Advertisement
০৫ মে ২০২৪

লাভাসার চিঠি, বিদ্রোহ কমিশনে

বিতর্ক সামনে আসতেই মুখ খুলতে বাধ্য হন সিইও সুনীল অরোরা। তিনি বিবৃতি দিয়ে জানান, অতীতেও কমিশনারদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব কিছুর একটি সময় থাকে। এখন বিতর্কের জন্য আদর্শ সময় নয়।

সুনীল অরোরা (বাঁ দিকে) ও অশোক লাভাসা। ফাইল চিত্র

সুনীল অরোরা (বাঁ দিকে) ও অশোক লাভাসা। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০২:৫৪
Share: Save:

মতপার্থক্য শুরু হয়েছিল ভোটপর্ব শুরুর একেবারে গোড়া থেকে। শেষ দফা ভোটের আগে তা প্রকাশ্যে এনে কার্যত বিস্ফোরণ ঘটালেন নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা। লোকসভা নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা তিন কমিশনারের মধ্যে যিনি পদমর্যাদায় দ্বিতীয়। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে চিঠি লিখে তিনি জানান, বৈঠকে তাঁর বিপরীতধর্মী মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া এবং তা নথিভুক্ত না করায় তিনি কমিটির বৈঠক থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

বিতর্ক সামনে আসতেই মুখ খুলতে বাধ্য হন সিইও সুনীল অরোরা। তিনি বিবৃতি দিয়ে জানান, অতীতেও কমিশনারদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতপার্থক্য হয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সব কিছুর একটি সময় থাকে। এখন বিতর্কের জন্য আদর্শ সময় নয়। এর কিছু ক্ষণ পরে ফের অরোরার দফতর থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, গোটা বিতর্কটি কমিশনের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে ২১ মে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। অরোরা শিবির দ্বিতীয় বিবৃতি দিয়ে বিষয়টি লঘু করার চেষ্টা করলেও ভোট চলাকালীন যে ভাবে এক জন নির্বাচন কমিশনার কার্যত বিদ্রোহ করলেন, তাতে কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে ফের বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হল বলেই মনে করছেন প্রাক্তন কমিশন কর্তারা।

নির্বাচনের দিন ঘোষণা থেকেই বিতর্কের আর্বতে কমিশন। অরোরার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পরোক্ষে মোদী সরকারের সুবিধে করে দিচ্ছে, এই অভিযোগে শুধু বিরোধীরা নন, প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার, সেনাকর্তা এবং আমলাদের একাংশও সরব হন। রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করেন প্রাক্তন আমলা-সেনাকর্তারা। মতপার্থক্য শুরু হয় কমিশনের অভ্যন্তরেও। সূত্র বলছে, লাভাসার সঙ্গে বাকিদের বিরোধ শুরু হয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কু-কথার অভিযোগ জমা পড়ার পর থেকে। সেনা নিয়ে কোনও প্রচার করা যাবে না, কমিশনের দেওয়া এই নির্দেশিকা উপেক্ষা করে একাধিক স্থানে বালাকোট-পুলওয়ামার উল্লেখ করে প্রচার চালান প্রধানমন্ত্রী।

সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে কু-কথা বলার অভিযোগও জমা পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে। দু’টি ক্ষেত্রেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থার সুপারিশ করেছিলেন লাভাসা। কিন্তু বাকি দুই নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা ও সুশীল চন্দ্র শাস্তির বিপক্ষে মত দেন। সূত্র বলছে, লাভাসা তাঁর বিরুদ্ধ মতামতকে রায়ে অন্তত নথিভুক্ত করার অনুরোধ করেন। আইনি বিষয় না হওয়া সেই অনুরোধও খারিজ করে দেওয়া হয়। সূত্রের মতে, প্রধানমন্ত্রীকে ছাড় দেওয়া নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের অর্ধেকের বেশিতে আপত্তি ছিল লাভাসার। এমনকি পশ্চিমবঙ্গে এক দিন আগে প্রচার শেষ করে দেওয়ার যে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত কমিশন নিয়েছিল, তাতেও মত ছিল না লাভাসার।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর মতামতকে অগ্রাহ্য করায় ক্ষুব্ধ লাভাসা চলতি সপ্তাহেই সুনীল অরোরাকে একটি চিঠি লেখেন। প্রধানমন্ত্রীকে অন্তত চারটি ক্ষেত্রে ও অমিত শাহের একটি নির্বাচনী ভাষণে ছাড়পত্র দেওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ, এ কথা জানিয়ে চিঠিতে তিনি বলেছেন, তিন কমিশনারের মধ্যে তাঁর মতামত সংখ্যালঘু হওয়ায় কোনও ক্ষেত্রেই তাঁর বক্তব্যকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে কমিশনের বৈঠকে তাঁর উপস্থিতি অর্থহীন। তাই যত দিন না নিয়ম মেনে সংখ্যালঘু

মতামতকে নথিভুক্ত করা হবে, তত দিন তিনি কমিটির বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও পি রাওয়ত বিষয়টিকে দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য করে বলেন, ‘‘এতে কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে।’’

লাভাসার বক্তব্য সামনে আসার পরে বিতর্কে বেড়েছে। শেষ দফা ভোটের আগে কমিশনের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে ফের সরব হয়েছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘প্রমাণিত হল, নরেন্দ্র মোদীর হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে কমিশন।’’ ঘোষিত মোদী-বিরোধী প্রাক্তন জেডিইউ নেতা শরদ যাদব বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্ট, যোজনা কমিশনের মতো নির্বাচন কমিশনকেও শেষ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন মোদী।’’ পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে মুখ খুলতে বাধ্য হন মুখ্য নির্বাচন কমিশার সুনীল অরোরা। বিবৃতি দিয়ে বলেন, ‘‘আমি মনে করি না কমিশনের সদস্যরা একে অপরের ক্লোন হবেন। সব সিদ্ধান্তে একমত হবেন। অতীতেও কমিশনে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক।’’

কিন্তু যে ভাবে সেই মতপার্থক্য প্রকাশ্যে চলে এসেছে, তা নিয়ে লাভাসাকে ঘুরিয়ে আক্রমণ করতে ছাড়েননি অরোরা। তিনি বলেছেন, ‘‘অতীতে মতপার্থক্য ঘটলেও তা জানা যেত বহু পরে। যদি কোনও নির্বাচন কমিশনার কোনও বই লিখতেন, তবেই। আমি

ব্যক্তিগত ভাবে প্রকাশ্য বিতর্ক থেকে বিরত থাকি। সব কিছুরই একটা সময় রয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া জারি থাকার সময় কখনওই এ ধরনের বিতর্ক ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE