E-Paper

খালেদা-পুত্রের সম্বল নয়াদিল্লির বন্ধুত্ব, মুক্তিযুদ্ধও

সব ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় নামছেন তারেক। ব্রিটেনে বসে বুধবার তিনি নিজেই সে কথা ঘোষণা করেছেন। এমন একটা সময়ে বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,যখন তাঁর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়।

অনির্বাণ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:২৯
তারেক রহমান।

তারেক রহমান। — ফাইল চিত্র।

মুক্তিযুদ্ধ এবং ভারতকে পুঁজিকরে প্রায় দেড় যুগ পরে দেশের মাটিতে পা রাখতে চলেছেন খালেদা জিয়া পুত্র তথা বিএনপি-রভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। দিন দুয়েক আগে ব্রিটেনের এক সভায় তারেক যে ভাবে বার বারমুক্তিযুদ্ধের কথা উল্লেখ করে স্বাধীনতা-বিরোধী শক্তিকে নিশানা করেছেন, তা থেকেই স্পষ্ট তাঁর রাজনৈতিক অভিমুখ। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, মুক্তিযুদ্ধকে সামনে রেখে খালেদা-পুত্র এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছেন। এক, দেশের বিরাট সংখ্যক স্বাধীনতার সমর্থক মানুষকে পাশে পাওয়ার চেষ্টা। দুই, ভারতকে বার্তা দেওয়া।

সব ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ঢাকায় নামছেন তারেক। ব্রিটেনে বসে বুধবার তিনি নিজেই সে কথা ঘোষণা করেছেন। এমন একটা সময়ে বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন,যখন তাঁর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়। ভোট ময়দানে নেই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। সেই সুযোগে জমি দখলে তৎপর জামায়াতে ইসলামীর মতো কট্টরপন্থী দল। লন্ডনের ‘দ্য সিটি প্যাভেলিয়ন’ হলে মঙ্গলবার এক আলোচনাসভায় তিনি বলেছেন, ‘‘১৯৭১ সালে যারাষড়যন্ত্র করেছিল, ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে, ১৯৯৬ সালে এবংপরবর্তী সময়ে যারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তারাই আজও সক্রিয়।’’ কূটনীতিকেরা মনে করছেন, তারেকের বার্তা স্পষ্ট, দেশ-বিরোধী,মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী কোনও শক্তির সঙ্গে আপস নয়। অর্থাৎ অতীতে জামাতের সঙ্গে বিএনপি জোট করলেও এ যাত্রা তার কোনও সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশের এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের কথায়, ‘‘বিএনপির পরিচিতি জিয়া-উর রহমানেরদল হিসেবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধেরপ্রথম সারির সেনানী। তাইবিএনপি-র সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের যোগ টেনে দেশের মুক্তমনা, মুক্তিযুদ্ধের বিরাট সংখ্যক সমর্থককে কাছেটানতে চান তারেক। ময়দানে আওয়ামী লীগ নেই, তাই জামাতের মোকাবিলা করার একমাত্র শক্তি হিসেবে বিএনপি-কে তুলে ধরতে চাইছেন খালেদা-পুত্র।’’

নভেম্বরে সমাজমাধ্যমে তারেক লিখেছিলেন, এখনই দেশেফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তাঁর জন্য অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। অনেকেরই প্রশ্ন, দিন পনেরো-আঠারোর মধ্যে এমন কী হল যে,তিনি দেশে ফেরার কথা ঘোষণা করলেন? বাস্তব হল, নয়াদিল্লির সমর্থন অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছেন বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিএনপি ক্ষমতায় এলে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে চুক্তিগুলি রয়েছে, তাতে কোনও প্রভাব পড়বে না এবং বাংলাদেশের মাটিকে কোনও ভাবে ভারত-বিরোধী কাজে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না, এই মর্মে প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছে তারেকে কাছ থেকে। ভারতের গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, ঢাকাকে পাশে পেতে নয়াদিল্লিরও দরকার বিএনপি-কে। কারণ, কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ হওয়ায় ভোটে লড়তে পারছে না আওয়ামী লীগ। তাই বাংলাদেশে কট্টরপন্থীদের বাড়বাড়ন্ত আটকাতে পারে একমাত্র বিএনপি। নির্বাচনের মাধ্যমেখালেদার দল ক্ষমতাসীন হলে, বাংলাদেশে ভারত-বিরোধীতৎপরতায় রাশ টানা যাবে।তাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য থাকা সত্ত্বেও, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হিসেবে তারেকের পাশে থাকতেহচ্ছে নয়াদিল্লিকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tarique Rahman Bangladesh Situation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy