Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পিঠ পেতে কেরলের ত্রাণে নয়া উদ্দালক, জয়সলকে কুর্নিশ দেশের

পুরাণের এই গল্প থেকে নতুন উদ্দালকের উদয় দেখছে প্লাবিত কেরল। সোশ্যাল মি়ডিয়ার ভিডিয়ো দেখাচ্ছে, বন্যায় একটি উদ্ধারকারী নৌকার সামনে উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন দোহারা চেহারার এক যুবক। তাঁর পিঠকে সিঁড়ির ধাপের মতো ব্যবহার করে মহিলারা উঠছেন নৌকায়। ভাইরাল হয়ে যাওয়া এই ভিডিয়ো দেখে দেশ কুর্নিশ করছে কেপি জয়সল নামে ওই যুবককে।

কেপি জয়সল।

কেপি জয়সল।

আর্যভট্ট খান ও সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৫
Share: Save:

অতিবর্ষণের মধ্যে গুরু ধৌম্যের আদেশে শস্যক্ষেত্রে জলস্রোত বন্ধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন শিষ্য উদ্দালক। কোনও মতেই জল ঢোকা ঠেকাতে না-পেরে তিনি শুয়ে পড়েন আলের ভাঙা অংশে। বন্ধ হয় জলস্রোত। রক্ষা পায় খেতের শস্য।

পুরাণের এই গল্প থেকে নতুন উদ্দালকের উদয় দেখছে প্লাবিত কেরল। সোশ্যাল মি়ডিয়ার ভিডিয়ো দেখাচ্ছে, বন্যায় একটি উদ্ধারকারী নৌকার সামনে উপুড় হয়ে শুয়ে আছেন দোহারা চেহারার এক যুবক। তাঁর পিঠকে সিঁড়ির ধাপের মতো ব্যবহার করে মহিলারা উঠছেন নৌকায়। ভাইরাল হয়ে যাওয়া এই ভিডিয়ো দেখে দেশ কুর্নিশ করছে কেপি জয়সল নামে ওই যুবককে।

ফোনে জয়সল বললেন, ‘‘ঘটনাচক্রে আমি তখন পিঠ পেতে দিয়েছিলাম ঠিকই। তবে আমার ১৪ জন সঙ্গীর অবদান ভুললে চলবে না। ওরা সকলেই আমার সঙ্গে জীবন বিপন্ন করে বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়েছিল। আমার একার পক্ষে উদ্ধারকাজ চালানো সম্ভব ছিল না।’’

চারটে টায়ারের টিউবকে চার দিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে কাঠের পাটাতন দিয়ে বানানো হয়েছিল ভেলা। এমনই কয়েকটা ভেলা আর দড়ি নিয়ে প্রবল বৃষ্টিতে মলপ্পুরম জেলার মুদ্রামারি গ্রামের দিকে উদ্ধারকাজে যান জয়সল এবং তাঁর জনা চোদ্দো সঙ্গী। জয়সল জানতেন, কাজটা কঠিন। এতটাই যে, জীবন বিপন্নও হতে পারে।

আরও পড়ুন: শ্রমিকদের ফেরাতে আরও এগোক বাংলা, চাইছে কেরল

বছর বত্রিশের জয়সলের বাড়ি মলপ্পুরমের চাপ্পাডিতে। পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী। ক্যারাটে, তায়কোন্ডো-য় পারদর্শী জয়সল ২০০২ সাল থেকেই কোঝিকডি ট্রমা সেন্টারে উদ্ধারকাজের সঙ্গে যুক্ত। ‘‘আমাদের গ্রামে ১৫ জন যুবকের একটা দল আছে। শুক্রবার ওই ট্রমা সেন্টারের টিম লিডার আমাদের ফোন করে মুদ্রামারির কাছে ডেকে নেন,’’ বলেন জয়সল। তাঁরা ১৫ জন টায়ার-কাঠের টুকরো দিয়ে বানানো ভেলায় ভেসে পড়েন ফুঁসতে থাকা বন্যার জলে। কোনও লাইফ জ্যাকেট ছিল না। জয়সল বলেন, ‘‘প্রায় ছয় কিলোমিটার ভেলায় ভেসে মুদ্রামারি গ্রামে পৌঁছই। প্রায় ডুবে যাওয়া গ্রাম থেকে কোনও রকমে বাসিন্দাদের উদ্ধার করলাম।’’ জয়সল জানান, তাঁদের কয়েক জনকে বিছের কামড় খেতে হয়েছে। তখন ওষুধ মেলেনি। পরে ক্ষতস্থানে হলুদ লাগানো হয়।

দেখুন ভিডিয়ো

জয়সল জানান, প্রায় ২৫০ জনকে উদ্ধার করেন তাঁরা। ভেলায় চেপে নৌকার সামনে পৌঁছে দেখেন, উঠতে গেলেই দুলে উঠছে নৌকা। অনেকেই, বিশেষ করে মহিলারা নৌকায় উঠতে পারছিলেন না। নৌকাটি সরে যাচ্ছিল। ‘‘মনে হল, সিঁড়ির মতো একটা ধাপ থাকলে তাতে পা দিয়ে ওঠা যাবে, নৌকা দুলবে না। ওই দলে এক অন্তঃসত্ত্বাও ছিলেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি কী ভাবে নৌকায় উঠবেন— এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই নৌকার সামনে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম,’’ বললেন জয়সল।

ওই যুবকের পিঠে পা দিয়ে সকলেই একে একে ওঠেন নৌকায়। জয়সলের এক বন্ধু মহিলাদের উদ্দেশে বলেন, ‘জুতোটা খুলে ওঁর পিঠে পা দিন। ওটা পাথর বা সিমেন্টের সিঁড়ি নয়। উনি এক জন মানুষ।’

জয়সলের এক বন্ধু বলেন, ‘‘জয়সলই মেয়েদের জুতো খুলতে বারণ করে। ও বলল, ‘বন্যায় যাঁরা সব খুইয়েছেন, তাঁদের আর জুতো খুলতে বলা শোভা পায় না’।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE