Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জঙ্গলে বই লেনদেন মুথুভানদের গ্রন্থাগারে

কেরলের ইডুক্কি জেলার আডিমালিতে এই গ্রন্থাগার তার বৈশিষ্ট্যে কারণেই অনন্য। মুথুভান জনজাতি গোষ্ঠীর বাস এই তল্লাটে। মুথুভানদেরই এক জন, পি ভি চিন্নাতাম্বি রোজ সকালে যে গ্রন্থাগার খুলে বসেন, তার ভাণ্ডারে বই ১৬০টি।

সেই গ্রন্থাগার। নিজস্ব চিত্র।

সেই গ্রন্থাগার। নিজস্ব চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
ইডুক্কি (কেরল) শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৯
Share: Save:

বিশ্ব সংসারে কী হচ্ছে, তাঁদের জানার আগ্রহ নেই। বিশেষ উপায়ও নেই। জঙ্গলঘেরা গ্রামে বন্য জন্তু আর পাহাড়প্রমাণ প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে তাঁদের দিন গুজরান। এরই মধ্যে দরমার বেড়া আর টালির চালে ঘিরে ছোট্ট গ্রন্থাগার। গ্রামের আটপৌরে মানুষ যেখান থেকে নিয়ম করে বই নেন, পড়েন এবং ফেরত দেন।

কেরলের ইডুক্কি জেলার আডিমালিতে এই গ্রন্থাগার তার বৈশিষ্ট্যে কারণেই অনন্য। মুথুভান জনজাতি গোষ্ঠীর বাস এই তল্লাটে। মুথুভানদেরই এক জন, পি ভি চিন্নাতাম্বি রোজ সকালে যে গ্রন্থাগার খুলে বসেন, তার ভাণ্ডারে বই ১৬০টি। সবই মালয়ালম ও তামিল ভাষার ধ্রুপদী সাহিত্য। গ্রন্থাগারের সদস্যসংখ্যা ৭৩। ধান চাষ আর এলাচের বাগানে কাজ করে যাঁদের দিন কাটে, তাঁরাই হাত বদল করে সাহিত্যের স্বাদ নেন। বিশ্ব বই দিবস কবে, সেই সম্পর্কে তাঁদের অবশ্য কোনও ধারণা নেই। ঘটনাচক্রে, বই দিবসই কেরলে ছিল ভোট দিবস! জঙ্গল পথ পেরিয়ে মঙ্গলবার তাই ভোট দিতেই গিয়েছিলেন মুথুভানেরা।

জনজাতিদের প্রচলিত কাহিনি বলছে, মাদুরাইয়ের সাবেক রাজবংশের খাস প্রজাদের একটি গোষ্ঠী থেকেই মুথুভানদের ইডুক্কি আগমন। মাদুরাইয়ের রাজন্য প্রথা উঠে যাওয়ার পরে নিজেদের আরাধ্য দেবতা মীনাক্ষীর মূর্তি পিঠে করে জঙ্গল-পথ বেয়ে তামিলনাড়ুর সীমানা ঘেঁষা ইডুক্কিতে চলে এসেছিলেন তাঁরা। পিঠে করে বহন করার প্রথা থেকেই ‘মুথুভান’ কথাটার উৎপত্তি। তামিল এবং মালয়ালম ভাষার বই পড়লেও তাঁদের কথ্য ভাষা তামিলের এক ধরনের অপভ্রংশ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিচিত্র পরিস্থিতির মধ্যেও গ্রন্থাগার চালিয়ে যাওয়ার জন্য আডিমালির মুথুভানদের সাহায্য করে কয়েকটি সোসাইটি। রাজনৈতিক ভাবে সিপিএমের প্রচ্ছন্ন সহায়তাও তাঁদের সঙ্গে আছে। ইডুক্কির সাংসদ এবং এ বারেরও সিপিএম প্রার্থী জয়েস জর্জের কথায়, ‘‘পয়সা দিয়ে বই কেনার মতো সামর্থ ওঁদের নেই। কিন্তু ওঁরা পড়তে চান। এক এক বারে কিছু বই ওঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। গ্রন্থাগার মারফত সেগুলো পড়া হয়ে গেলে আবার অন্য বই আনা হয়।’’

মুথুভানদের এই বই-প্রীতির কথা শুনেছেন তিরুঅনন্তপুরমের কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর। যিনি নিজেও এ যাবৎ ১৮টি গ্রন্থের লেখক। তবে তাঁর আফশোস, নিজের লোকসভা কেন্দ্রের বাইরে হওয়ায় মুথুভানদের ওই গ্রন্থাগারের জন্য সাংসদ তহবিল থেকে সাহায্য করার সুযোগ তাঁর নেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বই হল পৃথিবীর জানলা। শত প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ওঁরা যে জানলা বন্ধ রাখেননি, সেটাই স্বস্তিদায়ক।’’ মুথুভানদের প্রয়োজনে অন্য যে কোনও রকম সাহায্যেও তিনি প্রস্তুত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE