Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Jabba Top

বালাকোট থেকে অন্তত ৩৫টি দেহ সরিয়েছিল পাক সেনা, দাবি ইতালীয় সাংবাদিকের

প্রত্যক্ষদর্শীরা মারিনোকে জানিয়েছেন, ‘‘বোমাবর্ষণের পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু তত ক্ষণে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। পুলিশকেও ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যাঁরা অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এসেছিলেন, সেই স্বাস্থ্যকর্মীদের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছিল পাক সেনাবাহিনী।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৯ ১৯:১২
Share: Save:

বালাকোটে জইশ ঘাঁটি লক্ষ্য করে ভারতীয় যুদ্ধবিমান মিরাজ ২০০০-এর বোমাবর্ষণের কিছু ক্ষণ পরই ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৩৫টি মৃতদেহ সরিয়ে ফেলেছিল পাক সেনা। মৃতদের মধ্যে ছিল জইশ জঙ্গি, প্রাক্তন পাক সেনাকর্তা এবং প্রশিক্ষণ নিতে আসা আত্মঘাতী ‘ফিদায়েঁ’ সদস্যরাও। পাকিস্তানের স্থানীয় প্রশাসনের কর্মীদের কাছ থেকে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে এই খবর জোগাড় করেছেন ইতালীয় সাংবাদিক ফ্রান্সেসা মারিনো, তা প্রকাশিত হয়েছে ফার্স্ট পোস্ট-এ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষদর্শীরা মারিনোকে জানিয়েছেন, ‘‘বোমাবর্ষণের পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু তত ক্ষণে পুরো এলাকা ঘিরে ফেলেছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। পুলিশকেও ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। যাঁরা অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এসেছিলেন, সেই স্বাস্থ্যকর্মীদের মোবাইল ফোনও কেড়ে নিয়েছিল পাক সেনাবাহিনী।’’

মারিনোর দাবি, ভারতীয় বোমার আঘাতে নিহত হয়েছে পাক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই)-এর এক প্রাক্তন অফিসার, যাকে কর্নেল সেলিম বলেই চিনতেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গুরুতর আহত হয়েছে আর এক প্রাক্তন সেনাকর্তা কর্নেল জারার জাকরি। ভারতীয় বোমায় নিহত হয়েছে পেশোয়ার থেকে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিতে যাওয়া জইশ জঙ্গি মুফতি মইন। মারা গিয়েছে ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আই-ই-ডি)ফেব্রিকেশনে অন্যতম সেরা জইশ বিশেষজ্ঞ উসমান গনি-ও।

যদিও বালাকোটের জাব্বা টপের ঠিক নীচেই একটি কাঠ ও মাটি দিয়ে বানানো কাঁচা বাড়ি ভারতীয় বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়াতেই সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জইশ শিবির, এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা। কারণ, প্রশিক্ষণ দিতে এই বাড়িতেই রাখা হয়েছিল জইশের ফিদায়েঁ বাহিনীর ১২ জন সদস্যকে। বোমার আঘাতে নিকেশ হয়ে গিয়েছে তারা প্রত্যেকেই, এমনটাই দাবি মারিনোর।

আরও পড়ুন: হালকা খাবার, ভাল ঘুমের পর আজ হাসপাতালে চলছে অভিনন্দনের নানা পরীক্ষা

ভারতীয় বোমার আঘাতে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জইশ শিবির, তা নিয়ে গত মঙ্গলবার থেকেই চলছে চাপানউতোর। ভারতীয় সেনাবাহিনীর দাবি, তাঁরা যা করতে চেয়েছিলেন, তা করতে পেরেছেন। জইশ শিবিরে কতটা ক্ষতি হয়েছে সেই তথ্যপ্রমাণ তাঁদের হাতে আছে। সময় হলেই তা সামনে আনা হবে বলে জানিয়েছিলেন ভারতীয় সেনাকর্তারা। উল্টো দিকে পাকিস্তানের দাবি ছিল, ভারতীয় বোমায় দু-একটি গাছ ও ফসল ছাড়া আর কোনও কিছুই সে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

বোমাবর্ষণের পর বালাকোটের জাব্বা টপের কাছে পাক সেনার টহল। ছবি: এএফপি।

নিজেদের দাবি প্রমাণ করতে ঘটনার পরের দিনই বালাকোটের কাছে কয়েকটি গ্রামে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থার প্রতিনিধিদেরও নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। সেই সাংবাদিকদের স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছিলেন পাক সরকারের কথাই। বলেছিলেন সামান্য আঘাত এবং কিছু গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির কথাই। কেউ বলেছিলেন, জাব্বা টপে কোনও জইশ জঙ্গি থাকতেন না, কেউ কেউ আবার একটি শিবির থাকার কথা জানিয়েছিলেন সাংবাদিকদের। যদিও ভারতের বোমাবর্ষণের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সাংবাদিকদের। কোনও কোনও সাংবাদিক আবার জানিয়েছিলেন, জাব্বা টপের কাছে তাঁদের যেতে দেয়নি পাক সরকার। আর এই জাব্বা টপের কাছেই বোমাবর্ষণ করেছিল ভারতের মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান।

মারিনের দাবি, অত্যাধুনিক সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার দিয়ে তোলা ছবির মাধ্যমেই ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন,জাব্বা টপের ঠিক নীচে পাহাড়ের গায়ে চারটি জইশ কাঠামো ধ্বংস করেছে ভারতীয় যুদ্ধবিমান। কিন্তু সেই ছবি এখনও সামনে আনেনি ভারত।

জাব্বা টপের কাছের মাদ্রাসা। ছবি: রয়টার্স।

১ মার্চ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস (র)-এর একটি গোপন বৈঠকে পাঁচটি মৃত্যু নিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আরও অন্তত ২০টি মৃত্যু হতে পারে বলে অনুমান করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা, এমনটাই জানাচ্ছেন ওই ইতালীয় সাংবাদিক। জাব্বা টপের ওপরে একটি মাদ্রাসাই ছিল ভারতীয় বিমান বাহিনীর লক্ষ্য। সেই তথ্য ভারতীয় বিমান বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ‘র’-এর গোয়েন্দারাই।

আরও পড়ুন: জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংসের প্রমাণ আছে, সময়মতো প্রকাশ্যে আনা হবে, জানাল ভারতীয় সেনা

মারিনোর দাবি, ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল, পুলওয়ামা হামলার পরপরই নিয়ন্ত্রণরেখার আশ পাশে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন শিবির থেকে সরে গিয়ে পাকিস্তানের ভিতরে বালাকোটের জাব্বা টপের পাশের মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়েছিল জইশ জঙ্গিরা। ভারতের প্রত্যাঘাতের ভয়েই ছিল এই শিবির বদল। কিন্তু ভারত যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ঢুকে বোমাবর্ষণ করতে পারে, সেই ধারণা ছিল না জইশ জঙ্গিদের। সেই কারণেই এই বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হতে হল তাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE