Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Science News

হিমবাহই থাকবে না আর আগামী শতাব্দীতে! বলছে গবেষণা

সিন্ধু ও গঙ্গোত্রীর মতো হিমালয়ের বিশাল বিশাল হিমবাহগুলির প্রায় প্রত্যেকটিই গলে গিয়ে তৈরি করছে সুবিশাল হ্রদ। যা লাগোয়া এলাকাগুলিতে বিধ্বংসী বন্যার আশঙ্কাকে জোরালো করে তুলেছে। ভয়াবহ অবস্থা ভারত, নেপাল, চিন-সহ দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির প্রত্যেকটি বড় হিমবাহের। সকলেরই বরফ গলে যাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত হারে।

দ্রুত গলে যাচ্ছে হিমবাহ। ছবি- এএফপি

দ্রুত গলে যাচ্ছে হিমবাহ। ছবি- এএফপি

সুজয় চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:৫১
Share: Save:

চার দিক থেকেই অশনি সঙ্কেত! আসছে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের খবর! শুধুই যে হিন্দুকুশ হিমালয় গলে যাচ্ছে তা নয়। গত ৫৫ বছরে সাড়ে ৯ লক্ষ কোটি টনেরও বেশি (৯ হাজার ৬২৫ গিগাটন) বরফ গলে গিয়েছে বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তের হিমবাহের। যা সমুদ্রের জলস্তরকে ঠেলে উপরে তুলে দিয়েছে অন্তত ২৭ মিলিমিটার। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, কোনও হিমবাহই থাকবে না আগামী শতাব্দীতে।

আরও উদ্বেগজনক খবর, সিন্ধু ও গঙ্গোত্রীর মতো হিমালয়ের বিশাল বিশাল হিমবাহগুলির প্রায় প্রত্যেকটিই গলে গিয়ে তৈরি করছে সুবিশাল হ্রদ। যা লাগোয়া এলাকাগুলিতে বিধ্বংসী বন্যার আশঙ্কাকে জোরালো করে তুলেছে। ভয়াবহ অবস্থা ভারত, নেপাল, চিন-সহ দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলির প্রত্যেকটি বড় হিমবাহের। সকলেরই বরফ গলে যাচ্ছে অত্যন্ত দ্রুত হারে।

এই উদ্বেগজনক তথ্য দিয়েছে একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদল। যাদের আলোড়ন ফেলা গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল 'নেচার'-এ। গত ৮ এপ্রিল সংখ্যায়।

আগামী শতাব্দীতে আর হিমবাহ থাকবে না?

গবেষণা জানিয়েছে, উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গোটা বিশ্বের হিমবাহগুলি যে হারে গলতে শুরু করেছে, বিশেষ করে, গত ৩০ বছর ধরে, তাতে আগামী শতাব্দীতে পৃথিবীর কোনও প্রান্তেই আর কোনও হিমবাহ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

দ্রুত গলছে আন্দিজ পর্বতমালার হিমবাহ। ছবি- এএফপি

সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই অধ্যাপক মাইকেল জেম্প ও ফ্র্যাঙ্ক পলের নেতৃত্বাধীন ওই আন্তর্জাতিক গবেষকদলে রয়েছেন অনাবাসী ভারতীয় দুই বিজ্ঞানীও। এক জন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্ঘ্য মিত্র। অন্য জন জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অর্জুন বেঙ্কটেশ্বরণ।

গবেষণাটি চালানো হয়েছে ১৯৬১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সব প্রান্তে যত বড় বড় হিমবাহ রয়েছে, গত ৫৫ বছর ধরে তার সবক'টির উপর নজর রেখে চলা উপগ্রহগুলির পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে।

হিমালয়, আলাস্কা, আন্দিজ, আল্পস পর্বতমালার হিমবাহ গলছে দ্রুত হারে!

আনন্দবাজার ডিজিটালের পাঠানো প্রশ্নের ই-মেল জবাবে জুরিখ থেকে অন্যতম গবেষক অধ্যাপক অর্ঘ্য মিত্র লিখেছেন, "আমরা দেখেছি, এটা শুধুমাত্র বিশেষ কোনও অঞ্চলের সমস্যা নয়। গোটা বিশ্বেই গত ৫৫ বছরে বড় বড় হিমবাহগুলি অত্যন্ত দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে। উপগ্রহগুলির পাঠানো তথ্যাদি জানিয়েছে, হিমবাহগুলি সবচেয়ে বেশি দ্রুত হারে গলছে আলাস্কায়। তার পরেই রয়েছে গ্রিনল্যান্ড। সেখানকার পুরু, সুবিশাল বরফের চাঙরগুলির ধার থেকে যে বিশাল বিশাল হিমবাহগুলির জন্ম, সেগুলি খুব দ্রুত হারে গলে গিয়েছে গত অর্ধশতাব্দীতে। অত্যন্ত দ্রুত হারে গলে যাচ্ছে আন্দিজ পর্বতমালার দক্ষিণ দিক থেকে বেরিয়ে আসা হিমবাহগুলিও। এ ছাড়াও, হিমবাহের বরফ খুব দ্রুত হারে গলছে কানাডা ও রাশিয়ার আর্কটিক এলাকায়, স্বালবার্ডেও। আর ওই সবক'টি অঞ্চলের গলে যাওয়া হিমবাহই সাগর ও মহাসাগরগুলির জলস্তর উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।"

এই ভাবে হিমবাহ গলে যাচ্ছে আন্টার্কটিকায়। দেখুন নাসার অ্যানিমেশন

সুবিশাল হিমবাহ রয়েছে, বিশ্বের এমন ১৯টি অঞ্চলের উপর চালানো ওই গবেষণা এও জানিয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলির মধ্যে একমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুবিশাল হিমবাহগুলিতেই গত অর্ধশতাব্দীতে বরফের পরিমাণ বেড়েছে। আর বরফের পরিমাণ উদ্বেগজনক ভাবে অত্যন্ত দ্রুত হারে কমেছে হিমবাহ প্রধান ১৭টি অঞ্চলে।

অত্যন্ত দ্রুত হারে গলছে আলাস্কার হিমবাহ। ছবি- এএফপি

ভারত-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হিমবাহ গলছে বেশি দ্রুত হারে!

পুণের 'ন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যান্টার্কটিক অ্যান্ড ওশন রিসার্চ' (এনসিএওআর)-এর অধিকর্তা এম রবিচন্দ্রন জানিয়েছেন, এই গবেষণার সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় দিকটা হল, গত অর্ধশতাব্দীতে যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবক'টি হিমবাহের মোট বরফ গলেছে ১১২ গিগাটনেরও বেশি, তখন দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ হিমবাহে বরফের পরিমাণ মোট বেড়েছে ১১৯ গিগাটন (এর গিগাটন বলতে বোঝায় ১ লক্ষ কোটি টন)।

অর্ঘ্যের কথায়, উষ্ণায়নের প্রভাব তুলনামূলক ভাবে কম পড়েছে যে সব এলাকায়, সেই ইউরোপের দিকে থাকা আল্পস পর্বতমালা ও ককেশাস পর্বতমালারও প্রায় সবক'টি হিমবাহই খুব দ্রুত হারে গলে গিয়েছে গত ৫৫ বছরে। তবে তা সাগর, মহাসাগরের জলস্তরের উচ্চতা বাড়াতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়নি।

কেন এত দ্রুত গলে যাচ্ছে হিমবাহ? কী বলছে নাসা?

আরও পড়ুন- অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে ফের হবে মহাপ্লাবন! হুঁশিয়ারি বিজ্ঞানীদের​

আরও পড়ুন- ৮০ বছরে গলে যাবে হিমালয়ের অর্ধেক বরফ! শুকিয়ে যাবে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র!​

গবেষণা চালানো হয়েছে বিশ্বের মোট ১৯ হাজার হিমবাহের উপর। গবেষকরা দেখিয়েছেন, বিশেষ করে ১৯৮৬ থেকে ২০১৬, এই ৩০ বছরে, বিশ্বের প্রায় সব প্রান্তের হিমবাহগুলির গলে যাওয়ার গতি বেড়ে গিয়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে।

বছরে সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টন বরফ গলছে হিমবাহের...

আনন্দবাজার ডিজিটালের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে মূল গবেষক মাইকেল জেম্প ই-মেলে বলেছেন, "বিশ্বে এক বছরে গড়ে ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি টন করে বরফ গলে যাচ্ছে হিমবাহগুলির। যার ফলে, সাগর, মহাসাগরের জলস্তর উপরে উঠছে বছরে গড়ে ১ মিলিমিটার করে। ইউরোপের আল্পস পর্বতমালায় হিমবাহগুলিতে যত বরফ রয়েছে, ফিবছর, তার তিন গুণ বরফে বিশ্বের বিভিন্ন হিমবাহ থেকে গলে জল হয়ে যাচ্ছে। তার ফলে, সমুদ্রের জলস্তর ৩০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে গত ৩০ বছরে।"

ভয়ঙ্কর ভাবে গলে যাচ্ছে হিন্দুকুশ হিমালয়ের হিমবাহ। ছবি- এএফপি

দিনকয়েক আগে নাসার একটি গবেষণা জানিয়েছিল, উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বে সমুদ্রের জলস্তর ফিবছর গড়ে বাড়ছে ৩ মিলিমিটার করে।

বিশিষ্ট হিমবাহ বিশেষজ্ঞ এম রবিচন্দ্রন জানাচ্ছেন, এর ফলে আর কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বের কয়েকটি দেশের বড় ও মাঝারি সব হিমবাহই গলে জল হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে রয়েছে পেরু ও ভেনেজুয়েলার মতো দেশ। ভেনেজুয়েলায় আর একটি হিমবাহই পড়ে রয়েছে, যা এখনও পুরোপুরি গলে যায়নি। হিমবাহটির নাম- 'পিকো হামবোল্ট'।

ভিডিয়ো সৌজন্যে : নাসা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE