Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Science News

খাবার নুন মিলল বৃহস্পতির চাঁদে, রয়েছে আমাদের মতোই মহাসাগর, জানাল নাসা

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন, ইউরোপা অনেকটা তালশাঁসের মতো। তার ভিতরে রয়েছে বিশাল বিশাল সাগর, মহাসাগর। কিন্তু সেগুলি কীসে ভরা, তা নিয়ে সংশয় ছিল বিজ্ঞানীদের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৯ ১৩:১৪
Share: Save:

এ বার খাবার নুনও মিলল এই সৌরমণ্ডলের অন্য কোনও গ্রহে। এই প্রথম। আর তা মিলল এই সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বড় গ্রহ বৃহস্পতির অনেকগুলি চাঁদের একটি- ইউরোপায়। তার ফলে, আরও নিশ্চিত হওয়া গেল, পৃথিবীর মতোই লবণাক্ত তরল জলের বিশাল বিশাল সাগর, মহাসাগর রয়েছে বৃহস্পতির ওই চাঁদে। ভেসে যাচ্ছে ইউরোপা আমাদের মতোই সমুদ্রের জলে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আগেই আঁচ করতে পেরেছিলেন, ইউরোপা অনেকটা তালশাঁসের মতো। তার ভিতরে রয়েছে বিশাল বিশাল সাগর, মহাসাগর। কিন্তু সেগুলি কীসে ভরা, তা নিয়ে সংশয় ছিল বিজ্ঞানীদের। কারও ধারণা, সেই সাগর, মহাসাগরগুলি ভরা তরল জলে। কারও-বা ধারণা, সেগুলি ভরা মিথেন বা ইথেনের মতো তরল হাইড্রোকার্বনে।

কিন্তু খাবার নুন বা সোডিয়াম ক্লোরাইডের হদিশ মেলায় এ বার অনেক বেশি নিশ্চিত হওয়া গেল, বৃহস্পতির একটি চাঁদ ইউরোপার পিঠের (সারফেস) তলায় যে বিশাল বিশাল সাগর ও মহাসাগরগুলি রয়েছে, সেগুলি ভরা রয়েছে জলেই। সেখানকার সাগর, মহাসাগরগুলিও আমাদের পৃথিবীর মতোই। কারণ, আমাদের সামুদ্রিক লবণেও যথেষ্ট পরিমাণে থাকে সোডিয়াম ক্লোরাইড।

বৃহস্পতির চাঁদে তরল জলের সাগর, মহাসাগর, দেখুন ভিডিয়ো

কোথায় নুনের দেখা মিলল বৃহস্পতির চাঁদে?

দৃশ্যমান আলোর বর্ণালি বিশ্লেষণ করেই এই তথ্য পেয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (ক্যালটেক) ও পাসাডেনায় নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির (জেপিএল) বিজ্ঞানীরা। ইউরোপার পিঠের যে জায়গায় ওই হলুদ ছোপ দেখা যায়, সেগুলি আসলে বৃহস্পতির ওই চাঁদে খাবার নুন বা সোডিয়াম ক্লোরাইডের অস্তিত্বেরই সবচেয়ে বড় প্রমাণ। ইউরোপার ওই জায়গাটির নাম- ‘তারা রেজিও’। গবেষণাপত্রটি বুধবার ছাপা হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’-এ। গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘সোডিয়াম ক্লোরাইড অন দ্য সারফেস অফ ইউরোপা’।

আরও পড়ুন- জলে ভাসছে বৃহস্পতি-শনির চাঁদ, প্রাণ মিলতে পারে এনসেলাডাস-এ​

আরও পড়ুন- বৃহস্পতির চাঁদে প্রাণ আছে? বাঙালির চোখে খুঁজে দেখবে নাসা​

স্পষ্ট না বলতে পারলেও ইঙ্গিত দিয়েছিল ভয়েজার, গ্যালিলিও

বেশ কয়েক বছর আগে ইউরোপার পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় নাসার দু’টি মহাকাশযান ‘ভয়েজার’ ও ‘গ্যালিলিও’ প্রচুর ছবি তুলেছিল ইউরোপার। সেই সব ছবি খতিয়ে দেখে বিজ্ঞানীরা কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলেন, বৃহস্পতির ওই চাঁদের অন্তরে, অন্দরে রয়েছে বিশাল বিশাল সাগর ও মহাসাগর। তাঁদের মনে হয়েছিল সেগুলি ভরা রয়েছে লবণাক্ত তরল জলে। সেই সব সাগর আর মহাসাগরের গাত্রটা পুরু বরফে মোড়া। অনেকটা যেন তালশাঁস! তবে সেই নুনটা কী, তার গঠন কী ধরনের, তা সেই সময় বুঝতে পারেননি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। গ্যালিলিও মহাকাশযানের পাঠানো ছবি ও তথ্য থেকে বিজ্ঞানীদের ধারণা হয়েছিল, সেই নুন হতেও পারে ম্যাগনেসিয়াম সালফেট নুন। যা আদতে আমাদের এপসম লবণ।

নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ইউরোপার সাগর ও মহাসাগরগুলিতে জল রয়েছে যে পুরু বরফের ধারকে, তার বয়স কিন্তু খুব বেশি নয়। এমন নয়, তা কয়েকশো কোটি বছরের পুরনো। আর সেই বরফের স্তর সময়ে সময়ে যে বদলে যাচ্ছে, তারও প্রমাণ মিলেছে। যার মানে, এখনও সেখানকার প্রাকৃতিক গঠন বদলাচ্ছে। যা ইউরোপার সজীবতারই লক্ষণ। যাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে, ‘জিওলজিক্যালি অ্যাক্টিভ’। তখনই আমাদের মনে হয়েছিল, ইউরোপার সাগর, মহাসাগরে যে লবণাক্ত তরল জল রয়েছে, তার নুনটা এক সময় ছিল সেই সাগর, মহাসাগরগুলির তলায়। প্রাকৃতিক গঠনের পরিবর্তনের ফলে সেটা পরে উঠে এসেছে উপরে।’’

কেন নাসার আগের মহাকাশযানের চোখে পড়ল না সেই নুন?

জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই প্রথম দৃশ্যমান আলোর বর্ণালিতে দেখা হয়েছে ইউরোপার সেই সাগর ও মহাসাগরগুলিকে। এই ধরনের স্পেকট্রোমিটার ছিল না গ্যালিলিও মহাকাশযানে। সেখানে ছিল নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার। যাতে কোনও ক্লোরাইড লবণেরই গঠন বা ধর্ম বোঝা সম্ভব নয়। এ বার হাব্‌ল স্পেস টেলিস্কোপ দিয়েই এটা দেখা গিয়েছে। তবে যে প্রকৌশলে এর হদিশ পাওয়া সম্ভব হয়েছে, তার কথা আগে কেউ ভেবেও দেখেননি।’’

ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE