শ্রমিকদের ওপর চলছে লাটিচার্জ।—ছবি এপি।
বহুতলের নির্মাণকাজ করেন দু’জনই। সেই সময়েই পটনার বিজয় যাদবের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় মালদহের সুফিয়ান মোমিনের। সোমবার সন্ধ্যায় মোমিন প্রথম ফোনটা পান বিজয়ের কাজ থেকেই। পরে মুম্বইয়ের বান্দ্রা পূর্ব এলাকায় থাকা মালদহের অন্য শ্রমিকরাও এমন ফোন পান।
কী বার্তা ছিল তাতে? শ্রমিকরা জানান, বার্তা দেওয়া হয়, মঙ্গলবার বিকেলে বান্দ্রা স্টেশনের কাছে বাসস্ট্যান্ডে ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকরা সমাবেশ করবেন। তার দাবি একটাই— ‘হয় খাবারের ব্যবস্থা করা হোক, না হয় বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা।’ সেই মতো বিহার, উত্তরপ্রদেশের শ্রমিকদের সঙ্গে মালদহের একাধিক শ্রমিক জড়ো হয়েছিলেন সেই বাসস্ট্যান্ডে। জেলার শ্রমিকদের অভিযোগ, খাবার বা বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা হওয়া তো দূরের কথা, পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাঁদের হটিয়ে দেয়। কয়েক জন শ্রমিক পুলিশের লাঠির ঘায়ে জখম হন। তাঁরা জানান, হাসপাতালে গেলে পুলিশ ধরতে পারে, সেই ভয়ে লাঠির ঘায়ের যন্ত্রণা নিয়ে বাড়িতেই কাতরেছেন অনেকে। জখমদের মধ্যে মালদহের সুজাপুর, শেরশাহি, অচিনতলা, উত্তর লক্ষ্মীপুর এলাকার অনেকেই রয়েছেন। কিন্তু তাঁরা নাম জানাতে ইচ্ছুক নন। তাঁদের দাবি, নাম জানালে পুলিশের ঝামেলা হতে পারে। বাড়ির লোক জানলেও চিন্তায় পড়বেন। লকডাউনের সময়সীমা ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এমনিতেই টানা তিন সপ্তাহ লকডাউন থাকায় ওই শ্রমিকদের অনেকে এখন কপর্দকশূন্য। খাবারের সংস্থান না হলে কি হেঁটেই মুম্বই থেকে জেলায় রওনা দেবেন তাঁরা?
বান্দ্রা পূর্ব এলাকায় দুই ছেলেকে নিয়ে ফেঁসে থাকা কালিয়াচকের রান্নুচকের হারুনবিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা আব্দুস সালাম বলেন, ‘‘মুম্বই থেকে মালদহ প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার। এত রাস্তা কি হেঁটে ফেরা যায়? তিন সপ্তাহ ধরে লকডাউন চলায় আমাদের পরিস্থিতি ভয়াবহ। দু’বেলা খাবারও জুটছে না। হাতে টাকা নেই। বাড়িতেও পরিজনেরা কার্যত অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে।’’ মালদহের বাবলার বাসিন্দা ৩৫ বছরের সুফিয়ান মোমিন বলেন, ‘‘মুম্বই থেকে হেঁটে মালদহের বাড়িতে ফেরা সম্ভব নয়, তা জানি। কিন্তু কয়েক দিন ধরে খাবার না থাকায় আমাদের যা পরিস্থিতি, তাতে এখানে থাকলেও না খেয়ে মরতে হবে। হাঁটতে হাঁটতে যদি রাস্তায় মৃত্যু হয়, তবু ভাল।’’ বান্দ্রার বরহামনগরে থাকা আর এক শ্রমিক সফফর খান বলেন, ‘‘কোনও শ্রমিকই সরকারি সাহায্য পাননি। কিছু বেসরকারি সংস্থা বা কয়েক জন ব্যক্তিগত উদ্যোগে এক-দু’দিন এসে খাবার দিয়ে যাচ্ছেন। তার পর আর কারও দেখা মিলছে না।’’
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের ১৭০টি ‘হটস্পটে’-র মধ্যে এ রাজ্যের ৪ জেলা
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy