Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভারতকে বোঝার মতো প্রসারতাই নেই মোদীর: অমর্ত্য সেন

গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভটির প্রসঙ্গে অমর্ত্যের খেদ, সরকার যদি বিরুদ্ধে থাকে, তবে সরকারি শুধু নয়, সম্ভবত অনেক বেসরকারি বিজ্ঞাপনও পায় না সংবাদমাধ্যম।

ছবি: এপি।

ছবি: এপি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

ভারতে গণতন্ত্রের হাল নিয়ে উদ্বিগ্ন অমর্ত্য সেন। মার্কিন একটি পত্রিকাকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে খোলাখুলি জানালেন সে-কথা। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ সরাসরি নিশানা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তাঁর কথায়, ‘‘জন স্টুয়ার্ট মিলের কাছ থেকে বড় যে বিষয়টি আমরা জেনেছি তা হল, গণতন্ত্র মানে আলোচনার ভিত্তিতে চলা সরকার। ভোট যে ভাবেই গোনো, আলোচনাকে ভয়ের বস্তু করে তুললে তুমি গণতন্ত্র পাবে না।’’ সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ভারতে এখন একবগ্গা কট্টর হিন্দুত্বের দাপট। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন, ‘‘বহু ধর্ম ও বহু জাতির দেশ ভারতকে বোঝার মতো মনের প্রসারই নেই মোদীর।’’

মোদীর সব চেয়ে বড় সাফল্য?

অমর্ত্যের মতে, গোধরা মামলা থেকে নিজেকে মুক্ত করা। এর ফলে ২০০২-এর যে-ঘটনায় হাজারের বেশি মানুষ খুন হয়েছিলেন, তার পিছনে মোদীর একটা ভূমিকা ছিল— ভারতে অনেকে তা বিশ্বাসই করেন না।

গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভটির প্রসঙ্গে অমর্ত্যের খেদ, সরকার যদি বিরুদ্ধে থাকে, তবে সরকারি শুধু নয়, সম্ভবত অনেক বেসরকারি বিজ্ঞাপনও পায় না সংবাদমাধ্যম। ফলে স্বাধীন সংবাদপত্র বা সংবাদ চ্যানেল পাওয়াই দুষ্কর। স্টুয়ার্ট মিলের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘মানুষ ভয়ে আছেন। এটা আগে কখনও দেখিনি। আমার সঙ্গে ফোনেও সরকারের সমালোচনার প্রসঙ্গ উঠলে অনেকে বলছেন, ‘‘থাক, দেখা হলে বলব’খন। আমি নিশ্চিত ওরা আমাদের কথা শুনছে।’’ এটা গণতন্ত্রের পন্থা নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কী চান, সেটা বোঝারও পথ নয় এটা।’’

তবু পুরোপুরি হতাশ নন অমর্ত্য। বললেন, ‘‘সব কিছুই হারিয়ে যায়নি। এখনও সাহসী কয়েকটি সংবাদপত্র আছে, যারা ঝুঁকি নিয়ে কিছু ছাপতে ভয় পায় না। দু’-একটা টিভি চ্যানেল ও রেডিয়ো স্টেশনও আছে। প্রকাশ্য সভাও হচ্ছে কিছু। ভারতের কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রীয়। বেশ ক’টি রাজ্যে বিজেপিই একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি নয়।’’

দুঃসময়ের প্রসঙ্গে ভিড় করেছে ছোটবেলার অনেক স্মতি। চুম্বকে যা এই রকম: ছেলেবেলাতেও খুব খারাপ সময় দেখেছি। দেখেছি, কাকাদের সকলকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। ন’বছর বয়সে দেখেছি মন্বন্তর। তিন লক্ষ মানুষ যাতে মারা যান। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দেখেছি। মুসলিম জনমজুরকে কুপিয়ে খুন করেছে আমারই পাড়ার কিছু হিন্দু। আমি তখন দশ কি এগারো। বাগানে খেলছিলাম। দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটে আসছেন এক জন। চিৎকার করে বাবাকে ডাকলাম। জল খেতে দিলাম। এত রক্ত কখনও দেখিনি। আমার কোলে মাথা, স্পষ্ট বলেছিলেন, বিবি বলেছিল, হিন্দু এলাকায় কাজ কোরো না। কিন্তু বাচ্চারা না-খেয়ে আছে। কিছু তো রোজগার করতেই হবে...। বাবা ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। পুলিশকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু এলাকার পুলিশ কিছু করতে রাজি হয়নি। আবার অনেক বড় বড় সমস্যা মিটে যেতেও দেখেছি। তবে তার অর্থ এই নয় যে আমি নিশ্চিত। কোনও কিছু সম্পর্কেই আমি নিশ্চিত নই। এর অর্থ এটাও নয় যে, হতাশার পরিস্থিতিতে সব আশা ছেড়ে দিতে হবে।

আশা তাই ছাড়ছেন না অমর্ত্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Amartya Sen India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE