Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ঠাকুরঘরে ঋতুবদল, শবরীমালার দরজা খুলল সুপ্রিম কোর্ট

ঋতুযোগ্য মহিলাদের শবরীমালা মন্দিরে ঢোকায় আর কোনও বাধা রইল না। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ আজ এই রায় দিয়েছে

সবরীমালায় ঋতুমতী নারীর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরাল সর্বোচ্চ আদালত।

সবরীমালায় ঋতুমতী নারীর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরাল সর্বোচ্চ আদালত।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:৫৫
Share: Save:

ঋতুযোগ্য মহিলাদের শবরীমালা মন্দিরে ঢোকায় আর কোনও বাধা রইল না। সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ আজ এই রায় দিয়েছে।

প্রায় আটশো বছরের পুরনো কেরলের শবরীমালা মন্দিরে প্রতি বছর কোটি কোটি ভক্তের সমাগম হয়। তাঁদের মধ্যে মাত্র কয়েক লক্ষ মহিলা। কারণ, এত দিন ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সি মহিলাদের এই মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। সাধারণত, এই বয়সেই মহিলারা ঋতুযোগ্য হন। শবরীমালার প্রধান বিগ্রহ আয়াপ্পা ব্রহ্মচারী। ঋতুযোগ্য মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করলে তাঁর কৌমার্যব্রত ভেঙে যেতে পারে। তাই এই নিষেধাজ্ঞা।

এই নীতি চ্যালেঞ্জ করে ২০১৬ সালে শীর্ষ আদালতে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিল ‘ইন্ডিয়া ইয়ং লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন। আজ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ রায় দিয়েছে, ‘‘এই নিয়ম অস্পৃশ্যতার মতো। অনৈতিক, বেআইনি এবং সংবিধান-বিরোধী।’’ যে কোনও মহিলারই শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দেওয়ার অধিকার থাকা উচিত বলে মনে করে সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘কোনও মহিলার শারীরবৃত্তি কখনওই যেন তাঁর কোনও কাজে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।’’ নারী অধিকার কর্মীদের মতে, ধর্মীয় আচার-আচরণে ঋতুযোগ্য মহিলাদের ‘অস্পৃশ্য’ করে রাখার প্রবণতারই বিরোধিতা করছে সুপ্রিম কোর্টের আজকের এই রায়।

মন্দির-প্রবেশ

• ৫ এপ্রিল, ১৯৯১: একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে শবরীমালা মন্দিরে নির্দিষ্ট বয়সের মহিলাদের প্রবেশে প্রাচীন নিষেধাজ্ঞা বহাল কেরল হাইকোর্টের

• ৪ অগস্ট, ২০০৬: ১০-৫০ বছর বয়সি মেয়েদের প্রবেশাধিকার চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে ‘ইন্ডিয়ান ইয়ং ল’ইয়ারস অ্যাসোসিয়েশন’

• নভেম্বর, ২০০৭: নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা সমর্থন করে হলফনামা কেরলের বামজোট সরকারের

• ১১ জানুয়ারি, ২০১৬: সওয়াল সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চে

• ৬ ফেব্রুয়ারি: কেরলে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের মতে, দীর্ঘদিনের ধর্মীয় প্রথা রক্ষাই সুপ্রিম কোর্টের কর্তব্য

• ১৩ এপ্রিল: সুপ্রিম কোর্টের মতে, ঐতিহ্যের নামে মহিলাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা চাপানো যায় না

• ৭ নভেম্বর: সব বয়সের মহিলাদের প্রবেশাধিকারে সমর্থন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে নয়া হলফনামা বামজোট সরকারের

• ১৩ অক্টোবর, ২০১৭: মামলা সাংবিধানিক বেঞ্চে

• ১৭ জুলাই, ২০১৮: পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে শুনানি শুরু

• ১৯ জুলাই: শবরীমালায় প্রবেশ মহিলাদের মৌলিক অধিকার বলে জানায় সুপ্রিম কোর্ট

• ২৪ জুলাই: সুপ্রিম কোর্ট জানায়, প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা সাংবিধানিক কি না, বিচার হবে

• ২৫ জুলাই: নায়ার সার্ভিস সোসাইটি জানায়, শবরীমালা মন্দিরের বিগ্রহ আয়াপ্পার কৌমার্য সংবিধানে রক্ষা করা হয়েছে

• ২৬ জুলাই: শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, ঋতুস্রাবের মতো শারীরিক কারণে মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হলে উদাসীন থাকা যায় না

• ২৮ সেপ্টেম্বর: শবরীমালায় সব বয়সের মহিলাদের প্রবেশাধিকার দিল সুপ্রিম কোর্ট

শবরীমালা মন্দিরে সব বয়সি মেয়েদের প্রবেশের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। আর প্রতি বারই তার বিরোধিতা করে এসেছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ ‘ত্রিভাঙ্কর দেবস্বম বোর্ড’। আজ সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, লিঙ্গ ও বয়সের ভিত্তিতে এই বৈষম্য অসাংবিধানিক এবং বেআইনি। বিচারপতিদের মতে, ঐতিহাসিক ভাবে মেয়েরা বৈষম্যের শিকার হয়ে এসেছে। রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘জীবন নামক নাট্যশালায় পুরুষ চিরকাল অটোগ্রাফ দিয়ে গিয়েছে। মেয়েদের সই করার জায়গাটুকুও রাখেনি।’’

২ অক্টোবর অবসর নিচ্ছেন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। সাংবিধানিক বেঞ্চের প্রধান হিসেবে এটাই ছিল তাঁর শেষ রায়। আজকের রায়ে তিনি বলেন, ‘‘শারীরবৃত্তির অজুহাত দিয়ে ১০ থেকে ৫০ বছরের মহিলাদের এ ভাবে দমন ও নিপীড়ন মেনে নেওয়া যায় না। লিঙ্গভিত্তিক এই বৈষম্য ভিত্তিহীন, অযৌক্তিক এবং কোনও ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। সংবিধানকে কোনও মতেই পাশে পাবে না এই ধরনের বৈষম্যমূলক নীতি।’’

আরও পড়ুন: দেশের এই মন্দিরগুলিতে পুরুষের প্রবেশ নিষেধ

সমকামী সম্পর্ক বা পরকীয়া নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিকতম রায়ের মতো আজকের এই রায়টি অবশ্য সর্বসম্মত ভাবে পাশ করানো যায়নি। কারণ পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চের একমাত্র মহিলা সদস্য, বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র বাকিদের মত মানেনি। বিচারপতি মলহোত্রের মতে, ধর্মীয় আচার-আচারণে আদালত এ ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। শেষ পর্যন্ত ৪:১-এ পাশ হয় রায়টি।

আজকের রায়ের পরে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে, আদালত তো নিষেধাজ্ঞা তুলে দিল। কিন্তু সত্যিই কি শবরীমালায় যাওয়া শুরু করবেন এই বয়সের ধর্মপ্রাণ মহিলারা? নাকি এত দিনের সংস্কার তাঁদের সেই পদক্ষেপ করতে বাধা দেবে? ধর্মীয় ভাবাবেগ বনাম আইনি বৈধতার এই লড়াই আরও উস্কে দিয়েছে বিচারপতি মলহোত্রের বিরুদ্ধমত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sabarimala Temple Supreme Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE