Advertisement
E-Paper

অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে প্রত্যাঘাত বায়ুসেনার, নিকেশ ৩০০ জঙ্গি, বোমাবর্ষণে ধ্বংস একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি

সূত্রের খবর, পূর্বপরিকল্পিত ভাবেই এই অভিযান চালানো হয়। সোমবার বালাকোট সেক্টর থেকে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের প্রায় ৮০ কিলোমিটার ভিতরে ঢোকে ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৯:০৫
ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

পুলওয়ামায় আত্মঘাতী জঙ্গিহানার জবাব দিল ভারত। মঙ্গলবার ভোররাতে নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে জইশ-ই-মহম্মদের সবচেয়ে বড় জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির ধ্বংস করল ভারতীয় বায়ুসেনা।

মঙ্গলবার ভারতের বিদেশসচিব বিজয় গোখেল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে হানা দেওয়া হয়েছে। যেখানে জইশ কয়েকশো জঙ্গির আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণ শিবির তৈরি করেছিল, বালাকোটের ঠিক সেখানেই হানা দেওয়া হয়েছে। এই হানাতে বড় সংখ্যায় জইশ জঙ্গি, তাদের প্রশিক্ষক এবং জইশের প্রথম সারির কমান্ডারদের নিকেশ করা হয়েছে।”

বিদেশসচিব সরকারি ভাবে উল্লেখ করেননি কতগুলো জঙ্গি শিবির ধ্বংস করা হয়েছে। তবে সেনা সূত্রের খবর, পাকিস্তানের গভীরে ঢুকে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারতীয় বায়ুসেনার ১২টি মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান। ভারতীয় বায়ুসেনা সূত্রে খবর, নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের আকাশপথে ঢোকার পর এফ-১৬ যুদ্ধবিমান নিয়ে এগিয়ে আসে পাকিস্তান। তবে সে সময় তাদের জানা ছিল না যে মিরাজ ২০০০-এর মতো শক্তিশালী যুদ্ধবিমান নিয়ে হাজির হয়েছে ভারত। মিরাজের প্রতিরোধ ক্ষমতার কথা মাথায় রেখেই ফিরে যায় পাক বিমানগুলি।

ভারত পাক সম্পর্কের উত্থান পতন সম্পর্কে আপনি কতটা জানেন?

আরও পড়ুন: পুলওয়ামার প্রত্যঘাত, এই যুদ্ধবিমান দিয়েই আজ পাক জঙ্গি ঘাঁটিতে অভিযান ভারতের

বালাকোট, চাকোটি এবং মুজফ্‌ফরাবাদে অভিযান চালিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জইশ-ই-মহম্মদ, হিজবুল মুজাহিদিন এবং লস্কর-ই-তৈবার যৌথ জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির। প্রতিটি এলাকাতেই জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করে বায়ুসেনার যুদ্ধবিমান। বিদেশ সচিব স্পষ্টই জানিয়েছেন, এই হানা কেবল মাত্র জঙ্গি ঘাঁটি লক্ষ্য করে। পাকিস্তানের কোনও সামরিক ঘাঁটি বা আসামরিক জায়গায় হামলা চালানো হয়নি। তিনি বলেন, “পাহাড়ের উপরে ঘন জঙ্গলের মধ্যে থাকা জঙ্গি শিবিরে হামলা চালানো হয়েছে।”

ওয়াকার হুসেন শাহ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “মঙ্গলবার ভোররাতে প্রথমে একটা বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনেন তিনি। এর কয়েক সেকেন্ড পরে আরও এক বার বিস্ফোরণ হয়। এর কয়েক সেকেন্ড পর পর ফের একই ধরনের আওয়াজ আসে। তাতে শঙ্কিত হয়ে পড়েন গ্রামবাসীরা। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানও আকাশে দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষণ পর ভারতের যুদ্ধবিমানগুলি কোথায় গেল, আর সেগুলির দেখা মেলেনি।”

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রে খবর, এই অভিযানে নিহতের সংখ্যা ২০০ থেকে ৩০০। তার মধ্যে রয়েছে জইশের শীর্ষ কয়েক জন নেতাও। বিদেশসচিব জানিয়েছেন, ওই শিবিরের দায়িত্বে ছিল মৌলানা মাসুদ আজাহারের শ্যালক মৌলানা ইউসুফ আজাহার। বিমানহানায় ওই জইশ নেতার মৃত্যু হয়েছে কি না স্পষ্ট নয়।

যদিও ভারতীয় বিদেশসচিবের দাবি স্বীকার করেনি পাকিস্তান। প্রাথমিক ভাবে পাকিস্তানের দাবি, ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ববিমানগুলি খুব তাড়াহুড়ো করে বোমা ফেলে ফিরে গিয়েছে। তবে ভারতের এই প্রত্যাঘাতে ইসলামাবাদ এতটাই হতচকিত যে, জরুরি ভিত্তিতে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেছেন পাক বিদেশমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশি। এই অভিযান প্রসঙ্গে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আসিফ গফুর বলেছেন, নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। তাঁর দাবি, পাকিস্তানের পাল্টা প্রতিরোধের মুখে পড়ে ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলি ফিরে যায়। তিনি জানিয়েছেন, মুজফ্‌ফরাবাদ থেকে ভারতীয় বিমানগুলি প্রবেশ করে। তাঁর আরও দাবি, পাকিস্তানের জবাবে বালাকোটে বোমা ফেলেই চলে যায় ভারতীয় বিমানগুলি। এই হামলায় বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেও দাবি করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন: সাফাইকর্মীদের মৃত্যুতে মোদী চুপ কেন, প্রশ্ন

আরও পড়ুন: ১৬ মাসে চাকরি হয়েছে ২ কোটি, দাবি প্রধানমন্ত্রীর

সূত্রের খবর, পরিকল্পিত ভাবেই এই অভিযান চালানো হয়। পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফ্ফরাবাদ সেক্টর দিয়ে, পাক বায়ু সেনা এবং তাদের রাডার ফাঁকি দিয়ে অধিকৃত কাশ্মীরের আকাশে ঢুকে পড়ে ১২টি মিরাজ।

ভারতীয় সেনা সূত্রের খবর, প্রায় ৪০ মিনিট ধরে পাকিস্তানের আকাশে দাপিয়ে বেড়ায় ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধবিমানগুলি। নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ভিতরে অভিযান চালায় বায়ু সেনা। প্রায় ২১ মিনিট ধরে বোমাবর্ষণ করে নির্দিষ্ট টার্গেটে।পর পর বোমা বর্ষণ করা হয় বালাকোট, মুজাফ্ফরাবাদ এবং চকোটিতে। মুজাফ্ফারাবাদে বোমাবর্ষণ চলে রাত ৩টে ৪৮ মিনিট থেকে ৩টে ৫৫ মিনিট পর্যন্ত। চকোটিতে বোমাবর্ষণ করা হয়েছে রাত ৩টে ৫৮ মিনিট থেকে ভোর ৪টে পর্যন্ত।গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় জইশের কন্ট্রোল রুম আলফা-৩। ধ্বংস করা হয় হিজবুল ও লস্করের জঙ্গি ঘাঁটিগুলিও।

কোন বালাকোটে এই বিমান হানা চালানো হয়েছে তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি বিদেশসচিব। সেনা সূত্রে খবর, পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের প্রত্যন্ত এলাকার ঘন জঙ্গলে ঘেরা পার্বত্য এলাকায় চলছিল ওই জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির। বিশেষজ্ঞদের মতে বালাকোট বলতে খাইবার পাখতুনখোয়ার বালাকোট হওয়ারই সম্ভবনা, কারণ পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছে যে বালাকোট, সেখানে জঙ্গিদের অ্যাডভান্স লঞ্চ প্য়াডগুলি পুলওয়ামা হামলার পরেই ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান সেনার মুখপত্রও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে খাইবার পাখতুনখোয়ার বালাকোটে হামলা সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

মঙ্গলবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই অভিযানের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। এর পর নিজের বাসভবনে ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি-র বৈঠক ডাকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাতে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি-সহ আরও অনেকে।

অন্য দিকে ভারতের এই অভিযানের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে পাক বিদেশমন্ত্রী বলেন, “ভারত যা করেছে, তা নিয়ন্ত্রণরেখার লঙ্ঘন।” পাকিস্তান এর যোগ্য জবাব দেবে বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি। জরুরী বৈঠক ডেকেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও। কুরেশি জানিয়েছেন, সেই বৈঠকেই নির্ধারিত হবে, পাকিস্তান কী ভাবে ভারতকে জবাব দেবে।

এই অভিযানের খবর প্রকাশ্যে আসার পর ভারতীয় বায়ুসেনাকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। তিনি লিখেছেন, “ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলটদের সেলাম জানাই।” অভিনন্দন জানান দেশের একাধিক শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “আইএএফ-এর একটা অন্য অর্থও রয়েছে, তা হল ইন্ডিয়াজ অ্যামেজিং ফাইটার্স। জয় হিন্দ।”

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরাবাংলা খবরপেতে পড়ুন আমাদেরদেশবিভাগ।)

Balakot Pulwama Attack পুলওয়ামা পুলওয়ামা হামলা Terrorism Terror Attack Indian Air Force India Pakistan Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy