Advertisement
E-Paper

গায়ে ৯ লাখি জ্যাকেট! নীরব মোদীকে নিয়ে বিরোধীদের বিদ্রুপ

ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ’ ভিডিয়োটি টুইটারে আপলোড করার পর থেকেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করে বিরোধীরা।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ১৬:৪০
লন্ডনের রাস্তায় এই জ্যাকেট গায়েই দেখা গিয়েছে নীরব মোদীকে। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।

লন্ডনের রাস্তায় এই জ্যাকেট গায়েই দেখা গিয়েছে নীরব মোদীকে। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।

দশ লাখের স্যুট পরে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। এ বার নীরব মোদীর ৯ লাখি জ্যাকেট নিয়েও কথা শুনতে হচ্ছে তাঁর সরকারকে। সংবাদমাধ্যম নীরব মোদীর নাগাল পেয়ে গেল, সরকার কেন পেল না, বিরোধীদের পাশাপাশি প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে সাধারণ মানুষও।

সম্প্রতি লন্ডনের রাস্তায় ফুরফুরে মেজাজে দেখা মেলে নীরব মোদীর। অস্ট্রিচের চামড়া দিয়ে তৈরি ১০ হাজার পাউন্ডের জ্যাকেট গায়ে ট্যাক্সি ডাকছিলেন তিনি। ভারতীয় মুদ্রায় ওই জ্যাকেটেরদাম ৯ লক্ষ টাকার বেশি।

ব্রিটিশ সংবাদপত্র ‘দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ’ ভিডিয়োটি টুইটারে আপলোড করার পর থেকেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করে বিরোধীরা। কংগ্রেসের টুইটার হ্যান্ডলে লেখা হয়, ‘টেলিগ্রাফের সাংবাদিক নীরব মোদীর নাগাল পেয়ে গেলেন। তাহলে মোদী সরকার কেন পেল না? কাকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন নরেন্দ্র মোদী? নিজেকে, না নীরব মোদীকে? নাকি সেই সব লোকজনদের, যাঁরা নীরব মোদীকে পালাতে সাহায্য করেছেন?’

আরও পড়ুন: ভোল বদলে লন্ডনের রাস্তায় ফুরফুরে নীরব মোদী! হাসিমুখে সামলালেন সাংবাদিকের প্রশ্নও​

সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘তথাকথিত চৌকিদার নিজেই তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধুদের চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। এই নীরব মোদীদাভোসে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। দুর্নীতির খবর চাউর হওয়ার পরও মোদীর সঙ্গে ছবি তুলেছিলেন।’’

ভারতীয় সাংবাদিকদের সমালোচনা করার পাশাপাশি, জ্যাকেটটি নিয়ে টুইটারে মন্তব্য করতে দেখা যায় জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা ওমর আবদুল্লাকেও। তিনি লেখেন, ‘চিত্কার-চেঁচামেচি নেই, ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপ নেই, মুখের উপর ঠেসে চেপে ধরা হয়নিও, শুধু ধেয়ে এসেছে প্রশ্নবাণ। অত্যন্ত বিনম্র ভাবে উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ভিডিয়োটি দেখে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের সাংবাদিকদের, যাঁরা সারা ক্ষণ শুধু শিরোনামের পিছনে ছুটে বেড়ান।’ পরে আর একটি টুইটে তিনি লেখেন, ‘যাই বলেন অস্ট্রিচ জ্যাকেটটি কিন্তু অত্যন্ত কুত্সিত।’

কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা আবার ধাঁধাঁও লিখে ফেলেন। তাঁর লেখায়, ‘দেশের ২৩ হাজার কোটি লুঠ করে নাও/বাধা-বিপত্তি ছাড়া দেশ ছেড়ে পালাও/তার পর বিদেশে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি তোলাও/লন্ডনে ৭৩ কোটির ফ্ল্যাটে আরামে জীবন কাটাও...বলো তো আমি কে? আচ্ছা ছাড়ো আমিই বলছি। ছোট মোদী ছাড়া আর কে? চৌকিদার মোদী দেশ পাহারা দিচ্ছেন। তাহলে আর ভয় কীসের? মোদীর জমানায় সবকিছুই সম্ভব।’ পরে নীরব মোদীর ওই ভিডিয়োটি ছবির ট্রেলার হিসাবেও পোস্ট করেন তিনি। নাম দেন ‘পোস্টার বয় ফর ব্যাঙ্ক ফ্রডস্টারস সেটলমেন্ট স্কিম অ্যাবরড।’ নরেন্দ্র মোদীকে ছবির পরিচালক, অরুণ জেটলিকে চিত্র সম্পাদক হিসাবে উল্লেখ করেন। চিত্রনাট্যকার হিসাবে ইডি এবং সিবিআই-কে তুলে ধরেন। ছবির বাজেট ঠিক করেন ২৩ হাজার কোটি টাকা। প্রযোজনায় ভারতীয় ব্যাঙ্ক— বলে লেখেন সুরজেওয়ালা।

আরও পড়ুন: নয়া পাকিস্তান গড়তে হলে সন্ত্রাসবিরোধী নয়া পদক্ষেপও জরুরি, ইমরানকে খোঁচা ভারতের​

দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ও প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম পর পর বেশ কিছু টুইট করে লেখেন, ‘ললিত মোদী যখন ব্রিটেনে ছিলেন, সেখানকার চ্যান্সেলরকে আমি নিজে চিঠি লিখেছিলাম। ওঁকে ভারতে ফেরত পাঠানোর আর্জি জানিয়েছিলাম। তার জন্য আমাকে কম ব্যঙ্গ করেননি সুষমা স্বরাজ। আর এখন দেখুন, লন্ডনের রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন নীরব মোদী। এখন কি সুষমা লন্ডন ছুটে যাবেন? রাস্তা থেকে ওঁকে বগলদাবা করে ভারতে ফিরিয়ে আনবেন?’

ব্যাঙ্ক জালিয়াতিতে অভিযুক্ত আর এক শিল্পপতি বিজয় মাল্যও এই মুহূর্তে লন্ডনে রয়েছে। গত কয়েক মাসে নীরব মোদীর সঙ্গে তাঁর একাধিকবার সাক্ষাৎ হয়েছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে। তা নিয়ে মোদী সরকারকে আক্রমণ করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি বলেন, ‘মোদী সরকার এই দু’জনকে দেশ ছেড়ে পালাতে সাহায্য করল কেন? এই কি মোদীজির দেশভক্তির নমুনা?’

বিরোধীদের তোপের মুখে পড়ে বিজেপি অবশ্য পূর্ববর্তী ইউপিএ সরকারের ঘাড়েই দোষ চাপিয়ে দেয়। দলের টুইটার হ্যান্ডলে লেখা হয়, ‘২০১১ সালে ইউপিএ জমানায় ব্যাঙ্ক জালিয়াতি শুরু করেন নীরব মোদী। মোদী জমানাতেই অপরাধ সামনে আসে।’ বিরোধীদের চুপ করাতে দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভরেকরও। তিনি বলেন, ‘নীরব মোদীর সঙ্গে কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর নীরব মোদীর গীতাঞ্জলি সংস্থার একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। ঠিক তার পরদিনই ইলাহাবাদ ব্যাঙ্ক ওঁকে১৫শো কোটির ঋণ দিয়ে দেয়। ইউপিএ-২ জমানায় দেশে অনাদায়ী ব্যাঙ্ক ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫ লক্ষ কোটি। পরবর্তী ৫ বছরে তা ৫২ লক্ষ কোটিতে পৌঁছয়। বেছে বেছে সব চোরকে কংগ্রেসই ঋণ পাইয়ে দিয়েছিল। অবাধ ছাড় দিয়েছিল দেশে লুঠপাট চালাতে। ওদের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা নীরব মোদীকে লন্ডনে দেশে কংগ্রেস খুশিই হয়েছে।’

তবে বিজেপির সাফাইয়ে মন গলেনি নেটিজেনদের। দেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে লন্ডনে বিলাসবহুল জীবন কাটাচ্ছেন নীরব মোদী, সেখান থেকে আবার হিরের ব্যবসাও চালাচ্ছেন, অথচ মোদী সরকার তা টের পেল না? এমন প্রশ্ন তুলতে দেখা গিয়েছে অনেককে। একজন ‘চোর’ বিদেশে আমোদ করছেন, আর দেশের সাধারণ মানুষ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন, সে কথা বলেও কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেছেন কেউ কেউ।

(কী বললেন প্রধানমন্ত্রী, কী বলছে সংসদ- দেশের রাজধানীর খবর, রাজনীতির খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)

Nirav Modi Corruption PNB Scam London Nirav Modi Jacket Narendra Modi Vijay Mallya Congress BJP UPA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy