Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে-বাইরে প্রবল চাপের মুখে আপাতত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে সই করল না ভারত

বিদেশ মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিব বিজয় ঠাকুর সিংহের দাবি, এই মঞ্চে যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে ভারত যে সব বিষয় তুলে ধরেছিল, তার সমাধান এখনও অধরা।

ছবি: রয়টার্স।

ছবি: রয়টার্স।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৪
Share: Save:

কৃষক, বিরোধীরা তো বেঁকে বসেছিলেনই। বিরোধিতার পারদ চড়া ছিল ‘ঘরের অন্দরেও’। শেষ পর্যন্ত এই প্রবল চাপের মুখে মোট ১৬ দেশের প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (আরসিইপি) সই না-করে আপাতত সরে এল ভারত।

দীর্ঘদিন ধরে আলাপ-আলোচনা, এমনকি তাইল্যান্ডের চলতি সফরে বিস্তর দর কষাকষির পরেও একেবারে শেষ মুহূর্তে এ ভাবে পিছিয়ে আসার কারণ বোঝাতে গিয়ে মহাত্মা গাঁধীকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘তোমার দেখা সব থেকে দরিদ্র, দুর্বল মানুষটির মুখ মনে করো। নিজেকে জিজ্ঞাসা করো, যে পদক্ষেপ করতে চলেছ, তা আদৌ তাঁর কোনও কাজে লাগবে কি না।’’ জানিয়েছেন, চাষি, ছোট ব্যবসায়ী, দেশীয় শিল্প, ক্রেতা, কর্মী— এঁদের সকলের স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই আপাতত এই মুক্ত বাণিজ্যের মঞ্চে শামিল হল না দিল্লি।

বিদেশ মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিব বিজয় ঠাকুর সিংহের দাবি, এই মঞ্চে যোগ দেওয়ার শর্ত হিসেবে ভারত যে সব বিষয় তুলে ধরেছিল, তার সমাধান এখনও অধরা।

আরও পড়ুন: হাওয়ার গতি বাড়াতেই কমল দূষণ রাজধানীতে

বিরোধীদের দাবি, তাদের চাপেই পিছু হটতে হয়েছে কেন্দ্রকে। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার টুইট, ‘‘কংগ্রেস ও রাহুল গাঁধীর তীব্র বিরোধিতাই চাষি, গোয়ালা... ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ শিকেয় তোলা এই চুক্তি থেকে সরতে বাধ্য করেছে।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অবশ্য বলছেন, এ নিয়ে মোদী সরকারের উপরে বেশি চাপ ছিল ঘরের অন্দরেই। প্রথম থেকেই চড়া সুরে এর বিরোধিতা করে এসেছে সঙ্ঘের শাখা স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। তার যুগ্ম আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজন বার বার বলেছেন, একেই সস্তার চিনা পণ্যে ছেয়ে রয়েছে ভারতের বাজার। তার উপরে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে শামিল হলে, তাদের সঙ্গে দামের লড়াইয়ে কী ভাবে কল্কে পাবে দেশীয় শিল্প? একই সঙ্গে, অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ডের মতো দেশের সঙ্গে দুগ্ধজাত পণ্যের প্রতিযোগিতায় এ দেশের গোয়ালারা কী ভাবে পেরে উঠবেন, তা নিয়েও সরব হয়েছিল জাগরণ মঞ্চ।

অবাধ বাণিজ্যের দরজা খোলার প্রতিবাদে এ দিনও সারা দেশে বিক্ষোভ দেখায় সর্বভারতীয় কৃষি সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি। তার নেতা হান্নান মোল্লার অভিযোগ, বর্তমান পরিকাঠামো আর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দেশের চাষিদের বিদেশি পণ্যের সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে ওঠা শক্ত। বিরোধী নেতারাও বলছিলেন, চুক্তি হলে সস্তার বিদেশি পণ্যে ছেয়ে যাবে দেশ। খাবি খাবেন চাষি এবং ছোট ব্যবসায়ীরা। আরও তলিয়ে যাবে শিল্প তথা অর্থনীতি।

এই পরিস্থিতিতে এই চুক্তিতে শামিল না-হওয়ার কথা জানাল কেন্দ্র। যার কৃতিত্ব মোদীকে দিতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়েছেন মোদী সরকারের মন্ত্রীরা। টুইটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দাবি, ভারতের স্বার্থ রক্ষিত না-হলে, চুক্তিতে শামিল না-হওয়ার অবস্থানে অনড় থাকলেন প্রধানমন্ত্রী। ‘সাহসী সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার জন্য মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে জাগরণ মঞ্চও।

কিন্তু অনেকে বলছেন, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার বিধানসভা ভোটে গ্রামের ক্ষোভের আঁচ টের পেয়েছে বিজেপি। তাই নতুন করে চাষিদের চটাতে চায়নি তারা। তার উপরে অর্থনীতির যা দশা, তাতে সঙ্ঘ ও বিরোধীদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করাও সম্ভব হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India RCEP Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE