Advertisement
E-Paper

পাইলট ইচ্ছাকৃত ভাবে এসি প্যাক বন্ধ করবেন না, তিনিও তো কষ্ট পাচ্ছিলেন

 সব বড় যাত্রিবাহী বিমানে দু’টি এসি প্যাক থাকে। ইঞ্জিন থেকে শক্তি নিয়ে সেগুলো চলে। এসি প্যাকের সাহায্যেই বিমানের ভিতরে বায়ুচাপ ধরে রাখা হয়।

জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫৫
জেট এয়ারওয়েজ এর বিমান। ফাইল চিত্র।

জেট এয়ারওয়েজ এর বিমান। ফাইল চিত্র।

সব বড় যাত্রিবাহী বিমানে দু’টি এসি প্যাক থাকে। ইঞ্জিন থেকে শক্তি নিয়ে সেগুলো চলে। এসি প্যাকের সাহায্যেই বিমানের ভিতরে বায়ুচাপ ধরে রাখা হয়।

বিমান মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকার সময়ে এসি চলে বাইরে থেকে অক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিট (এপিইউ)-এর সাহায্যে। আমরা ককপিটে গিয়ে দু’টো ইঞ্জিন ‘অন’ করি। এসি প্যাক ইঞ্জিন থেকে অনেকটাই শক্তি টেনে নেয় বলে প্রতিবার ‘টেক অফ’-এর সময়ে এসি প্যাক দু’টি নিজের হাতে বন্ধ করে দিই। কারণ, তখন ইঞ্জিনের অনেক বেশি শক্তি লাগে।

টেক অফ-এর পরে বিমান যখন ৫০০ ফুট উপরে উঠে যায়, তখন প্রথম এসি প্যাক এবং ১ হাজার ফুটে গিয়ে দ্বিতীয় এসি প্যাক চালু করা হয়। নিজের হাতেই প্যাক চালু করতে হয় বলে কখনও দ্বিতীয় প্যাক চালু করতে ভুলেও যান পাইলটেরা। গড়ে ১০০টা টেক-অফে বার দু’য়েক সেটা হয়। দ্বিতীয় প্যাক ‘অফ’ থাকলে ২ হাজার ফুট উপরে গিয়ে ককপিট সতর্কবার্তা দেয়। তখন ‘অন’ করা হয়।

বিমান যত উপরে ওঠে, ততই বাইরের বায়ুচাপ কমতে থাকে। বিমান ৪০ হাজার ফুট উপরে উঠে গেলেও তার কেবিনের বায়ুচাপ এমন ভাবে ধরে রাখা হয়, যাতে ভিতরে বসে মনে হয় বিমানটি ৮ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়ছে। বিমান তৈরিই হয় এমন ভাবে। কারণ, ওই ৮ হাজারই সর্বোচ্চ উচ্চতা, যেখানে মানুষ স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে। দূরপাল্লার বিমান ছাড়া ৪০ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় আমরা উড়িও না।

তাই, যদি কোনও কারণে বিমানের দু’টি এসি প্যাকই বিকল হয়ে যায়, তা হলে কেবিনের ভিতরে বায়ুচাপ ঠিক রাখতে, বিমানকে ওই ৮ হাজার ফুটের উপরে তোলা যাবে না। যদি ধরে নিই, টেক-অফ করার পরেই যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য দু’টি এসি প্যাক চালু হল না, তা হলে নিয়ম মতো বিমান নিয়ে ৩ হাজার, ৪ হাজার উচ্চতায় উড়ে যেতে হবে। বার বার চেষ্টা করে দেখতে হবে এসি প্যাক ‘অন’ হচ্ছে কিনা। তাতেও না হলে নিকটবর্তী কোনও বিমানবন্দরে নেমে আসতে হবে। তখন কেবিনের ভিতরে এসি কাজ করবে না। যাত্রীদের গরম লাগতে পারে। কিন্তু বায়ুচাপের জন্য রক্তক্ষরণ হবে না।

তবে বিমান যখন ৪০ হাজার ফুট বা তার কাছাকাছি উচ্চতায় রয়েছে, সেই সময়ে আচমকা দু’টি এসি প্যাক বিগড়ে গেলে বিপদ। সম্ভবত জেট এয়ারওয়েজের মুম্বই-জয়পুর উড়ানে তা-ই হয়েছে। পাইলট কখনও ইচ্ছাকৃত ভাবে এসি প্যাক বন্ধ করবেন না। কারণ যে কষ্টটা যাত্রীদের হয়েছে, সেই একই কষ্ট পাইলটদেরও পেতে হবে। জেট-এর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। হয়তো আমরা নিয়মিত উড়ে বেড়াই বলে, এই বায়ুচাপের হেরফের আমাদের শরীরকে যতটা কাবু করবে, তার চেয়ে ঢের বেশি কাবু করবে আর দশটা সাধারণ মানুষকে।

অত উপরে দু’টি এসি প্যাক বিগড়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব বিমান নিয়ে নীচে নেমে আসতে হবে। কারণ এসি প্যাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ, কেবিনের ভিতরে যে ৮ হাজার ফুট উচ্চতার বায়ুচাপ ধরে রাখা হয়, তা বাড়তে শুরু করা। সেই বায়ুচাপ ১৪ হাজার ফুট উচ্চতার সমান হলে অক্সিজেন মাস্ক আপনাআপনি নেমে আসবে। জেট-এর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। যতক্ষণ না বিমান নিয়ে পাইলট ৮ হাজার ফুটে নেমে আসবেন, তত ক্ষণ অস্বস্তি বাড়তেই থাকবে।

একসঙ্গে দু’টি এসি প্যাক খারাপ হয়ে যাওয়ার ঘটনা বিরল। মুম্বই-জয়পুর উড়ানের খবর শুনে তাই বেশ অবাকই হয়েছি।

Mid Air Disaster Jet Airways AC Pack Pilot
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy