Advertisement
E-Paper

রাজধর্ম: বাজপেয়ী বলেছিলেন এক যুগ আগে, মোদী আজও পেরেছেন কি?

সে দিন যে আসনে বসে মোদীকে পরামর্শটা দিয়েছিলেন বাজপেয়ী, আজ মোদী নিজেই সেই আসনে!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৮ ২০:১৭
প্রধানমন্ত্রীর পাশে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। গুজরাত দাঙ্গার পর। নিজস্ব চিত্র।

প্রধানমন্ত্রীর পাশে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। গুজরাত দাঙ্গার পর। নিজস্ব চিত্র।

আক্ষরিক অর্থেই বদলে গিয়েছে যুগটা। অটলবিহারী বাজপেয়ীর সেই বিখ্যাত ‘রাজধর্ম’ মন্তব্যের পরে ঠিক এক যুগ কেটেছে। লোকায়ত গণনা অনুযায়ী ১২ বছরে এক যুগ। ঠিক ১২ বছর আগেই কিন্তু নরেন্দ্র মোদীকে ওই পরামর্শটা দিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। নরেন্দ্র মোদী সে পরামর্শ মেনে আদৌ কাজ করেছিলেন কি না, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু সেই যুগে বসে যে পরামর্শটা দিয়েছিলেন বাজপেয়ী, এই যুগেও সে পরামর্শ মোদীর জন্য একই রকম প্রাসঙ্গিক।

সেটা ২০০২ সাল। ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে রক্তাক্ত গুজরাত। দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে অটলবিহারী বাজপেয়ী। আর গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী পদে তখন দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর উত্তরসূরি মোদীই হতে চলেছেন কিছু বছর পরে, এমনটা বাজপেয়ী সে দিন দেখতে পেয়েছিলেন কি না, জানা যায় না। কিন্তু গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন— রাজধর্ম পালন করা দরকার।

গোধরা পরবর্তী পরিস্থিতিতে গুজরাতে যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়িয়েছিল, তাতে সে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই আঙুল তুলতে শুরু করেছিল প্রায় গোটা দেশ। গুজরাতের পুলিশ-প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না বলে অভিযোগ উঠছিল। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হচ্ছিল। তেমনই এক সন্ধিক্ষণে গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে পাশে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছিলেন দেশের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। বলেছিলেন, ‘‘রাজার কাছে বা শাসকের কাছে প্রজায় প্রজায় ভেদ হয় না। জন্ম, জাতি বা সম্প্রদায়, কোনও কিছুর ভিত্তিতেই শাসক প্রজায়-প্রজায় ভেদাভেদ করতে পারেন না।’’ তিনি নিজেও রাজধর্ম পালনের চেষ্টা করছেন, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীরও উচিত তেমনটাই করা— পরামর্শ ছিল বাজপেয়ীর। পাশে বসা নরেন্দ্র মোদী সে দিন মুখে অস্বস্তির ছাপ নিয়ে, স্মিতহাস্যে বলেছিলেন, ‘‘আমিও তা-ই করছি সাহেব।’’

আরও পড়ুন: ‘গীত নয়া গাতা হুঁ’ শুনুন বাজপেয়ীর সেই কণ্ঠস্বর

অটলবিহারী বাজপেয়ীর সেই মন্তব্য আর নরেন্দ্র মোদীর মুখে সেই অস্বস্তির ছাপ ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে স্মরণীয় ছবিগুলির অন্যতম। শুধু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নয়, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও বার বার বাজপেয়ীর সেই পরামর্শ ফিরে ফিরে এসেছে নরেন্দ্র মোদীর জীবনে। কট্টরবাদ সংক্রান্ত অভিযোগ যত বার উঠেছে মোদীর বিরুদ্ধে, তত বারই গোটা দেশ বাজপেয়ীর সেই পরামর্শ মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে মোদীকে।

দেখুন ভিডিয়ো

যে দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন অটলবিহারী বাজেপয়ী, সেই বিজেপি থেকেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। দেশের ৭২তম স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লার প্রাকার থেকে দেওয়া ভাষণে নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছেন, তিনি বাজপেয়ীর পথেই চলতে চান। জম্মু-কাশ্মীরের জন্য অটলবিহারী বাজপেয়ী যে স্লোগান তুলেছিলেন, সেই ‘জমহুরিয়ত-ইনসানিয়ত-কাশ্মীরিয়ত’-এর পথই অনুসরণ করবে তাঁর সরকার— বলেছেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বাজপেয়ী জমানার কাশ্মীরের সঙ্গে মোদী জমানার কাশ্মীরকে যে কিছুতেই মেলানো যায় না, সে নিয়ে বিতর্কের অবকাশ কমই।

আরও পড়ুন: কলকাতার সেই দুই বাড়ি জুড়ে স্মৃতিমেদুর গন্ধ

যে বিষয়ে বাজপেয়ীর পথ অনুসরণ করবেন বলে মোদী জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট করে সেই বিষয়ে মোদীকে কোনও পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন বাজপেয়ীর হয়নি। কিন্তু বাজপেয়ী যে পরামর্শটি মোদীকে দিয়েছিলেন, সেটি কি মোদী অনুসরণ করার কোনও চেষ্টা করেছেন? প্রশ্নটা আজও রয়ে গিয়েছে।

বৃহস্পতিবারই বাজপেয়ীকে দেখতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, অটলবিহারী বাজপেয়ী অন্য রকম নেতা ছিলেন। এখন যে রকম রাজনীতি হয়, বাজপেয়ী সে রকম রাজনীতি করতেন না বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন। নরেন্দ্র মোদীর নাম না করলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইঙ্গিত যে সে দিকেই, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের সংশয় নেই।

অটলবিহারী বাজপেয়ী Atal Bihari Vajpayee Narendra Modi Gujarat Riot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy