অপেক্ষা: নাশিক ফিরতে বিশেষ ট্রেনের জন্য স্টেশনে কৃষকরা। মুম্বইয়ে সোমবার। ছবি: পিটিআই।
গত ছ’দিন ধরে মহারাষ্ট্রে কৃষকদের ‘লং মার্চ’ চললেও নরেন্দ্র মোদী সরকার নীরব। কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ এ নিয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন। ভাবখানা এমন যেন এটি নিছকই মহারাষ্ট্রের কৃষকদের সমস্যা। কিন্তু মহারাষ্ট্রে কৃষকদের দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরে এ বার অন্যান্য রাজ্যেও একই দাবি উঠবে বলে আশঙ্কা করছে মোদী সরকার তথা বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
কৃষি বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, আশঙ্কা অমূলক নয়। কারণ, গোটা দেশেই কৃষিতে সঙ্কট গভীরে। এমনিতেই মোদী সরকারের প্রথম দু’বছরে কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ছিল হয় নেতিবাচক, নয় ১%-এরও কম। গত অর্থ বছরে কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ৪.৯% ছুঁলেও চলতি অর্থ বছরে ফের তা ২.১%-এ নেমে আসার আশঙ্কা। মোদী জমানার প্রথম দু’বছর ছিল খরার ধাক্কা। তার পরে ফসল উৎপাদন ঘুরে দাঁড়ালেও, বাজারে দাম পড়ে গিয়েছে। মোদী প্রধানমন্ত্রী কৃষি সেচ যোজনার দামামা বাজাচ্ছেন। কিন্তু আর্থিক সমীক্ষা বলছে, কৃষিতে অনিশ্চয়তার কারণ হল, অর্ধেকেরও বেশি চাষের জমি সেচের জল পায় না, বৃষ্টির উপরে নির্ভরশীল। মহারাষ্ট্রে এই সঙ্কট আরও গভীরে। সেচের জল পৌঁছয় মাত্র ১৯% জমিতে।
মোদী ২০২২-এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন। কৃষি-অর্থনীতিবিদ অশোক গুলাটির মন্তব্য, ‘‘এ সব স্বপ্ন। ২০২২-এর মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে হলে বছরে ১৩% হারে কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধি প্রয়োজন। ২০৩০-এও যদি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা যায়, তবে সেটাই হবে বিরাট সাফল্য। আসলে এই আয় দ্বিগুণ করে দেওয়ার স্বপ্নই এখন গলার ফাঁস হয়ে গিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: এমন মিছিল কবে হবে, প্রশ্ন রাজ্যে রাজ্যে
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে কৃষকদের মন জয় করতে গ্রাম-গরিব-কৃষকদের জন্য বিপুল অর্থ ঢেলেছেন অরুণ জেটলি। ২০১৯-এ ভোট মহারাষ্ট্রেও। সেখানেও বিজেপি সরকারকে কৃষকদের সব দাবি ছ’মাসে পূরণের প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানে আগেই কৃষিঋণ মকুবের ঘোষণা করতে হয়েছে। অন্যান্য বিজেপি-শাসিত রাজ্যেও একই দাবি উঠবে। ১৫ মার্চ লখনউয়ে হবে কৃষক প্রতিরোধ সমাবেশ। কৃষকসভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লার হুঁশিয়ারি, ‘‘বিজেপি সরকারগুলি কৃষক-বিরোধী, আমরা তা প্রমাণ করব।’’ আজ কৃষকদের অন্য দু’টি সংগঠনের হাজার তিনেক সমর্থক দিল্লিতে পার্লামেন্ট স্ট্রিটে কৃষিঋণ মকুবের দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, সাময়িক ঘোষণায় স্থায়ী সমাধান হবে না। কৃষকরা ঋণ শোধ করতে পারছেন না বলেই মকুবের দাবি তুলছেন। যার অর্থ, চাষ থেকে লাভ হচ্ছে না। সরকারকে আগে কৃষিকে লাভজনক করার চেষ্টা করতে হবে। এম এস স্বামীনাথন কমিটি অনেক আগেই এই সুপারিশ করেছে।
মহারাষ্ট্রে কৃষকরা ফসলের নায্য দামের দাবি তুলেছে। বাজেটে চাষের খরচের দেড়গুণ ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন জেটলি। গুলাটির প্রশ্ন, ‘‘বাজারের দামের তুলনায় এমএসপি বেশি দিলে চাষিরা বেশি উৎপাদন করার উৎসাহ হারাতে পারেন।’’ তাঁর অভিযোগ, চাষিরা যাতে রফতানি করে ফসলের ভাল দাম পান, তার জন্যও উদ্যোগী হয়নি সরকার। চিনি বা ডালের দাম বেড়ে গেলেই শুল্ক বাড়িয়ে রফতানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
অর্থনীতিবিদ অরবিন্দ ভিরমানির যুক্তি, ‘‘আসলে কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানো আর কৃষকদের কল্যাণ—দু’টিকে আলাদা করে দেখা ভাল। এক করতে গেলেই বিভ্রান্তি। অর্থের অপচয়। কিন্তু সমস্যার সমাধান হবে না।’’ তাঁর মতে, উৎপাদন বাড়াতে নতুন প্রযুক্তি, কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা হোক। তাঁদের কল্যাণের জন্য প্রয়োজনে নগদ সাহায্য দেওয়া হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy