শোক: ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজের ওটিতে রোগীর সামনে চিকিৎসক মানিক সাহা (বাঁ দিক থেকে চতুর্থ) ও অন্যদের নীরবতা পালন। এই ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
অক্সিজেন মাস্ক নাকে অপারেশন থিয়েটারে শুয়ে আছেন রোগী। পথ দুর্ঘটনায় হাড় ভেঙেছে চোয়ালের। বোন প্লেটিং করা হবে। কিন্তু অস্ত্রোপাচারে হাত লাগানোর আগে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন চিকিৎসক, অ্যানাস্থেটিস্ট, নার্স-সহ সব কর্মী। বেশির ভাগের হাত সামনে ঝোলানো, জড়ো করা। মাথা নোয়ালেন সকলে। নীরবতা পালন করলেন এক মিনিট। পুলওয়ামায় নিহত জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। তার পরে শুরু হল অস্ত্রোপচার।
কেউ বলছেন দেশভক্তি। কেউ বলছেন বাড়াবাড়ি। ‘আদিখ্যেতা’ বলতেও ছাড়ছেন না অনেকে। সব মিলিয়ে ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজে শনিবারের এই ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন জোর বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে, গোটা দেশের মানুষ শোক জানাচ্ছেন নানা ভাবে। কিন্তু সীমান্তে বা স্পর্শকাতর এলাকায় মোতায়েন জওয়ানেরা কি দেশরক্ষার দায়িত্ব ভুলে পলকের জন্যও মাথা নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন শোকে? চিকিৎসকের পেশাও তো তেমন! রোগীর মরণ-বাঁচন তাঁদের হাতে। প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান। তাঁদের কি এটা করা সাজে!
কেন নয়? ফোনে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন ওই ওটি-র অন্যতম চিকিৎসক মানিক সাহা। এর পর বললেন, ‘‘ফুটবল মাঠে যদি ফুটবলাররা নিহত জওয়ানদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন, বিধায়ক-মন্ত্রীরা যদি বিধানসভায় কাজ শুরুর আগে তা করতে পারেন— তবে এক জন সার্জন হয়ে আমি তা করলে অন্যায়ের কী আছে? শ্রদ্ধাটাই আসল।’’ আরও জানালেন, কিছু ক্ষণ আগে তিনিও একটি ফুটবল মাঠে ছিলেন। সেখানে খেলা শুরুর হবার আগে ফুটবল সামনে রেখে সবাই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন। মানিকবাবু জানতে চান,‘‘আমরা তো সার্জন, শোক পালন কোথায় করব? রাস্তায় নয় নিশ্চয়ই!’’ কিন্তু রোগী যে তখন ওটি-র বেডে?
আরও পড়ুন: ‘মা মেরেছে’, একাই হাসপাতালে রক্তাক্ত বালক
মানিকবাবুর জবাব, ‘‘শোকপালন করেছি অপারেশন শুরুর আগে। রোগীকে অ্যানেস্থশিয়া করে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হয়েছিল। রোগীর প্রতি আমরা যথেষ্ট যত্নবান ছিলাম। তিনি স্বাভাবিক ছিলেন।’’
ইন্ডিয়া ম্যাডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সভাপতি শঙ্কর রায়ও দোষের কিছু দেখছেন না। বলেছেন, ‘‘মানুষ কত নেগেটিভ প্রচার চালায়! এত জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। দেশপ্রেমিক হিসেবে তাঁদের প্রতি সকলেরই সহানুভুতি থাকা উচিত। এই পরিস্থিতিতে এমন বিতর্ক তৈরি করা বা প্রশ্ন তোলাটাই লজ্জার।’’ নিজে তিনি ছবিটি দেখেননি। এমনও বলেন, ‘‘কত রকম কারচুপি করেও ছবি দেওয়া যায় আজকাল!’’ পরে চিকিৎসক নিজেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মুখ খোলায় এ নিয়ে আর সন্দেহের অবকাশ থাকেনি।
আরও পড়ুন: পুলওয়ামায় শান্তির কথা বলে ধর্ষণের হুমকি পেলেন বারাসতের মহিলা
হাসপাতাল সূত্রের খবর, সফল অস্ত্রোপচারের পরে ওই রোগী এখন ভাল আছেন। আগামিকাল তাঁর ছুটি হতে পারে। রোগী বা তাঁর আত্মীয়রা কেউ কোনও অভিযোগ করেননি বিষয়টি নিয়ে। শুধু চাপানউতোর সমানে চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy