Advertisement
১১ মে ২০২৪

‘সব হারালাম,’ দাবি অভিযোগকারিণীর

তদন্ত কমিটিতে ছিলেন বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র। তরুণীর দাবি, হলফনামায় তিনি যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ জমা দিয়েছিলেন। আশা করেছিলেন, বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০৩:৪১
Share: Save:

প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থা মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ‘তথ্যপ্রমাণ’ খুঁজে পায়নি শীর্ষ আদালতের তদন্তকারী কমিটি। তার পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানালেন ৩৫ বছর বয়সি অভিযোগকারিণী। আদালতের প্রাক্তন কর্মী ওই তরুণী কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন তুলেছেন, কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্ট কেন তাঁকে দেখানো হল না? যদিও তিনি জানেন, প্রধান বিচারপতির কাছে রিপোর্টের একটি কপি দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিটিতে ছিলেন বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র। তরুণীর দাবি, হলফনামায় তিনি যাবতীয় তথ্যপ্রমাণ জমা দিয়েছিলেন। আশা করেছিলেন, বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, কর্মস্থানে মহিলাদের উপরে যৌন হেনস্থার বিচার সংক্রান্ত নির্দেশিকা পর্যন্ত মেনে চলেনি তদন্ত কমিটি।

গত ৩০ এপ্রিল তদন্ত-প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ান তরুণী। তখনই অভিযোগ জানান, তদন্ত নিরপেক্ষ ভাবে হচ্ছে না। হলফনামায় তাঁর উল্লিখিত ব্যক্তিদের কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি বলে অভিযোগ জানান তিনি। তাঁকে সাহায্য করতে এক জন আইনজীবীকে চেয়েছিলেন। আদালত সেই অনুমতিও দেয়নি।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সাক্ষাৎকারে তরুণী দাবি করেছেন, বাধ্য হয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন। প্রধান বিচারপতি গগৈ পাল্টা দাবি করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে। সে প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে অভিযোগকারিণী বলেন, ‘‘আমি জানি, আমি কোনও চক্রান্তের অংশ নই। হলফনামায় যা যা বলেছি, সব কিছুর প্রমাণ পেশ করেছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘২০১৬ সালের পুরনো একটি মামলা টেনে আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। যখন দেখা গেল ওই মামলাগুলো ভিত্তিহীন, তখন বলা হল অনিল অম্বানীর সঙ্গে আমার যোগ রয়েছে।’’

তরুণী দাবি করেছেন, তিনি ডান কানে শুনতে পান না। বাঁ কানেও মাঝেমাঝে শুনতে অসুবিধা হয়। তাই শুনানি চলাকালীন তাঁকে সাহায্য করার জন্য কাউকে চেয়েছিলেন। কিন্তু আদালত অনুমতি দেয়নি। শুনানির সময় তাঁকে বারবার অনুরোধ করতে হত একই কথা ফের বলার জন্য। বলেন, ‘‘শুনানি শুরু হওয়ার আগে তিন-চার জন মহিলা পুলিশকর্মী তল্লাশি করতেন। চুল খুলতে বলতেন। জামাকাপড় খোলাতেন। আমার কান্না পেয়ে যেত। মনে হত আমি জঙ্গি।’’

তরুণী বলেন, ‘‘বিচারপতি বোবদে জানিয়েছিলেন, এটা কোনও ইন-হাউস কমিটি নয়, যৌন হেনস্থা প্রতিরোধ কমিটি নয়। ওঁরা শুধু আমার অভিযোগের তদন্ত করছেন।’’ অভিযোগকারিণীর কথায়, ‘‘ওঁরা বলেছিলেন, আমি যাতে কাজ ফেরত পাই, সেটা দেখা হবে। আমি বলেছিলাম, চাকরি ফেরত চাই না, বিচার চাই।’’ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে তাঁকে বারণ করা হয় বলে অভিযোগ জানিয়েছেন তরুণী। বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র তাঁকে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতেও মানা করেছিলেন বলে জানান।

তরুণী জানান, সুপ্রিম কোর্টের গেস্ট হাউসে শুনানির পর তিনি যখন স্বামীর সঙ্গে বেরোতেন, কিছু লোক মোটরবাইকে পিছু নিত। তুঘলক রোড থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ওই লোকগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান তিনি। তরুণীর দাবি, বিচারপতি বোবদে তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘আপনার বড় পরিবার। সবাই তো পুলিশে রয়েছেন। ওঁরা নিশ্চয় জানেন, কী ভাবে আপনাকে রক্ষা করা যায়।’’

আর সব শেষে কমিটি-রিপোর্টে যখন বলা হল, অভিযোগে তেমন জোরদার কোনও প্রমাণ নেই? তরুণী বলেন, ‘‘মন ভেঙে গিয়েছে। চাকরি হারিয়েছি, সব হারিয়েছি। আমার পরিবারের অনেকে কাজ হারিয়েছে। আমার ও আমার পরিবারের সঙ্গে অবিচার করা হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

supreme court Sexual Harassment Molestation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE