Advertisement
E-Paper

সরকার ও প্রশাসনে মোদীর মুঠো কি ক্রমশ আলগা হচ্ছে?

এখন সেই মোদী সরকারেরই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা একই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে বিবাদ বেধেছে। ইডি-র অফিসার রাজেশ্বর সিংহ মোদীরই আস্থাভাজন গুজরাতি অফিসার হাসমুখ আঢিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। সিবিআই ডিরেক্টরের দেহরক্ষীরা রাজপথে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর গোয়েন্দাদের কলার ধরে টানাটানি করছেন।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩০
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদীর বজ্রমুষ্টি কি আলগা হচ্ছে! সরকার ও প্রশাসনে প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্ব কি কমছে? পরপর ঘটনাপ্রবাহ দেখে প্রশ্নটা কিন্তু উঠতে শুরু করেছে রাজধানীর আনাচকানাচে।

প্রথমে সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মা সরকারের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন। রাকেশ আস্থানা প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন জেনেও তাঁর নামে ঘুষের মামলা ঠুকলেন। তা রপর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর বিরল আচার্য প্রকাশ্যে সরকারের নাক গলানোর সমালোচনা করলেন। এ বার সিবিআইয়ের ডিএসপি, এএসপি স্তরের অফিসাররাও আস্থানার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে কার্যত প্রধানমন্ত্রীর দিকেই আঙুল তুলছেন।

অন্য দিকে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাজে মোদী সরকার কী ভাবে হস্তক্ষেপ করেছে, সেই তথ্য সংবাদমাধ্যমে লাগাতার ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। বিরল মুখ খোলায় খোদ প্রধানমন্ত্রী অখুশি বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রে বারবার বার্তা দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও বিরল বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

এই অবস্থায় ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা মনীশ তিওয়ারি এ দিন প্রশ্ন তুললেন, ‘‘আপনাদের মনে হচ্ছে, দেশে কোনও সরকার রয়েছে? সরকারের অন্দরে গৃহযুদ্ধ চলছে!’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বললেন, ‘‘প্রশাসনের রুটিন কাজই ঠিক মতো চলছে না। মোদী সরকারের রাজত্বকালকে ইতিহাসে অন্ধকারতম অধ্যায় হিসেবে দেখা হবে।’’

মনমোহন জমানার একেবারে শেষ পর্বে বিভিন্ন মন্ত্রক, দফতরের মধ্যে নিয়মিত বিবাদ বাধত। এক দফতর আর এক দফতরের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকত। সে সময় মোদীই তার কড়া সমালোচনা করতেন। ২০১৩ থেকে বিজেপি নীতিপঙ্গুত্বর কথা তুলে প্রচারে নামে। তার পরে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসে মোদী প্রথমেই কড়া সুরে সরকারের ঘরের বিবাদ ঘরেই মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

কিন্তু এখন সেই মোদী সরকারেরই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা একই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে বিবাদ বেধেছে। ইডি-র অফিসার রাজেশ্বর সিংহ মোদীরই আস্থাভাজন গুজরাতি অফিসার হাসমুখ আঢিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। সিবিআই ডিরেক্টরের দেহরক্ষীরা রাজপথে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর গোয়েন্দাদের কলার ধরে টানাটানি করছেন। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, মনমোহন সরকার ন’বছর ক্ষমতায় থাকার পর যে রোগ ধরেছিল, মোদী সরকারের সাড়ে চার বছরেই সেই রোগ ধরেছে। মনীশ তিওয়ারির দাবি, ‘‘এঁরা আমাদের নীতিপঙ্গুত্বের কথা বলতেন! কারও যদি নীতিগত পঙ্গুত্ব থাকে, তা হলে সেটা এই সরকারের।’’
সমালোচনাটা আরও বেশি হচ্ছে, কারণ সিবিআই ডিরেক্টর অলোক বর্মা বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল, দু’জনেই মোদীর নিযুক্ত। ইয়েচুরি বলেন, ‘‘এই সরকার নিজের লোকেদেরও সামলাতে পারে না। শুধু প্রচারে ৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করে জগাখিচুড়ি তৈরি করতে পারে।’’
ইতিমধ্যেই অসহিষ্ণুতা নিয়ে একাধিক বার সরব হয়েছেন প্রাক্তন আমলাদের একাংশ। খোলা চিঠি লিখেছেন মোদীকে। এ বার অসন্তোষ গোপন থাকছে না কর্মরত আইএএস, আইপিএসদেরও। অনেকেই বলাবলি করছেন, অনেক দিন ধরেই ক্ষোভ জমছিল। তার বড় কারণ, এই আমলে প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলির অনেকাংশ দখল করেছেন গুজরাত ক্যাডারের অফিসাররা। অথচ আমলাদের মধ্যে গুজরাত ক্যাডারের সংখ্যা ৪ শতাংশের বেশি নয়। আইপিএস-দের মধ্যে এমন অনেকে ক্ষমতা পেয়েছেন, যাঁরা এর আগে গুজরাত দাঙ্গা, ইশরাত জহান মামলা, সোহরাবুদ্দিন মামলায় বিজেপির সরকারকে সাহায্য করেছেন। অন্যদের অনেকেই এই ‘পুরস্কারনীতি’ ভাল চোখে দেখেননি।
কংগ্রেস নেতাদের দাবি, মোদী সরকারের নাক গলানোর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা প্রথম মুখ খুলেছিলেন। সিবিআই, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পর যে কোনও দিন নির্বাচন কমিশনেও একই ছবি দেখা যেতে পারে। কিন্তু আগে মন্ত্রীরাই তো মোদীর সামনে মুখ খোলার সাহস পেতেন না বলে শোনা যায়। এখন আধিকারিকরা সাহস পাচ্ছেন কী করে? কংগ্রেসের দাবি, রাফাল দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে গিয়ে রাহুল গাঁধী দেখিয়ে দিয়েছেন মোদীর চোখে চোখ রাখা যায়। বিজেপি মুখপাত্রদের অবশ্য দাবি, নেতিবাচক প্রচারে লাভ হবে না। মানুষ মোদীর কাজে সন্তুষ্ট।

Narendra Modi Administration CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy