Advertisement
E-Paper

ধর্ষণের ঘটনাতেও ধর্ষকের ধর্মীয় পরিচয় টেনে এনে এ বার ধর্মবিচার!

পুরো তথ্য আড়াল করে, কেবল আংশিক তথ্য সামনে এনে ঘটনায় সাম্প্রদায়িক বয়ান নির্মাণের চেষ্টাই নয়, তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ভুয়ো খবরও ছড়ানো হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:১৪
তেলঙ্গানায় চিকিৎসক ধর্ষণ, খুনের প্রতিবাদে দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল। ছবি: পিটিআই।

তেলঙ্গানায় চিকিৎসক ধর্ষণ, খুনের প্রতিবাদে দিল্লি মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন স্বাতী মালিওয়াল। ছবি: পিটিআই।

তেলঙ্গানার মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-পুড়িয়ে খুনের ঘটনাতেও ধর্মের রং লাগানোর অভিযোগ উঠল।

ওই ঘটনায় অভিযুক্ত চার জনের মধ্যে কেবল এক সংখ্যালঘু অভিযুক্তের পরিচয়কেই সামনে নিয়ে এসে প্রচার চালানো হল ফেসবুক-টুইটারে। যদিও বাস্তবে অভিযুক্তদের মধ্যে সব সম্প্রদায়ের লোকই রয়েছে। ধর্ষকের ধর্মীয় পরিচয় টেনে এনে এমন প্রচারকে পাল্টা সমালোচনাও করেছেন নেটিজ়েনরা।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরেই শুক্রবার টানা এমন ‘সাম্প্রদায়িক’ প্রচার শুরু হয় টুইটারে। পুলিশ চার অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করলেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শুধুমাত্র এক জনের নাম সামনে এনে তার শাস্তির দাবি তোলা হয়। টুইটের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় পঞ্চাশ হাজার। ওই দাবিতে তৈরি হ্যাশট্যাগ দীর্ঘক্ষণ ট্রেন্ডিংও ছিল টুইটারে। সমাজমাধ্যমে বিজেপি সমর্থক পরিচয়ের অজস্র প্রোফাইল, তেলঙ্গানার এক বিজেপি বিধায়ক, এমনকি বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি সেলের প্রধান অমিত মালব্য পর্যন্ত এক অভিযুক্তের নাম সামনে এনে সরব হয়েছেন।

আরও পড়ুন: আপত্তি সত্ত্বেও নাগরিকত্ব বিলে অনড় অমিত শাহ

পুরো তথ্য আড়াল করে, কেবল আংশিক তথ্য সামনে এনে ঘটনায় সাম্প্রদায়িক বয়ান নির্মাণের চেষ্টাই নয়, তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ভুয়ো খবরও ছড়ানো হয়। প্রচার চলে, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত শামশাবাদেই এই ঘটনা ঘটেছে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত চার জনই নারায়ণপেট জেলার বাসিন্দা। এমন প্রচারে শামিল হন অভিনেত্রী পায়েল রোহতগিও। ‘পায়েল রোহতগি অ্যান্ড টিম-ভক্তস অব ভগবান রাম’ নামের হ্যান্ডল থেকে এর আগে রামমোহন রায়কে ‘দেশদ্রোহী’ ও ‘ব্রিটিশদের চামচা’ বলে উল্লেখ করেন বিতর্কে জড়ান পায়েল। তবে নেটিজ়েনদের অনেকেই রিপোর্ট করায় টুইটার পায়েলের অ্যাকাউন্ট পরে বন্ধ করে দেয়। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় ঘটেছে বলে বক্রোক্তি করে টুইট করা হয় অন্ধ্রপ্রদেশ মহিলা কংগ্রেসের টুইটার হ্যান্ডল থেকেও। পরে সেই টুইট মুছে দিয়ে ওই হ্যান্ডল থেকে দাবি করা হয়, এক স্বেচ্ছাসেবক অসৎ উদ্দেশ্যে ওই বার্তা পোস্ট করেছে। এর সঙ্গে দলের মতামতের কোনও যোগ নেই।

তেলঙ্গানার গোশামহলের বিজেপি বিধায়ক রাজা সিংহ টুইটারে একটি ভিডিয়ো বার্তা দেন। তাতেও কেবল এক সংখ্যালঘু অভিযুক্তের নাম জানান তিনি। অনেকে শেয়ারও করেন সেই ভিডিয়ো। এ ভাবেই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রং লাগানোর চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

এমন ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। এ বছরের গোড়াতেই উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে এক শিশুকন্যার পচাগলা দেহ উদ্ধারের পর সাম্প্রদায়িক প্রচার চলেছিল সমাজমাধ্যমে। তেলঙ্গানার ঘটনাতেও শামশাবাদের ডিসিপি প্রকাশ রেড্ডি বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা কোনও ভাবেই সাম্প্রদায়িক নয়। অভিযুক্তদের মধ্যে সব সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে। ধর্মের সঙ্গে, এই ঘটনা জড়িত তা বলা একেবারেই ভুল হবে।’’

এই ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন নেটিজ়েনরাও। অনেকে প্রশ্ন করেছেন, ‘‘চার অভিযুক্তের মধ্যে এক জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। সে ক্ষেত্রে বলা যায় অভিযুক্তদের মধ্যে সংখ্যালঘুই সংখ্যালঘু। তা হলে এমন প্রচার কেন?’’ ঘটনার বিচার চেয়ে অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর লিখেছেন, ‘‘ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ ঘুচিয়ে দেওয়ার কথা মনুষ্যত্বের। তার বদলে তা ঘুচিয়ে দিচ্ছে আমাদের হিংস্রতা। ছি!’’

Crime Rape Telangana
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy