Advertisement
E-Paper

তবে কি মোদীর নির্দেশেই দেশ ছাড়েন মাল্য? প্রশ্ন রাহুলের

যাঁর দাবি, সংসদের সেন্ট্রাল হলে অরুণ জেটলি ও বিজয় মাল্যর আলোচনা তিনি নিজের চোখে দেখেছেন। 

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৩
সরব: সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। নয়াদিল্লিতে বৃহস্পতিবার। পিটিআই

সরব: সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। নয়াদিল্লিতে বৃহস্পতিবার। পিটিআই

বিজয় মাল্য বুধবারই লন্ডনে দাবি করেছিলেন, দেশ ছাড়ার আগে তিনি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তা নিয়ে অরুণ জেটলি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কাঠগড়ায় তুলতে আজ নিজেই মাঠে নেমে পড়লেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে হাজির করলেন কংগ্রেস নেতা পি এল পুনিয়াকে— যাঁর দাবি, সংসদের সেন্ট্রাল হলে অরুণ জেটলি ও বিজয় মাল্যর আলোচনা তিনি নিজের চোখে দেখেছেন।

কংগ্রেসের সদর দফতরে সাক্ষীকে পাশে নিয়ে, সাংবাদিক সম্মেলন করে রাহুলের প্রশ্ন, ‘‘অর্থমন্ত্রী আর্থিক অপরাধী বিজয় মাল্যর সঙ্গে কথা বলেন। অপরাধী অর্থমন্ত্রীকে বলেন, তিনি লন্ডনে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু সিবিআই, ইডি বা পুলিশকে অর্থমন্ত্রী তা জানালেন না। কেন?’’ জেটলি গত আড়াই বছরে মাল্যর সঙ্গে এই আলোচনার কথা তাঁর ব্লগে বা সংসদের বিতর্কে জানাননি কেন, সেই প্রশ্নও তুলে রাহুলের যুক্তি, এর পরে জেটলি অর্থমন্ত্রী পদে থাকতে পারেন না।

এক তিরে জেটলির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও নিশানা করেছেন রাহুল। তাঁর দাবি, ‘‘সরকারে প্রধানমন্ত্রীই সব কিছু ঠিক করেন। অর্থমন্ত্রী দেশকে বলুন, উনি নিজেই মাল্যর মতো অপরাধীকে দেশ থেকে পালাতে দিয়েছিলেন, নাকি প্রধানমন্ত্রীর আদেশে?’’

রাহুলের অভিযোগ, কিংফিশার এয়ারলাইন্সের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ৯ হাজার কোটি টাকার দেনা শোধ না-করে পালিয়ে যেতে মাল্যকে ‘ফ্রি প্যাসেজ’ দেওয়া হয়েছিল। মাল্যর নামে সিবিআই প্রথমে লুকআউট নোটিস জারি করে, তা দেখা মাত্র গ্রেফতারির নির্দেশ ছিল। তার পরে সেই নোটিস পাল্টে শুধু ‘দেখা গেলে জানানো’র কথা বলা হয়। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের দিকে ইঙ্গিত করে রাহুলের প্রশ্ন, ‘‘যিনি সিবিআই-কে নিয়ন্ত্রণ করেন, এ কাজ একমাত্র তিনিই করতে পারেন।’’

রাহুলের এই ঝোড়ো আক্রমণ থেকে বাঁচতে আজ পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার কৌশল নিয়েছে বিজেপি। প্রথমে দলের মুখপাত্র সম্বিত পাত্র, তার পরে মন্ত্রী পীযূষ গয়াল, দু’দফায় সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ তুলেছেন— সনিয়া গাঁধীর ইউপিএ-সরকারের আমলেই মাল্যকে ঋণ শোধ করার এত সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল যে মনে হয়, মাল্য নয়, গাঁধী পরিবারই বেনামে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের মালিক ছিল। পীযূষের অভিযোগ, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ নিজেই কিংফিশারকে সাহায্যের কথা বলেছিলেন।

কিন্তু কোনও ফাঁদে পা দেননি রাহুল তথা কংগ্রেসের নেতারা। এক সুরে মাল্যর সঙ্গে অরুণ জেটলির ‘অশুভ আঁতাঁত’ নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। রাহুলের যুক্তি, দেশ ছাড়ার আগে নীরব মোদী-মেহুল চোক্সীদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছবি মেলে। দেশ ছাড়ার আগে মাল্য জেটলির সঙ্গেও কথা বলেন। কী ভাবে এত সমাপতন!

মাল্য কাল লন্ডনে তাঁর সঙ্গে ২০১৬-এর বৈঠকের কথা ফাঁস করে দেওয়ার পরে জেটলি যুক্তি দেন, কোনও পূর্ব নির্ধারিত বৈঠক হয়নি। সংসদের করিডরে এসে মাল্য ব্যাঙ্কের পাওনা মেটানোর প্রস্তাব দিলেও তিনি আমল দেননি। রাহুলের প্রশ্ন, ‘‘করিডরে কথা হয়ে থাকলেও জেটলি সিবিআই-ইডিকে কেন বলেননি— এ পালাবে, একে পাকড়াও করো।’’

২০১৬-র ২ মার্চ লন্ডনে চলে যাওয়ার পরে আর দেশে ফেরেননি মাল্য। পুনিয়ার দাবি, ‘‘তার আগের দিন, ১ মার্চ সংসদের সেন্ট্রাল হলের এক কোণে জেটলির সঙ্গে মাল্যকে প্রথমে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখি। ৫-৭ মিনিট পরে তাঁরা বসে আলোচনা শুরু করেন। ৩ তারিখ জানতে পারি, আগের দিনই মাল্য লন্ডন পালিয়ে গিয়েছেন।’’ সিসিটিভি-ফুটেজ দেখা হলেই এর প্রমাণ মিলবে বলে পুনিয়ার যুক্তি।
গত কালই জেটলি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন। আজ তিনি এ বিষয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবিরের যুক্তি, জেটলি এক বারও বলেননি যে মাল্য লন্ডন চলে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছিলেন। কংগ্রেস ‘মিথ্যে অভিযোগ’ তুলছে। ওই দিন, ২০১৬-র ১ মার্চ, বাজেট পেশের পর দিন অর্থমন্ত্রী খুব সামান্য সময়ের জন্য সংসদে ছিলেন বলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি। কিন্তু রাহুলের বক্তব্য, ‘‘জেটলি মিথ্যে বলছেন। সরকার মিথ্যে বলছে। জেটলির সঙ্গে মাল্যর ১৫ থেকে ২০ মিনিট আলোচনা হয়েছিল।’’
জেটলি এ ভাবে বিপাকে পড়ায় বিজেপির একাংশ অবশ্য অখুশি নয়। বিশেষ করে জেটলির পতনে যাঁদের পদোন্নতির আশা রয়েছে, তাঁরা এতে নিজেদের লাভ দেখছেন। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেন, ‘‘মাল্যর পলায়ন নিয়ে দু’টো অনস্বীকার্য তথ্য এখন সামনে রয়েছে। এক, ২০১৫-র ২৪ অক্টোবর লুকআউট নোটিসে মাল্যকে ‘ব্লক’ করার নির্দেশ বদলে ‘রিপোর্ট’ করে দেওয়া হয়। সেই সুযোগেই মাল্য ৫৪টি লাগেজ নিয়ে বিমানে ওঠেন। দুই, মাল্য অর্থমন্ত্রীকে সেন্ট্রাল হলে বলেছিলেন, তিনি লন্ডনে যাচ্ছেন।’’
রাহুল যে ‘সমাপতন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, সেই একই রকম সমাপতন নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মোদী সরকারের প্রাক্তন অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি। তাঁর বক্তব্য, ২০১৬-র ২ মার্চ ঠিক যে দিন ব্যাঙ্কগুলি ৯ হাজার কোটি টাকার দেনা আদায় করতে পদক্ষেপ করে, সেই দিনই মাল্য দেশ ছাড়েন, এটা খুব বড় রকমের সমাপতন। হতেই পারে, কেউ তাঁকে আগাম সতর্ক করে দিয়েছিলেন।

Rahul Gandhi Narendra Modi Vijay Mallya নরেন্দ্র মোদী রাহুল গাঁধী বিজয় মাল্য
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy