Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Patanjali

কোভিড প্রতিরোধী নয়, তবু করোনিল কিট বেচেই ২৫০ কোটি টাকা আয় রামদেবের পতঞ্জলির

তাদের তৈরি ওষুধ করোনা ঠেকাতে ১০০ শতাংশ সফল বলে দাবি করে বাজারে প্রথম করোনা কিট নিয়ে আসে পতঞ্জলি। কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে পরে পিছু হটে।

গত চার মাসে হু হু করে বিকিয়েছে পতঞ্জলির এই তিনটি সামগ্রী।

গত চার মাসে হু হু করে বিকিয়েছে পতঞ্জলির এই তিনটি সামগ্রী।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৫:৫৫
Share: Save:

করোনার ওষুধ বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে একাধিক মামলা যেমন দায়ের হয়েছে। তেমনই কেন্দ্রের তরফে ভর্ৎসনাও জুটেছে। তার পরও বিক্রিবাটা বন্ধ হয়নি তাদের। বরং অতিমারি পরিস্থিতিতে অন্যান্য ব্যবসা যখন ধুঁকছে, সেইসময় গত চারমাসে শুধুমাত্র করোনিল কিট বিক্রি করেই প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ঘরে তুলেছে বাবা রামদেবের পতঞ্জলি সংস্থা।

গত ২৩ জুন প্রথম বার করোনিল কিট বাজারে আনে পতঞ্জলি। করোনিল এবং শ্বাসারি বটি নামের দু’ধরনের ট্যাবলেট এবং অণু তৈল নামের ২০ মিলিলিটারের একটি তেলের শিশি নিয়ে তৈরি ওই কিটের দাম রাখা হয় ৫৪৫ টাকা। চাইলে আলাদা ভাবে ট্যাবলেট এবং তেল কেনা যাবে বলেও জানানো হয়। তার পর ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ২৩ লক্ষ ৫৪ হাজার করোনিল কিট বিক্রি হয়েছে বলে সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে।

এ ছাড়াও, আলাদা ভাবে ওই তিনটি সামগ্রীর ৬২ লক্ষ ইউনিট তারা বিক্রি করতে সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে পতঞ্জলি। এর মধ্যে ১৮ লক্ষ ৫০ হাজার শিশি অণু তৈল বিক্রি করেছে তারা। ৮০টি করে করোনিল ট্যাবলেট থাকে যে শিশিতে, তার দাম ৪০০ টাকা। সেই শিশি বিক্রি হয়েছে ২০ লক্ষ ১৩ হাজার ইউনিট। ৮০টি করে শ্বাসারি বটি ট্যাবলেটের প্রত্যেক শিশির দাম ১২০ টাকা। শ্বাসারি বটি ট্যাবলেটের ওই শিশি ২৩ লক্ষ ৩২ হাজার ইউনিট বিক্রি হয়েছে।

আরও পড়ুন: এলাহাবাদ হাইকোর্টের নজরদারিতে হাথরস তদন্ত, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের​

পতঞ্জলির ওয়েবসাইটে প্রত্যেক সামগ্রীর যে দাম লেখা রয়েছে, সেই অনুযায়ী, আলাদা ভাবে শ্বাসারি বটি বিক্রি করে ২৭ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা আয় করেছে তারা। অণু তৈল বিক্রি করে ৪ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা আয় হয়েছে। করোনিল ট্যাবলেট বিক্রি হয়েছে ৮০ কোটি ৫২ লক্ষ টাকার। আর তিনটি সামগ্রী মিলিয়ে তৈরি করোনিল কিট বিক্রি করে আয় হয়েছে ১২৮ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৪১ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা আয় করেছে তারা।

করোনিল নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক। তা সত্ত্বেও মানুষ তাঁদের উপর বিশ্বাস রেখেছেন বলে মত পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের সিইও আচার্য বালকৃষ্ণর। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ব্যবসা থেকেই করোনিলের সাফল্য বোঝা যাচ্ছে। আমাদের তৈরি ঘি, মাজন এবং অ্যালোভেরা অত্যন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু শুরুর দিকে সেগুলিও এত ভাল ব্যবসা করতে পারেনি।’’ বর্তমানে প্রত্যেক দিন তাদের সংস্থা ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার করোনিল কিট তৈরি করছে বলেও জানান তিনি। কোভিড-১৯ প্রতিহত করতে করোনিল কতটা কার্যকরী, খুব শীঘ্র সেই সংক্রান্ত সবিস্তার নথিপত্র তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত আয়ুষ টাস্কফোর্সের কাছে জমা দেবেন বলেও জানান বালকৃষ্ণ।

তাদের তৈরি ওষুধ করোনা ঠেকাতে ১০০ শতাংশ সফল বলে দাবি করেই বাজারে প্রথম করোনা কিট নিয়ে আসে পতঞ্জলি। সেইসময় তারা জানায়, করোনিল এবং শ্বাসরি নামে দু’টি ওষুধ বাজারে ছেড়েছে তারা এবং এই ওষুধ ৭ দিনে করোনা সারাতে ১০০ শতাংশ সফল। তাদের তৈরি করোনিলের প্রয়োগে কোভিড আক্রান্তরা ইতিমধ্যে সেরেও উঠছেন। পতঞ্জলির এই দাবি শোরগোল ফেলে দেয় গোটা দেশে। আয়ুষ মন্ত্রক তড়িঘড়ি ওই ওষুধ সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য চেয়ে নোটিস পাঠায় পতঞ্জলিকে। এই ওষুধ সংক্রান্ত সমস্ত রকম বিজ্ঞাপন বন্ধ করার নির্দেশও দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীরাও তো ছ’-সাত ভাইবোন! নীতীশকে পাল্টা তেজস্বীর​

সব কিছু খতিয়ে দেখে আয়ুষ মন্ত্রক জানায়, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত ঔষধের গবেষণা বা প্রচারের আগে আয়ুষ মন্ত্রকের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক। রামদেবের সংস্থা তা করেনি। উত্তরাখণ্ড সরকার জানায়, লাইসেন্স নেওয়ার সময় কোভিড-১৯-এর ওষুধের কথা উল্লেখও করা হয়নি। বরং জ্বর, কাশি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবর্ধক ওষুধ হিসেবেই করোনিলকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। মানুষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগে পতঞ্জলির বিরুদ্ধে একের পর এক মামলাও দায়ের হয়।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সেইসময় পতঞ্জলির তরফে সাফাই দিয়ে বলা হয়, ‘‘আমরা কখনওই বলিনি এই ওষুধটি করোনা সারাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বলেছিলাম, আমরা ওষুধ তৈরি করে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছি। তাতে করোনা রোগীরা সেরে উঠেছেন। এতে কোনও জটিলতা নেই।’’ তার পরে করোনা কিটের নাম পরিবর্তন করে করোনিল কিট রাখে তারা। রামদেব নিজে সাফাই দিয়ে জানান, করোনিল এবং শ্বাসারি কোভিড নিরাময় করবে না, তবে রোগ মোকাবিলায় ব্যবহার করা যেতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE