Advertisement
E-Paper

একসঙ্গে থাকতে চেয়ে অসমে হলফনামা দিলেন দুই বান্ধবী

আজীবন এক সঙ্গে থাকার (লিভ ইন) অঙ্গীকার করে সম্প্রতি আদালতে হলফনামা দিয়েছেন অসমের ধুবুড়ির এই দুই কন্যা।

রাজীবাক্ষ রক্ষিত

শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:১১
আমিনা খাতুন ও গুলশারা আলি। —নিজস্ব চিত্র।

আমিনা খাতুন ও গুলশারা আলি। —নিজস্ব চিত্র।

গ্রামে পিঠোপিঠি বড় হওয়া। পরস্পরকে ছেড়ে থাকতে পারেন না।

একজন— গুলশারা আলি দুই সন্তানের জননী।

অন্য জন— আমিনা খাতুনের বয়স মাত্র ১৯। এখনও বিয়ে করেননি।

আজীবন এক সঙ্গে থাকার (লিভ ইন) অঙ্গীকার করে সম্প্রতি আদালতে হলফনামা দিয়েছেন অসমের ধুবুড়ির এই দুই কন্যা। আর তার পরেই ছি ছি রব গ্রামে। ছুটে আসে জনতা, এগিয়ে আসে বুম-ক্যামেরা! শান্তিতে থাকতে চাওয়া দুই মেয়ের সাফ কথা, তাঁরা এক সঙ্গে থাকছেন। তবে সম্পর্ক নিয়ে এর বেশি কিছু বাইরের লোকের কাছে বলবেন না। আর বলবেনই বা কেন? আইনজীবী জয়ন্তী দাস জানান, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ‘লিভ ইন’ করতে চেয়ে হলফনামা দেওয়ার ঘটনা অসমে এই প্রথম।

বালাজান পার্ট-১ গ্রামের বাসিন্দা, গুলজার আলির কন্যা গুলশারা। পাশের বালাজান পার্ট-২ গ্রামেই থাকেন আহমেদ আলির মেয়ে, আমিনা। ছোটবেলা থেকে একই সঙ্গে খেলাধুলো। আমিনা তেমন লেখাপড়া করেননি। গুলশারা সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির পর গুলশারা স-সন্তান গ্রামে ফিরলে আমিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়ে। দুই মেয়ের ঘনিষ্ঠতা যে কেউ ভাল চোখে দেখবে না, তা নিয়ে সতর্ক করা হয় দু’জনকে। আমিনার পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়াও শুরু হয়। এরই মধ্যে পালিয়ে যান দুই বন্ধু। আমিনার পরিবারের তরফে থানায় গুলশারার বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়।

আরও পড়ুন: নিজের গড়া তাজমহলে ‘মুমতাজের পাশেই’ ফের শায়িত হবেন ‘শাহজাহান’!

এই অশান্তির মধ্যেই গত সেপ্টেম্বরে ৩৭৭ ধারা নিয়ে ঐতিহাসিক রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট । সেই রায়ের কথা জানতে পারেন গুল এবং আমিনা। যোগাযোগ শুরু করেন উকিলদের সঙ্গে। স্বয়ং জেলার পুলিশ সুপার লংনিত তেরং তাঁদের পাহারা দিয়ে গ্রামে ফিরিয়ে দিয়ে যান। এ-ও সাফ জানিয়ে দেন, আইন দুই কন্যার পক্ষে। অশান্তি হলে পুলিশ মেয়েদের নিরাপত্তা দেবে।

শেষ পর্যন্ত গত ৪ অক্টোবর ধুবুড়ি আদালতে গিয়ে আমিনারা আজীবন এক সঙ্গে থাকা এবং পরস্পরের প্রতি দায়িত্ব পালন করার অঙ্গীকার করে ‘নোটারি এফিডেভিট’ করেন। তার পরে একসঙ্গে থাকা শুরু, সন্তানদের নিয়ে। গুলশারা বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের রায়েই স্পষ্ট, দু’জন মেয়ে যদি নিজেদের ইচ্ছেয়, কোনও পুরুষকে বিয়ে না করে এক সঙ্গে থাকে তাতে দোষের কিছু নেই। আইন আমাদের পক্ষে। আমরা যত দিন বাঁচব এক সঙ্গে থাকব।” আমিনার সাফ কথা, “বিয়ে করিনি। বন্ধু হিসেবে আজীবন থাকার অঙ্গীকার করেছি মাত্র। এই সম্পর্ক নিয়ে অন্যদের কাটাছেঁড়া করা নিষ্প্রয়োজন।”

অসমে রূপান্তরকামী ও সমকামী আন্দোলনের মুখ স্বাতী বিধান বরুয়া বলেন, ‘‘আইন সকলে মানতে বাধ্য। ওঁরা বিয়ে করলেও কারও কিছু বলার নেই। বরং ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে কেউ হস্তক্ষেপ করলে পুলিশের উচিত ওঁদের নিরাপত্তা দেওয়া। ধুবুড়ির আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী মাসুদ জামানের মতে, দুই বন্ধু মানসিক শান্তির জন্য হলফনামা জমা দিয়েছেন বটে, কিন্তু দুই বন্ধুর আজীবন এক সঙ্গে থাকার জন্য হলফনামার প্রয়োজন নেই। আর গৌরীপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, দুই বন্ধু নিরাপত্তার আশ্বাস চাইলে পুলিশ ব্যবস্থা করবে।

Supreme court Section 377 Guwahati গুয়াহাটি
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy