ফাইল চিত্র।
দেশের ৬৫ বছরের বেশি বয়সের সব নাগরিকের জন্যই পোস্টাল ব্যালট চালুর সিদ্ধান্ত বাতিল করার জানাল তৃণমূল। এই দাবি জানিয়ে তৃণমূল নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠিয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, ভোটাররা কে কোথায় ভোট দিচ্ছেন, তা তাঁদের গোপন রাখার অধিকার রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে সেই ভোটের সিদ্ধান্ত গোপন রাখার অধিকার খর্ব হচ্ছে।
বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের আগে, আইন মন্ত্রক চার দিন আগেই ৬৫ বছরের উপরে সকলকে পোস্টাল ব্যালটে ভোটের সুযোগ করে দিতে নির্বাচন পরিচালনা বিধিতে সংশোধন করেছে। অক্টোবর-নভেম্বরে বিহারে ভোট। তার পরে ২০২১-এই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট। আজ তৃণমূলের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং গণতন্ত্রে সকলের সমানাধিকারের ধারণার পরিপন্থী। তা ছাড়া, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সকলের সঙ্গে কেন আলোচনা করা হয়নি, সেই প্রশ্নও তুলেছে বাংলার শাসক দল। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে পাঠানো চিঠিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী বলেছেন, ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিকের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থার সিদ্ধান্ত একেবারেই ‘একতরফা’ এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পথে অন্তরায়।
আইন মন্ত্রক সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে যুক্তি দিয়েছিল, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশনের যুক্তি ছিল, করোনা অতিমারির জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতি দেখেই ৬৫ বছরের বেশি সকলকে পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে--যাতে বয়স্কেরা ভিড়ে লাইন না দিয়েই ভোট দিতে পারেন। একই কারণে করোনা রোগী ও সংক্রমিত বলে সন্দেহভাজনদেরও পোস্টাল ব্যালট প্রয়োগের অধিকার দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ফের কি কড়া লকডাউন রাজ্যে, জল্পনা
কিন্তু করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অস্থায়ী ব্যবস্থার বদলে যে ভাবে তা পাকাপাকি করে তুলতে চাওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বক্সী। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বক্সী চিঠিতে লিখেছেন, ‘সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে। আমরা চাই, ভবিষ্যতে কেন্দ্রীয় সরকার যাতে কমিশনকে কুক্ষিগত করে না নেয়, তার জন্য কমিশন তার ক্ষমতা ও বিবেচনা ব্যবহার করুক। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমরা মনে করি, এই ধরনের সংশোধনী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই স্পষ্টত বিপন্ন করে তুলবে।’
তৃণমূলের প্রশ্ন, লোকসভা বা বিধানসভার মতো কোনও সাধারণ নির্বাচনেই অংশগ্রহণের কোনও বয়স-সীমা বাঁধা নেই। তা হলে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা বুথে গিয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না কেন? পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, রোগ সংক্রমণের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও তাতেই বরং ঝুঁকি বেশি! এই পদ্ধতিতে খরচও হবে বেশি।
তৃণমূল আরও প্রশ্ন তুলেছে, দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বর্তমানে অন্তত ১৩ জন মুখ্যমন্ত্রীর বয়স ৬৫-র উপরে। নতুন সংশোধনীর অর্থ, তাঁদের সকলকে পোস্টাল ব্যালট নিতে হবে! যে কোনও ৬৫ বছরের বেশি বয়সের প্রার্থী ভোটে দাঁড়াতে পারবেন, প্রচার করতে পারবেন কিন্তু বুথে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন না— এমন ব্যবস্থাকে ‘হাস্যকর’ বলেই অভিহিত করা হয়েছে তৃণমূলের তরফে।
কংগ্রেস এ বিষয়ে আগেই নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিল। আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেসের যুক্তি ছিল, ভোটদানে গোপনীয়তা সাংবিধানিক গণতন্ত্রের অভিন্ন অঙ্গ। দেশের অনেক মানুষ এখনও শিক্ষিত নন। পোস্টাল ব্যালট ব্যবহার করতে তাদের অন্য কারও সাহায্য নিতে হবে। ভোটারদের উপরে সংগঠিত ভাবে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো সহজ হয়ে যাবে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও কমিশনকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের কাছে নির্বাচন পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু কমিশনই সেই ক্ষমতা একতরফা ভাবে কাজে না লাগানোর উপরে জোর দিয়ে এসেছে।
জবাবে উপ-নির্বাচন কমিশনার চন্দ্রভূষণ কুমার ইয়েচুরিকে জানিয়েছিলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী কমিশন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে। করোনা পরিস্থিতির জন্যই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তার কোনও জবাব কমিশন দেয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy