মঙ্গলবার ভোর রাতে কি পাকিস্তানের আকাশসীমার ভিতরে ঢুকেই জঙ্গি ঘাঁটির উপর বোমাবর্ষণ করল ভারতীয় বিমানবাহিনীর ১২টি ‘মিরাজ ২০০০’ যুদ্ধবিমান? ঢুকে পড়ল নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে আরও ৮০ কিলোমিটার ভিতরে। সেই এলাকায়, যা আদতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের আকাশসীমা নয়? আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে তা আদতে পাকিস্তানেরই আকাশসীমা?
বিমানহানার খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায় ভারতের ‘হাওয়াই হামলা’র প্রকৃত স্থান নিয়ে। কারণ যে বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির ছিল, তা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত নয়। এ ব্যাপারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বা বিদেশ মন্ত্রক কোনও বিবৃতি না দেওয়ায় সেই জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে রাজনীতিকদের মধ্যেও। জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা টুইট করে বলেন, যে এলাকায় বিমানহানা চালানোর কথা বলা হয়েছে, তা আদতে পাকিস্তানের।
So it is Balakote in KPK. That’s a strike deep inside Pakistan & is hugely embarrassing for them. Regardless of what the other side may claim was or wasn’t hit the planes crossed over, dropped their payload & flew back completely unscathed.
— Omar Abdullah (@OmarAbdullah) February 26, 2019
বিষয়টি নিয়ে যে তিনিও ধোঁয়াশায় রয়েছেন, কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির টুইটেও তা স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি লেখেন, ‘‘বালাকোট তো নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে অনেকটা দূরের এলাকা। ভারতীয় বায়ুসেনা যদি সেখানে হানা দিতে পারে তা হলে তো সেটা বড় সাফল্যই বলতে হবে।’’
Balakot which is quite far out into the LOC is a deep strike and purportedly where Hafeez Saeed gives a lot of his addresses. If IAF penetrated that deep without casualties it's a highly successful mission.
— Abhishek Singhvi (@DrAMSinghvi) February 26, 2019
Intel Sources: Picture of JeM facility destroyed by Indian Ar Force strikes in Balakot, Pakistan pic.twitter.com/th1JWbVrHw
— ANI (@ANI) February 26, 2019
দিল্লিতে এ দিন দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে বিদেশসচিব বিজয় কেশব গোখেল অবশ্য এক বারও বলেননি, পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকে পড়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। বিদেশসচিব বলেছিলেন, ‘‘বালাকোটে জইশ-ই-মহম্মদের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ শিবিরটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
আরও পড়ুন- ২০ বছর পর বদলা! পাকিস্তানে ঢুকে কন্দহর বিমান হাইজ্যাকের মূল চক্রীকে নিকেশ করল বায়ুসেনা
আরও পড়ুন- অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে প্রত্যাঘাত বায়ুসেনার, নিকেশ ৩০০ জঙ্গি, বোমাবর্ষণে ধ্বংস একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশসচিবের বিবৃতি একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, এ দিন ভোর রাতে ভারতীয় বিমানবাহিনী ঢুকে পড়েছিল পাকিস্তানের আকাশসীমায়। কারণ, বিদেশসচিব বলেছেন বালাকোটে জইশের সবচেয়ে বড় ঘাঁটিটি নির্মূল করে দেওয়া হয়েছে। বালাকোটে জইশের সবচেয়ে বড় ঘাঁটির নাম– ‘আলফা-৩’। সেই ঘাঁটি রয়েছে যে বালাকোটে, তা আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ২৩.৬ কিলোমিটার দূরে পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী প্রদেশে (এনডব্লিউএফ)। যার আর একটি নাম খাইবার-পাখতুনখোয়া।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, জইশের সবচেয়ে বড় প্রশিক্ষণ ঘাঁটিটি কোনও দিনই ছিল না পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোট এলাকায়। ওই বালাকোটের অবস্থান জম্মু-কাশ্মীরের উরি সেক্টরের ঠিক উল্টো দিকে। যা পড়ে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে। আর সেই বালাকোটে কোনও প্রশিক্ষণ ঘাঁটি ছিল না জইশের। ছিল লঞ্চপ্যাড। পুলওয়ামা কাণ্ডের পর সব সংবাদমাধ্যমই খবর করেছিল, ওই লঞ্চপ্যাড থেকে জঙ্গিদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে শুরু করেছে জইশ।
তবে এটাও ঠিক, বালাকোট ছাড়া আর যে দু’টি এলাকা চকোটি ও মুজফ্ফরাবাদে ভারতীয় বায়ুসেনা এ দিন হানা দিয়েছে, সেগুলি রয়েছে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে।
বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, লঞ্চপ্যাড থেকে জঙ্গিদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে জেনেও পুলওয়ামা কাণ্ডের ১২ দিন পর কেন ভারতীয় বায়ুসেনা হানা দেবে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বালাকোটে? সেখানে তো লঞ্চপ্যাডেও আর কোনও জঙ্গি নেই।
সমর বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্গিল যুদ্ধের সময়েও ভারতীয় সেনা পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের আকাশসীমা পেরিয়ে ঢোকেনি পাকিস্তানে। ১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের পর পাক আকাশসীমার এতটা গভীরে আর কখনও হানা দেয়নি ভারত।
তাঁরা বলছেন, এ বারের হানায় এক হাজার কিলোগ্রামেরও বেশি ওজনের বোমা ফেলা হয়েছে। যা আগের বারের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের চেয়ে অনেকটাই বেশি। ভারতীয় বায়ুসেনার আরও কৃতিত্ব, পুলওয়ামা কাণ্ডের পর যখন আক্রমণের জন্য এক রকম প্রস্তুত হয়েই ছিল পাক প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, তখনও এমন বড় ধরনের হানা দিতে পেরেছে বিমানবাহিনী।