কথায় বলে শকুনের চোখ! কিন্তু, ইদানীং সেই চোখ আর ভাগাড় খোঁজে না। কারণ, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায় ঢুকে পড়েছে শকুনের নাম।
এতে পরিবেশের ভারসাম্য তো নষ্ট হয়েইছে, হচ্ছেও। পাশাপাশি, এক সম্প্রদায়ের মানুষের দীর্ঘদিনের এক সামাজিক প্রথাও নিশ্চিহ্ন হওয়ার মুখে।
কী রকম?
মুম্বইয়ের ধনী ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম কায়কোবাদ রুস্তোমফ্রাম। পার্সি ধর্মাবলম্বী মানুষ ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা গিয়েছেন। পার্সি প্রথা অনুযায়ী মৃত্যুর পর কোনও ব্যক্তির দেহ টাওয়ার অব ডেথ-এ রাখা হত। সেখানে শকুনেরা মৃতের শরীরের মাংস খুবলে খেয়ে নিঃশেষ করত। রুস্তোমফ্রামও আজন্ম সেই ইচ্ছেই লালন করে এসেছেন। কিন্তু, তাঁর শেষ ইচ্ছে অপূর্ণই রয়ে গেল। শকুনের দেখা পাওয়াই তো ভার। তাই শেষ পর্যন্ত হিন্দুদের মতো মুম্বইয়ের এক শ্মশানে আগুনে পোড়ানো হল বছর নব্বইয়ের রুস্তোমফ্রামের দেহ। অথচ, আগুন পার্সিদের কাছে ভীষণই পবিত্র। তাতে দেহ ছোঁয়ানো প্রথা না মানারাই সমান। কিন্তু, উপায় নেই যে!
জরথুষ্ট্র পন্থী বা পার্সি ধর্মাবলম্বীদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এই প্রথা বহু পুরনো। অনেক আগে মৃতদেহ রেখে আসা হত উঁচু কোনও পাহাড়ের উপর। সেখানে শকুনেরা মৃতদেহ খুবলে খেত। পড়ে থাকা হাড় শুকিয়ে যাওয়ার পর বিশেষ পদ্ধতিতে সেগুলো কুয়োয় জলে ফেলে অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হত। এমনটাই হয়ে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে। কিন্তু, দিন দিন শকুনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। কাজেই ভারতে বসবাসকারী পার্সিরা হিন্দুদের মতো মৃতদেহ আগুনে পুড়িয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দিকে ঝুঁকছেন।
নব্বই দশকের শুরু থেকে ভারতে হু হু করে শকুনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ব্যাপারটা ক্রমশ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। পরিসংখ্যান বলছে, শকুনের সংখ্যা প্রায় ৯৯ শতাংশ কমে গিয়েছে। কাজেই এক দিকে শকুনের সংখ্যা যেমন কমছে, তেমনই ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতিও। আর প্রকৃতির পাশাপাশি সে প্রভাব পড়ছে সামাজিক প্রথাতেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy