Advertisement
E-Paper

মুসলিম শিশুকে দত্তকের ‘শাস্তি’, ১৬ বার ছুরি বাবাকে

সেই শিশু মুসলিম। পালিতা বাবা-মা হিন্দু দম্পতি। এই ‘অপরাধ’-এই শিশুর বাবাকে হুমকি দিয়ে আসছিল হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থীরা। এবার প্রাণে মারতে পরপর ১৬ বার ছুরি মেরে হত্যার চেষ্টা করা হয় হায়দরাবাগের ওই ব্যক্তিকে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ১৮:২০
গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।

কারও হাত উড়ে গিয়েছে, কারও পা। কেউ বা ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছেন। রক্ত, হাহাকার আর আর্তনাদের মধ্যেই অঝোরে কেঁদে চলেছে ছোট্ট এক শিশুকন্যা। এক দম্পতি ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় পরম আদরে কোলে তুলে নিয়েছিলেন সেই শিশুকে। ২০০৭-এর হায়দরাবাদ বিস্ফোরণের পর গোকুল চাটের সামনের ছবি।

তারপর মুসি দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। পালিতা মা-বাবার পরম আদরের শিশুই এখন অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া। কিন্তু সেই মেয়েকে প্রথম দত্তক নেওয়া থেকে শুরু আজ পর্যন্ত আতঙ্ক পিছু ছাড়েনি হায়দরাবাদের ওই দম্পতির। ঘটনাচক্রে সেই শিশু ছিল মুসলিম। আর পালিতা বাবা-মা হিন্দু দম্পতি। শুধুমাত্র এই ‘অপরাধ’-এই গোড়া থেকে হুমকি দিয়ে আসছিল হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের কট্টরপন্থীরা। কিন্তু এবার আর হুমকি নয়, প্রাণে মারতে দুষ্কৃতীরা নৃশংস হামলা চালাল ওই শিশুর বাবার উপর। পরপর ১৬ বার ছুরি মেরে হত্যার চেষ্টা করা হয় তাঁকে। তবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন পাপালাল রবিকান্ত নামে ওই ব্যক্তি। আপাতত তিনি হায়দরাবাদের ওসামানিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বিপদ কেটে গিয়েছে। কিন্তু এই হামলার পরও পাপালাল নিজের অবস্থানে অনড়, কোনও কিছুর বিনিময়েই মেয়েকে ছাড়বেন না তিনি।

২০০৭-এর ২৫ অগস্ট সন্ধ্যায় ভয়াবহ জোড়া বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে হায়দরাবাদ শহর। গোকুল চাট ও লুম্বিনি পার্কে প্রায় একই সময়ে দু’টি বোমা বিস্ফোরণে হয় নিজামের শহরে। মৃত্যু হয় কমপক্ষে ৪২ জনের। সেই সময়ই গোকুল চাটের ওই এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন পাপালাল ও তাঁর স্ত্রী জয়শ্রী। গোকুল চাটের কাছাকাছি বছর দু’য়েকের একটি শিশুকন্যাকে কাঁদতে দেখে কোলে তুলে নেন জয়শ্রীদেবী। বেশ কিছুদিন পরও কেউ দাবিদার না থাকায় ওই মেয়েটিকেই দত্তক নেন ওই দম্পতি। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে ওই শিশুটি ছিল মুসলিম পরিবারের। তাই হিন্দু ও মুসলিম উভয় সমাজ থেকেই তখন থেকেই প্রশ্নে তোলা হয়, কেন হিন্দুর ঘরে মুসলিম শিশুকন্যা লালন-পালন হবে।

আরও পড়ুন: ধরুন ওঁকে! শিক্ষিকার সঙ্গে তর্কাতর্কির পর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

পাপালাল জানিয়েছেন, বহুবার বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকজন হুমকি দিয়েছেন। বাড়িতেও হামলা হয়েছে। পুলিশে জানিয়েও মেলেনি নিরাপত্তা। কিন্তু কোনও অবস্থাতেই পিছিয়ে আসেননি পাপালাল। আদর করে নাম রাখেন সোনিয়া। বর্তমানে হায়দরাবাদের নামী একটি বেসরকারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে সোনিয়া। স্বপ্ন দেখে, বড় হয়ে পুলিশ অফিসার হয়ে সাম্য আর শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেবে সে।

কিন্তু সহ্য হয়নি কট্টরপন্থীদের। গত ১ জুন পাপালালের উপর নৃশংস হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। পর পর ১৬ বার ছুরি ঢুকিয়ে দেওয়া হয় শরীরের বিভিন্ন জায়গায়। যদিও মৃত্যুকে জয় করে ফিরে এসেছেন পাপালাল।

এলাকার একটি হিন্দু মন্দিরে মূর্তি বানানোর জন্য অর্থ দান করেছেন পাপালাল। তার উপরও তাঁর বক্তব্য, সোনিয়া পরিবারে খুশির জোয়ার নিয়ে এসেছে। আমরা হিন্দু-মুসলিম মানি না। আমরা মানবতার ধর্মে বিশ্বাস করি। যত কিছুই হোক আমার বড় মেয়ে সোনিয়াকে ছাড়তে পারব না। ও যদি মুসলিম ধর্ম পালন করতে চায়, তাতেও আমাদের কোনও আপত্তি নেই।’’

সোনিয়ার পালক মা জয়শ্রীদেবী জানান, ‘‘শুধু আমরা নই, ধর্মের কারণে ওই নিষ্পাপ শিশুকেও মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। আমরা সকলেই মানুষ। একই রক্ত বইছে সকলের শরীরে। আমাদের যদি কোনও সমস্যা না থাকে, তাহলে সমাজ প্রশ্ন তোলার কে?’’

আরও পড়ুন: শেষ উড়ান ১০ বছর আগে, ছাড়পত্র ছিল না দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের

2007 Hyderabad bombings Osmania General Hospital Hyderabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy