রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই।
নরেন্দ্র মোদী ‘নম্বর ওয়ান’। বলছেন রাহুল গাঁধী।
রাজঘাটের সামনে কংগ্রেসের সত্যাগ্রহ মঞ্চ থেকে রাহুলের এই ‘তারিফ’ এল শ্লেষের মোড়কে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, পোশাক দেখেই তিনি প্রতিবাদীদের চিনে ফেলছেন। তাতেই ঘা দিলেন রাহুল: ‘‘নরেন্দ্র মোদীজি, পুরো দেশ আপনাকে আপনার পোশাকে চেনে। ২ কোটি টাকার স্যুট ভারতের জনতা পরেনি, আপনি পরেছেন।’’ এর পরেই ‘সার্টিফিকেট’: ‘‘আমি এখান থেকেই বলতে পারি, আপনি একটিই কাজ পারেন। আর সেই কাজ আপনার থেকে ভাল কেউ পারেন না। ভারত কী ভাবে ভাগ করবেন, কী ভাবে ঘৃণা ছড়াবেন, অনেক বছর ধরে আপনাকে আপনার সংগঠন শিখিয়েছে। আর তাতে আপনি নম্বর ওয়ান।’’
নাগরিকত্ব আইন ও এনআরসি নিয়ে দেশ উত্তাল হয়েছে কিছু দিন ধরেই। কিন্তু কংগ্রেসের তরফে বড় মাপের কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। এ মাসের ১৪ তারিখ রামলীলার সভার পরই কোরিয়া চলে যান রাহুল। তাঁর ফিরে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন সনিয়া। রাহুল ফেরার পরেই রাজঘাটে সত্যাগ্রহ করা হল। রাহুলকে ফের সভাপতি পদে ফিরিয়ে আনার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। কিন্তু ঘনঘন বিদেশ সফরে চলে যাওয়া নিয়ে প্রশ্নও উঠছে দলের অন্দরে। এ দিন এক ঘণ্টার মধ্যেই মঞ্চ ছাড়েন সনিয়া, মনমোহন সিংহ। তার পর থেকে সভার মধ্যমণি রাহুলই ছিলেন। মঞ্চে তখন প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা, আহমেদ পটেল, অশোক গহলৌত, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, দীপেন্দ্র হুডার মতো প্রবীণ-নবীনের সম্মিলন। প্রিয়ঙ্কা ভাষণ দিলেন, তাঁর নামে জিন্দাবাদও শোনা গেল। কিন্তু নিজে তিনি রইলেন ভাইয়ের ছায়াতেই। দীনেশ শর্মা নামে এক যুবক নিজেকে বলেন ‘রাহুল ভক্ত’। রাহুলের সব কর্মসূচিতে খালি পায়ে তেরঙ্গা ওড়ান। তাঁকেও মঞ্চে ডাকা হল।এই ভাবে আম আদমিকে ডেকে নেওয়া, রাহুলের নিজের হাতে তেরঙ্গা ওড়ানোর মধ্য দিয়ে ছক ভাঙার ছাপ ছিল স্পষ্ট।
আরও পড়ুন: মোদীর প্রচার ফেল, ঝাড়খণ্ডে ৮১-র মধ্যে ২৫ পেল বিজেপি
সত্যাগ্রহে যোগ দিতে ছাত্রছাত্রীদের খোলা আহ্বান জানিয়েছিলেন আগেই। আজ নবীন প্রজন্মের সুরে সুর মিলিয়ে ভজন, কবীরের সঙ্গে গিটারে উঠল ‘বেলা চাও’-এর প্রতিবাদী ঝঙ্কার। মোদীর ‘শহুরে নকশাল’-এর জবাবে স্লোগান উঠল ‘শহুরে নাৎসি’র। প্যারোডি হল: ‘তুম জো আয়ে ফির সত্তা পে, ‘ওয়াট’ লগ গ্যয়ি’। মিটিমিটি হাসলেন রাহুল, হাততালি দিলেন।
রামলীলা ময়দানের সভায় বিভাজনের রাজনীতি থেকে দেশের নজর বেহাল অর্থনীতির দিকে নিয়ে আসার সুযোগ ছিল। কিন্তু ‘আমি রাহুল সাভারকর নই’ বলে বিজেপির হাতেই পাল্টা অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি। আজ কিন্তু মোদীর অস্ত্রেই মোদীকে বিঁধবার চেষ্টা করলেন তিনি। মোদী ও তাঁর ‘বন্ধু’ অমিত শাহের উদ্দেশে বললেন, ‘‘কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়ছেন না (আপনারা), ভারতমাতার আওয়াজের বিরুদ্ধে লড়ছেন। যখন ছাত্রদের উপর লাঠি, গুলি চালান, সংবাদমাধ্যমকে ভয় পাওয়ান, বিচারব্যবস্থার উপর চাপ দেন, আর যখন যুবকদের রোজগার কেড়ে নেন, এই আওয়াজ দমানোর চেষ্টা করেন। ভারতমাতাই আপনাকে মোক্ষম জবাব দেবে।’’ বিজেপির পক্ষ থেকে আপাতত সনিয়ার শাল নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু হয়েছে। ওই শালের দাম দশ লাখের বেশি বলে টুইট করছেন বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ।
আরও পড়ুন: সত্য ফাঁস! এনআরসি হবে, মোদী তো বলেছিলেন এপ্রিলেই
এ দিন সত্যাগ্রহ মঞ্চ থেকে সব ভাষায় পড়া হয় সংবিধানের প্রস্তাবনা। বাংলায় সেটি পড়েন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কন্যা শর্মিষ্ঠা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy