাবাশি’ দিয়েছেন নেটিজেনরা। তাঁদের অধিকাংশেরই বক্তব্য, সাধারণ মানুষের একাংশ এখনও বুঝতে পারছেন না, এই ধরনের জমায়েত বা উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে ঘোরাফেরা করা কী ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনতে পারে। এক শ্রেণির মানুষ সচেতন না হলে তাঁদের এ ভাবে ঘরবন্দি করে পুলিশ ঠিক কাজই করেছে। কেউ কেউ পুলিশের বিরুদ্ধে অতি সক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন তুলেছেন। তবে তা সংখ্যায় খুবই কম। আবার কলকাতাতেই দেখা গিয়েছে, সংক্রমণ বাঁচাতে নির্দিষ্ট দূরত্বে গণ্ডি কেটে ক্রেতাদের দোকানের সামনে লাইনে দাঁড় করাতে।

প্রথমে জেলা সদর-সহ রাজ্যের নির্দিষ্ট কিছু শহরে লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল মঙ্গলবার থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সেই লকডাউনের আওতায় গোটা রাজ্যকেই অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও জাতির উদ্দেশে ভাষণে গোটা দেশে ৩ সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা করেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, ওষুধ, খাবার— সব কিছু পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাবে বলে প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী দু’জনই ঘোষণা করেছিলেন।

আরও পড়ুন: উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে আটকে ২৭ বাঙালি, উদ্ধার পেতে কাতর আর্তি নবান্নের কাছে

কিন্তু তার পরেও বুধবার রাজ্যের প্রায় সর্বত্র দেখা গিয়েছে ভিড়ের ছবি। পরে আর বাইরে বেরনো যাবে না বা বেরোতে পারলেও রসদ পাওয়া যাবে না— এই আতঙ্কে বাজারে-দোকানে জমায়েত করেছেন। খাস শহর কলকাতাতেও বিভিন্ন বাজারে, মুদি বা ওষুধের দোকানে দেখা গিয়েছে অনেককে লাইন দিতে। কিন্তু অনেকে বেরিয়েছেন স্রেফ ছুটির মেজাজে। কেউ বাইক ছুটিয়েছেন ফাঁকা রাস্তায়, কেউ আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডা দিয়েছেন।

কিন্তু কোনও কিছুকেই বরদাস্ত করেনি কলকাতা বা রাজ্য পুলিশ। দোকান বাজারে যেমন নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানোর বন্দোবস্ত করেছেন, তেমনই রাস্তার জনতাকে ঘরমুখী করেছেন। মালদহে যেমন দেখা গিয়েছে বিনা কারণে রাস্তায় বের হওয়া জনতাকে কান ধরে ওঠবোস করাতে। আবার কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে লাঠিপেটা করার ছবি-ভিডিয়োও ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এ দিন কলকাতার সানি পার্কের একটি আবাসনে কয়েক জন মিলে ক্রিকেট খেলছিলেন। সেই সময় পুলিশ এসে তাঁদের খেলতে বারণ করে। খেলা বন্ধ করে দিয়ে ওই আবাসনের এক নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যায়। এর পর আবাসনের ভিতরে এ ভাবে সামাজিক দূরত্ব না রাখার বিধি ভেঙে ক্রিকেট খেললে যাঁরা খেলছেন তাঁদের সঙ্গে বাবা-মাকে গ্রেফতার করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: রাস্তায় বাধা কেন, সল্টলেকে পুলিশের গায়ে লালা-লিপস্টিক লাগিয়ে দিলেন তরুণী!

একই চিত্র দেখা গিয়েছে পঞ্জাবেও। সেখানে কান ধরে ওঠবোস, লাঠিপেটা করার পাশাপাশি রাস্তায় গড়াগড়ি খাইয়ে শাস্তি দিতেও দেখা গিয়েছে পুলিশকে। টুইটারে এক ইংল্যান্ড প্রবাসী ভারতীয় গুরপ্রীত সিংহ ঢিলোঁ পঞ্জাব পুলিশের সেই ছবি পোস্ট করেছেন। যদিও তাঁর বক্তব্য, অন্য ভাবে লকডাউন কার্যকর করার কথা ভাবা উচিত রাজ্য প্রশাসনের। পশ্চিমবঙ্গ বা পঞ্জাবের মতো পুলিশের এই সক্রিয়তা নজরে এসেছে দেশের অন্যান্য অনেক রাজ্য থেকেই।

নেটাগরিকরা অবশ্য পুলিশের এই ভূমিকাকে স্বাগতই জানিয়েছেন। পুলিশের প্রশস্তিতে ছড়িয়েছে প্রচুর মিম, স্লোগান, মেসেজ। বাড়িতে বসে গা-হাত পা ব্যথা করলে পুলিশকে দিয়ে ‘ম্যাসাজ’ করিয়ে নিতে পারেন’’, কিংবা টসে জিতে আগে ‘ব্যাটিং’-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ— এই রকম রসবোধ সম্পন্ন প্রচুর মিম, মেসেজ ঘুরছে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে।

সব মিলিয়ে গোটা দেশে প্রথম দিনের লকডাউন কার্যত সফল। সোশ্যাল মিডিয়া, সংবাদ মাধ্যমে পুলিশের পুলিশের এই সক্রিয়তায় আমজনতাও বিনা কারণে ঘর থেকে আর বাইরে বেরনোর সাহস করেননি।

Coronavirus Coronavirus in India Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy