Advertisement
E-Paper

বিরিয়ানি বাঁচাতেই কি বুকে গুলি, প্রশ্নের মুখে শিবরাজ

সংঘর্ষটা সন্দেহজনক! আর বিপজ্জনক তার পরের বার্তাটি! প্রশ্ন উঠেছিল ঘটনার দিনই। তদন্ত যেটুকু এগিয়েছে তাতেও সন্দেহটা আরও জোরদার হয়ে উঠেছে যে, ধরা নয়, মারাই ছিল লক্ষ্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৫

সংঘর্ষটা সন্দেহজনক! আর বিপজ্জনক তার পরের বার্তাটি!

প্রশ্ন উঠেছিল ঘটনার দিনই। তদন্ত যেটুকু এগিয়েছে তাতেও সন্দেহটা আরও জোরদার হয়ে উঠেছে যে, ধরা নয়, মারাই ছিল লক্ষ্য। এবং সেই লক্ষ্য পূরণেই গত সোমবার জেলছুট ৮ সিমি সদস্যের কোমরের উপরে, বুকে গুলি করা হয়েছিল। আজ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট, এতটাই কাছ থেকে গুলি করা হয়েছিল যে বুলেট এফোঁড়-ওফোঁড় করে শরীর থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। এরই পাশাপাশি রাজ্যের সন্ত্রাস দমনের কর্তাই জানাচ্ছেন, গুলি করার সময় ওই জেলছুটরা মোটেই সশস্ত্র ছিল না।

সন্দেহ নেই, প্রথম দিন থেকেই বিজেপি-বিরোধী যে নেতারা ‘ভুয়ো’ সংঘর্ষের কথা বলে আসছিলেন, তাঁরা এ বার আরও জোর গলায় সেই অভিযোগ তোলার সুযোগ পেয়ে গেলেন। দু’দিন নীরব থাকলেও ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখে আজ বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখর কংগ্রেসও। কারণ, গোটা ঘটনাটি নিয়ে বিজেপি নেতারা মোদ্দা যে বার্তাটি দিচ্ছেন, বিরোধীদের মতে সেটা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর পক্ষে খুবই বিপজ্জনক।

একরাশ অভিযোগের জবাবে কী বলছেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান?

তিনি বলছেন বিরিয়ানির কথা! নিহত সিমি সদস্যদের প্রসঙ্গে প্রশ্নের মুখে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এদের শাস্তি দিতে বছরের পর বছর চলে যায়। আর (জেলে বসে) এরা চিকেন বিরিয়ানি খেয়ে যায়... পালিয়ে গিয়ে আবার অপরাধ করে, হামলা চালায়।... দুর্নীতির মামলায় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট থাকতে পারলে, সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য কেন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট থাকবে না?’’

শিবরাজ আপাত ভাবে দ্রুত বিচারের পক্ষে সওয়াল করলেও চিকেন বিরিয়ানির কথা বলায় প্রশ্ন উঠছে, এটা ‘অব তক ছপ্পন’ বা ‘শাগরিদ’-এর মতো বলিউডি কেতায় ‘এনকাউন্টার’-এই বিচার শেষ করার তত্ত্বকে উৎসাহ জোগাবে না তো!

বিরিয়ানির কথা উঠেছিল আজমল কসাবের ফাঁসির আগেও। বিচারে তখন তাঁর চরমদণ্ড বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। তার পরেও কেন আপিলের পরে আপিলের নামে কসাবকে ফাঁসিতে চড়াতে দেরি হচ্ছে, সরকার কেন গুচ্ছের খরচ করে এমন এক ঘাতককে পুষে চলেছে, বসিয়ে বসিয়ে বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছে— বিজেপি শিবির থেকে এমন সব প্রশ্ন তোলা হতো সে সময়। ভোপাল-কাণ্ডে সেই বিরিয়ানিই যেন উঠে এল বিজেপিরই এক মুখ্যমন্ত্রীর মুখে।

কেন্দ্রের সরকার প্রথম থেকেই পাশে রয়েছে শিবরাজের। আর শিবরাজ তাঁর পুলিশের পাশে। নিহত ৮ সিমি সদস্যের প্রত্যেকেই নাশকতার মামলায় অভিযুক্ত ছিল। তাদের ৩ জন আগেও অন্য জেল থেকে পালিয়েছিল। এদের গুলি করে মারাকে সরাসরি সমর্থন করে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ। তাঁর বক্তব্য, ওদের বাঁচিয়ে রাখলে ওরা আরও বড় বিপদ ঘটাতে পারত। শুধু তা-ই নয় জেল ভাঙার বিষয়ে এনআইএ তদন্ত চাইলেও, ‘সংঘর্ষ’ নিয়ে তদন্তের ভার কিন্তু তাদের হাতে দেননি শিবরাজ। রেখেছেন রাজ্য পুলিশেরই হাতে।

জেলছুটদের কাছে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না বলে জানালেও মধ্যপ্রদেশের সন্ত্রাস দমন স্কোয়াডের প্রধান সঞ্জীব শামি তাদের গুলি করে মারার পক্ষেই সওয়াল করেছেন এ দিন। সোমবারের ওই অভিযানের পর থেকেই মধ্যপ্রদেশ পুলিশের আইজি যোগেশ চৌধুরি দাবি করে আসছিলেন, ওই জেলছুটদের হাতে বন্দুক ছিল এবং পুলিশদের দিকে তারা গুলি চালায়। বাধ্য হয়ে পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ। এবং সেই গুলির লড়াইয়ে মারা যায় সিমি সদস্যরা।

রাজ্যের জঙ্গি দমন শাখার প্রধান সঞ্জীব শামি কিন্তু আজ স্পষ্ট ভাবে বলেন, ‘‘পুলিশ বা প্রশাসন— যে যা-ই দাবি করুক, সংঘর্ষের সময় ওই ৮ জনের কাছে কোনও বন্দুক ছিল না।’’ একই সঙ্গে তাঁর যুক্তি, ‘‘ওই সিমি সদস্যরা পালাতে চাইছিল, তাই তাদের আটকাতে গুলি করা হয়েছে। বন্দুক থাক বা না থাক, ওরা ছিল কুখ্যাত অপরাধী। পুলিশ কোন পরিস্থিতিতে বলপ্রয়োগ করবে, আর কোথায় প্রাণ নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সে বিষয়ে পুলিশি আইনে বিস্তারিত বলা আছে। যদি পুলিশের মনে হয়, ওই ব্যক্তিরা পালাতে চাইছে— তখন তাদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হয়।’’ বিরোধীদের দাবি, ওই জঙ্গিদের নিকেশ করে দেওয়ার নির্দেশ ছিল পুলিশের কাছে। তাই কোমরের উপরে গুলি করা হয়েছে।

শুরু থেকেই একে ভুয়ো সংঘর্ষ বলে দাবি করেছিলেন লালুপ্রসাদ, অরবিন্দ কেজরীবাল ও বাম নেতারা। সঞ্জীব শামি আজ দুপুরে সংবাদমাধ্যমের কাছে জঙ্গিদের হাতে বন্দুক না থাকার কথা জানিয়ে দিতেই বিজেপি সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলতে হাতে অস্ত্র পান বিরোধীরা। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, ‘‘প্রমাণ হল নিরস্ত্র সন্দেহভাজনদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।’’ মধ্যপ্রদেশ ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধায়ও। টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আমরা এই সংঘর্ষের তত্ত্ব মানি না। মানুষের মনে এই সংঘর্ষ ঘিরে বহু প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা দেশের সংহতি ও ঐক্যের পক্ষে খুবই উদ্বেগজনক।’’

কংগ্রেসের আর এক মুখপাত্রের কথায়, ‘‘বন্দিদের চিকেন বিরিয়ানি খাওয়ানো নিয়ে শিবরাজ সিংহ গত কাল যে মন্তব্য করেছেন তা খুবই উদ্বেগজনক। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ভুলে যাচ্ছেন ওই ব্যক্তিরা বিচারাধীন ছিল। সাজাপ্রাপ্ত নয়। আদালতের বিচার শেষ হওয়ার আগে এ ভাবে কাউকে দোষী ঠাউরে ফেলার প্রবণতা যথেষ্ট উদ্বেগের।’’ নিহতদের পরিবারের লোকজন ও তাঁদের আইনজীবী পারভেজ আলমের দাবি, ‘‘গোটাটাই সাজানো। বন্দিরা জেল ভেঙে পাঁচিল টপকে, দরজার তালা ভাঙার যে গল্প পুলিশ শোনাচ্ছে তা আদৌও বিশ্বাসযোগ্য নয়।’’ প্রকৃত সত্য জানতে সিবিআই তদন্ত চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে নিহতদের পরিবার।

সংঘর্ষ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটাতে রাজ্য সরকার বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গড়ার কথা ঘোষণা করলেও অস্বস্তি এড়াতে পারছে না কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। ভোপালে কি ভুয়ো সংঘর্ষ হয়েছিল? এই প্রশ্নের আজ সরাসরি কোনও জবাব দেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। শুধু বলেন, ‘‘কী হয়েছিল সেই সংশয় দূর করতেই মধ্যপ্রদেশ সরকার তো তদন্তের আদেশ দিয়েছে।’’

Shivraj Singh Chouhan Biryani SIMI Terror
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy