ইসরোর এই পিএসএলভি রকেট সোমবার পাড়ি জমাবে মহাকাশে।
নিজের নাক কেটে কি পরের যাত্রাভঙ্গ করতে চলেছে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও)? চিন্তায় ফেলে দিয়েছে দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) বিজ্ঞানীদের?
দিনছয়েক আগে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে নিজেদের উপগ্রহ ধ্বংস করে মহাকাশে ‘বাহুবল’ দেখাতে গিয়ে ডিআরডিও কক্ষপথে ছড়িয়েছে অসংখ্য টুকরোটাকরা। ‘মিশন শক্তি’ অভিযানে। সেই টুকরোটাকরাগুলি কক্ষপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে উপগ্রহেরই গতিবেগে। তাদের বাধা পেরিয়েই আগামী কাল, সোমবার সকালে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে দেশের ‘এমিস্যাট’ ও বিদেশি ২৮টি উপগ্রহকে পিঠে চাপিয়ে নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে দিতে মহাকাশে রওনা হচ্ছে ইসরোর পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিক্যাল (পিএসএলভি-সি-৪৫)। ফলে, ‘কী হয় কী হয়’ ভেবে যারপরনাই উদ্বেগে রয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
গত ২৭ মার্চ পৃথিবীর ৩০০ কিলোমিটার উপরের একটি কক্ষপথে থাকা নিজেদেরই ‘মাইক্রোস্যাট’ উপগ্রহকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ধ্বংস করেছেন প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার (ডিআরডিও) প্রযুক্তিবিদরা। সেই সংঘর্ষে কক্ষপথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে ৩০০-রও বেশি টুকরোটাকরা। ইসরোর চিন্তা ওই টুকরোটাকরাদের নিয়েই।
মাইক্রোস্যাটের টুকরোটাকরায় ভেঙে পড়তে পারে ইসরোর পিএসএলভি?
ইসরোর বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, ৩০০ কিলোমিটার উপরে বায়ুমণ্ডলের স্তর যেখানে বেশ পাতলা, আর পৃথিবীর অভিকর্ষ বলও ততটা জোরালো নয়, সেখানে উপগ্রহের ধ্বংসাবশেষের ওই টুকরোটাকরাদের আর পৃথিবীতে ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। তারা অনন্ত কাল ধরে কক্ষপথেই ঘুরতে থাকবে উপগ্রহটির (মাইক্রোস্যাট) গতিবেগে। সেই টুকরোটাকরাগুলি এক ধরনের ‘মেঘ’ তৈরি করেছে ৩০০ কিলোমিটার উপরের কক্ষপথে। পিএসএলভি-সি-৪৫ রকেটকে সেই ‘মেঘ’ ফুঁড়েই যেতে হবে আরও উপরের কক্ষপথে। তার ফলে, সেই রকেটের সামনে যে কোনও মুহূর্তেই এসে পড়তে পারে টুকরোটাকরাগুলি। আর ছোট্ট একটা পাখির ধাক্কায় যেমন বিমানেরই ক্ষয়ক্ষতি হয় বেশি, তেমনই ওই টুকরোটাকরাগুলি যথেষ্টই ক্ষতি করতে পারে সুনির্দিষ্ট কক্ষপথের লক্ষ্যে অত্যন্ত দ্রুত গতিবেগে ছোটা রকেট পিএসএলভি-সি-৪৫-এর। টুকরোটাকরাগুলির ধাক্কায় ভেঙেও পড়তে পারে ইসরোর ওই অত্যন্ত শক্তিশালী রকেট।
আরও পড়ুন- মহাকাশেও ট্র্যাফিক জ্যাম, বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা!
আরও পড়ুন- শ্রীহরিকোটায় গ্যালারিতে বসেই এ বার দেখা যাবে ইসরোর রকেট উৎক্ষেপণ
এমন স্পেস ডেব্রি রয়েছে ১০ লক্ষ: ভি কে সারস্বত
সে কথা অস্বীকার করেননি ডিআরডিও-র প্রাক্তন প্রধান, অধুনা ‘নীতি আয়োগ’-এর অন্যতম থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ভি কে সারস্বত। বলেছেন, ‘‘ঠিকই, তত্ত্বগত ভাবে ওই সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে এটাও ঠিক, ওই ধ্বংসবাশেষ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন কক্ষপথ ও মহাকাশে রয়েছে আরও অন্তত ১০ লক্ষ টুকরোটাকরা। যাদের বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, ‘স্পেস ডেব্রি’।’’
সেগুলি জমেছে এত দিন ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একের পর এক উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য। কোনও একটি রকেট কক্ষপথে গেলেই অন্তত ১৫০ থেকে ২০০টি টুকরোটাকরা ছড়িয়ে পড়ে মহাকাশে। সেগুলি রকেটের বিভিন্ন অংশ হতে পারে। তাদের ‘হিট শিল্ড’ বা তাপরোধী ব্যবস্থার অংশবিশেষ হতে পারে। নাট-বল্টুও হতে পারে।
গত ৬০ বছরে বিপদ বেড়েছে ১০ থেকে ২০ গুণ!
ডিআরডিও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে উপগ্রহ ধ্বংসের যে পরীক্ষাটা করেছে দিনপাঁচেক আগে, তা আমেরিকা করেছিল ১৯৫৯ সালে। কিন্তু সেই সময় বিপদ এতটা ভয়াবহ ছিল না। কারণ, তখন মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহের সংখ্যা ছিল খুবই অল্প। খুব বেশি মহাকাশযানও তখন পাঠানো হয়নি মহাকাশে। এখন দু’টির সংখ্যাই অন্তত ১০ থেকে ২০ গুণ বেড়েছে। ফলে, বিপদের আশঙ্কাটাও বেড়ে গিয়েছে ১০ থেকে ২০ গুণ!
যদিও সারস্বতের দাবি, ‘‘কোনও রকেট পাঠালে যত মহাকাশে যত স্পেস ডেব্রি জমা হয়, ‘এ-স্যাট’-এর মতো অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইল বা উপগ্রহ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে কোনও উপগ্রহ ধ্বংস করা হলে টুকরোটাকরা কক্ষপথে জমে তার অর্ধেক বা তারও কম পরিমাণে। ফলে, অতটা উদ্বেগ নেই।’’
ইসরোর ভরসা এখন ‘মাল্টি-অবজেক্ট ট্র্যাকিং রেডার’
ইসরোর বিজ্ঞানীরা অবশ্য বিষয়টাকে অতটা হালকা ভাবে দেখতে রাজি নন। তাই তাঁরা অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন রকেট পিএসএলভি-সি-৪৫-এর নিখুঁত উৎক্ষেপণ ও তার কক্ষপথে পৌঁছনো নিয়ে।
এ ব্যাপারে তাঁদের ভরসা এখন মূলত অত্যাধুনিক কয়েকটি রেডারের উপর। জানিয়েছেন ইসরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সায়েন্টিফিক সেক্রেটারি বিবেক সিংহ। বিজ্ঞানী। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের হাতে বেশ কয়েকটি মাল্টি-অবজেক্ট ট্র্যাকিং রেডার রয়েছে। যা দিয়ে আমরা আগেভাগেই টের পাই উৎক্ষেপণ পর্বে কোন কোন স্পেস ডেব্রি কতটা দূরত্বে রয়েছে বা কতটা গতিবেগে কোন দিকে ছুটছে। সেই মতো রকেটের উৎক্ষেপণ আমরা কয়েক মিনিট পিছিয়ে দিই বা সেই রকেটের রুট বদলে ফেলি।’’
ছবি সৌজন্যে: ইসরো
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy