Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Uttar Pradesh

ব্রাহ্মণ ভোটে মায়ার টান কি বিজেপির চাল

ব্রাহ্মণ ভোট দখলে আনার লড়াইয়ে ‘মৌলা মুলায়ম’ নামে খ্যাত মুলায়ম সিংহ যাদবের দল এসপি অনেকটাই পিছিয়ে।

যোগী আদিত্যনাথকে বেগ দিতে ঘর গোছাচ্ছেন মায়াবতী। —ফাইল চিত্র

যোগী আদিত্যনাথকে বেগ দিতে ঘর গোছাচ্ছেন মায়াবতী। —ফাইল চিত্র

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ০৩:৫১
Share: Save:

বুলন্দশহর, নওগাঁও, দেওড়িয়া-সহ উত্তরপ্রদেশের মোট ৭টি বিধানসভা কেন্দ্রে আগামী ৩ নভেম্বরের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৈরি হচ্ছেন বিরোধীরা। হাথরস-কাণ্ড যেমন দলিত উষ্মাকে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে, তেমনই যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে চাপে ফেলতে ব্রাহ্মণদের অসন্তোষকেও কাজে লাগাতে তৎপর কংগ্রেস এবং বিএসপি। এই ব্রাহ্মণ ভোট দখলে আনার লড়াইয়ে ‘মৌলা মুলায়ম’ নামে খ্যাত মুলায়ম সিংহ যাদবের দল এসপি অনেকটাই পিছিয়ে।

কংগ্রেস বেশ কিছু দিন থেকেই ব্রাহ্মণ প্রতিনিধিদের নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে জায়গা দেওয়া শুরু করেছিল। লক্ষ্য শুধু ৭ কেন্দ্রে উপনির্বাচনই নয়, ২০২২-এর বিধানসভা ভোট। দেরিতে হলেও এ বার সেই একই পথে পা বাড়িয়েছেন দলিত নেত্রী মায়াবতী। সূত্রের খবর, ব্রাহ্মণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মায়াবতীর বিশ্বস্ত ব্রাহ্মণ নেতা সতীশ মিশ্রকে। প্রতিটি জেলায় ৫ জনের দলীয় কমিটি তৈরি করছে বিএসপি। যার মধ্যে এক জন করে ব্রাহ্মণ সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা বাধ্যতামূলক করেছেন মায়াবতী।

উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক সুত্রের মতে, যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পর ঠাকুরদের রমরমা বেড়েছে এবং বিভিন্ন পদে ব্রাহ্মণদের অবহেলা করা হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, ‘এনকাউন্টার’-এর নামে ‘ঠুকে দেওয়ার’ নীতি নিয়ে চলেছে যোগীর পুলিশ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যার শিকার হয়েছে ব্রাহ্মণেরা। ফলে ক্ষোভ তাদের চরমে। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে কংগ্রেসের মতোই তৎপর রয়েছে বিএসপি। ব্রাহ্মণ ভোট ব্যাঙ্ক কংগ্রেসের মতো সাবেকি নয় মায়াবতীর। কিন্তু এখনকার ঘোলা জলে তিনি যদি মাছ ধরতে পারেন, তা হলে দলিত, মুসলিম এবং ব্রাহ্মণ-এর মঞ্চ তৈরি করে যে ভাবে এক সময়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মায়াবতী, তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে মনে করছে তাঁর দল। যদিও ভীম আর্মির বাড়বাড়ন্তের ফলে বিএসপি-র দলিত ভোটব্যাঙ্কে কিছুটা ক্ষয় ধরেছে।

তবে এর পিছনে অন্য রাজনৈতিক অঙ্কও দেখছেন উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। এই রাজ্যে ৯০-এর দশক থেকে ব্রাহ্মণ ভোট ব্যাঙ্কের একটি অংশ বরাবর বিজেপির পক্ষে থেকেছে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ বেড়েছে। ২০০৭ সালের বিধানসভা ভোটে ব্রাহ্মণদের ৪০ শতাংশ, ২০১২-তে ৩৮ শতাংশ ভোট বিজেপি-র পক্ষে গিয়েছে। কিন্তু ২০১৪ সালে কেন্দ্রে মোদীর উত্থানের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশে বিজেপি-র ব্রাহ্মণ ভোটের ব্যাপক উত্থান দেখা গিয়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ৭২ শতাংশ ব্রাহ্মণ ভোট পেয়েছে বিজেপি। ২০১৭ সালের বিধানসভাতে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৮০ শতাংশে।

ফলে বর্তমানে যোগীর প্রতি অসন্তোষে ব্রাহ্মণ ভোটের একাংশ বিরূপ হলেও তা পুরো পাশা উল্টে দেওয়ার মতো হবে এমনটা এখনও মনে করছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। উপনির্বাচনে বিক্ষোভের প্রতিফলন দেখা গেলেও বাইশের বিধানসভার আগে পরিস্থিতি সামলে নেওয়া যাবে বলেই বিশ্বাস তাঁদের। দ্বিতীয়ত, বিক্ষুব্ধ ব্রাহ্মণ ভোট যাতে পুরোটাই কংগ্রেসের ঘরে না-গিয়ে ভাগ হয়ে যায় তার জন্য বিজেপি পরোক্ষে মায়াবতীকে কাজে লাগাচ্ছে এমন সম্ভাবনার কথাও উঠে আসছে। সংসদের বাইরে-ভিতরে মায়াবতী গত দেড় বছর কার্যত বিজেপি-র ‘বি-টিম’ হিসেবে কাজ করছেন, এমন অভিযোগ বারবার করেছে অন্যান্য বিরোধী দলগুলি। মোদী বিরোধিতায় তাঁকে উচ্চকিত হতে দেখা যায়নি। কোনও যৌথ ধরনাতেও তিনি অংশ নেননি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার জুজু দেখিয়ে তাঁকে অনেকটাই নিজেদের শিবিরে নিয়ে আসতে পেরেছে বিজেপি এমনটাই মনে করছেন রাজনীতির লোকজন। তাই মায়াবতীর ব্রাহ্মণ ভোটের জন্য ঝাঁপানোর কৌশল আসলে বিজেপির হাত শক্ত করার কৌশল কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক অন্দরমহলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uttar Pradesh Mayawati BSP SP BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE