Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

কেন্দ্রের কাছে শ্রমিক ট্রেনের সূচি চাইছে রাজ্য

রাজ্যের অভিযোগ, রেলের ব্যবস্থাপনায় গোড়ায় গলদ। তাই নির্দিষ্ট সূচি জানা যাচ্ছে না।

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২০ ০৩:১১
Share: Save:

পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে ‘তরজা’ বন্ধ করে রেল কর্তৃপক্ষ ট্রেনের নির্দিষ্ট সময়সূচি জানালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে থাকা শ্রমিকদের পর্যায়ক্রমে ফেরাতে পদক্ষেপ করা যাবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। শনিবার রেল ও রাজ্যের টুইট-যুদ্ধের পরে রবিবার আপাতত এই অবস্থানই নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। আবার আজই ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা সব রাজ্যের শীর্ষ আমলাদের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্স করেন। সরকারি বিবৃতিতে জানানো হয়, ক্যাবিনেট সচিব সব রাজ্য সরকারকে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের বিষয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ করছেন।

ক্যাবিনেট সচিবের বক্তব্যের লক্ষ্য যে পশ্চিমবঙ্গই, তা অবশ্য সরকারি কর্তারাও মানছেন। কারণ আর কোনও রাজ্যের বিরুদ্ধে কেন্দ্র ট্রেনের অনুমতি না-দেওয়ার অভিযোগ তোলেনি। তবে বাংলার দাবি, কখন কোথা থেকে কী ট্রেন ছাড়বে, তার নির্দিষ্ট সূচি তৈরির প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে ওই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সওয়াল করেছে অন্যান্য রাজ্যও।

শনিবার টুইট করে রেল জানিয়েছিল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুরোধের পরে ওই দিনই দু’টি করে ট্রেন পঞ্জাব ও তামিলনাড়ু থেকে, তিনটি ট্রেন কর্নাটক থেকে এবং তেলঙ্গানা থেকে একটি ট্রেনের অনুমোদন দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। জবাবে ওই দিন রাতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব পাল্টা টুইট করে জানান, রেলের টুইট বিভ্রান্তিমূলক এবং অসত্য। রেলের দাবি করা সব ট্রেনের অনুমতি ৮ মে বা তার আগেই দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: আজ মোদীর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীরা ॥ টিকিট আজই, কাল চালু রেল

রাজ্যের অভিযোগ, রেলের ব্যবস্থাপনায় গোড়ায় গলদ। তাই নির্দিষ্ট সূচি জানা যাচ্ছে না। তেলঙ্গানা থেকে যে-ট্রেন মালদহে আসার কথা রবিবার, তার গন্তব্যে পৌঁছনোর সময় নিয়ে সে দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্ধকারে থাকতে হয়েছে কর্তাদের। দক্ষিণ-মধ্য রেলও জানিয়েছে, রবিবার রাত পর্যন্ত হায়দরাবাদ থেকে পশ্চিমবঙ্গের কোনও ট্রেন ছাড়েনি। তেলঙ্গানা পুলিশের খবর, শনিবার পর্যন্ত তাদের কাছে বঙ্গের ৪৫ হাজার শ্রমিক ফিরতে চেয়ে নাম নথিভুক্ত করেছেন। তবে যেহেতু বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফের কাজ শুরু হচ্ছে, তাই ট্রেনের বন্দোবস্ত না হওয়া পর্যন্ত সব রাজ্যের শ্রমিকদেরই সেখানে থেকে গিয়ে কাজ খুঁজতে বলা হচ্ছে। আজ ক্যাবিনেট সচিবের বৈঠকের পরেই রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রেল এখন দৈনিক ৩০০টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালাতে তৈরি। আমি সব রাজ্যের কাছে অনুরোধ করছি, তারা যেন ভিন রাজ্যে আটকে থাকা শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার অনুমতি দেয়। যাতে আমরা আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে সবাইকে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দিতে পারি।” এ ক্ষেত্রেও রেল কর্তাদের ব্যাখ্যা, রেলমন্ত্রী আসলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেই বার্তা দিতে চেয়েছেন। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, দেবেন্দ্র ফডণবীস মুখ খুলেছেন, “আমি মমতাদিদির কাছে অনুরোধ করছি, দ্রুত অনুমতি দিন, যাতে শ্রমিকরা হাঁটতে না শুরু করেন। বিরাট সংখ্যক শ্রমিক বাংলায় ফিরতে চান।” রাজ্য প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মহারাষ্ট্র থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

রাজ্যের কর্তাদের ব্যাখ্যা, শ্রমিকদের ফেরানোর বহু আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া রয়েছে। কোন জেলায় কত জন রয়েছেন, তা প্রথমে দেখা হয়। যে জেলায় সর্বাধিক শ্রমিককে পৌঁছতে হবে, সেই জেলাতেই ট্রেন পাঠানো হয়। ফলে আশপাশের জেলার শ্রমিকদের পৌঁছতে পরিবহণের আলাদা ব্যবস্থা করতে হয়। গন্তব্য স্টেশনের মেডিক্যাল-ক্যাম্পে প্রত্যেককে স্ক্রিনিং করে দরকারে কারও কারও পরীক্ষার জন্য লালারস সংগ্রহ করা হয়। উপসর্গ বুঝে কাকে হোম কোয়রান্টিন, কাকে সরকারি আইসোলেশন অথবা কোন শ্রমিককে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন রয়েছে, তা বাছাই করতে হয়। নির্দিষ্ট সূচি না জানলে এই বিপুল ব্যবস্থাপনায় অসুবিধা হচ্ছে। এ দিন ক্যাবিনেট সচিবকে রাজ্য এই অসুবিধার কথাই জানিয়েছে বলে খবর। সূত্রের দাবি, ট্রেনের নির্দিষ্ট সময়সারণি প্রকাশের পক্ষে একাধিক রাজ্যের দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন ক্যাবিনেট সচিবও। রাজ্যের এক কর্তার কথায়, “কাল যে ট্রেনগুলো ছাড়বে বলা হচ্ছে, তা পরশুও ছাড়বে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। ফেরানোর কথা বলা যতটা সহজ, করোনা-বিধি অনুযায়ী সকলের জন্য ব্যবস্থা করা ততটাই কঠিন। বিজ্ঞাপন দিয়ে রেল জানাক, কবে কোথা থেকে কোথায় ট্রেন চালানো হবে।”

কর্নাটকে আটক শ্রমিকদের নিয়ে বেঙ্গালুরু থেকে রবিবার ট্রেন আসার কথা জানিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু এ দিন পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মালদহ টাউন স্টেশন ও এনজেপি-তে ট্রেন আসেনি। পুরুলিয়ার আদ্রার ডিআরএম নবীন কুমার বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ট্রেন পুরুলিয়ায় আসার বিজ্ঞপ্তি পাইনি। তবে মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটি ট্রেন বাঁকুড়া স্টেশনে আসবে বলে বিজ্ঞপ্তি এসেছে।’’ মালদহের ডিআরএম যতীন্দ্র কুমার বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কবে ট্রেন আসার কথা জানি না।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE