একটি অনুষ্ঠানে সুচিত্রা মিত্রের সঙ্গে
এঁরা সকলেই ছিলেন অত্যন্ত পণ্ডিত ও প্রতিভাধর মানুষ। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পরে আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতিমান ‘রবীন্দ্রনাথ টেগর’-এর ডাকে সাড়া দিয়ে এঁদের সঙ্গেই একে একে শান্তিনিকেতনে আসতে শুরু করেছিলেন এন্ড্রুজ, পিয়ারসন, এলমহার্স্ট, সিলভা লেভি, উইন্টানিজের মতো আরও অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি। মোহর হয়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সময়কালটি ছিল শান্তিনিকেতনের ইতিহাসের স্বর্ণযুগ। কণিকা নিজেই লিখে গিয়েছেন, ‘শান্তিনিকেতনে থাকার সুবাদে আমাদের কত বড়ো বড়ো লোকেদের সঙ্গে, জ্ঞানী-গুণীদের সঙ্গে পরিচয় ছিল। গান্ধিজি, নেহরু, সরোজিনী নাইডু, গুরুদেবের বিদেশি বন্ধু এলম্হার্স্ট, এন্ড্রুজসাহেব এবং আরও অনেককেই জানতাম নিজের লোক বলে।’ তিনি এই সব মানুষের সাহচর্য ও ভালবাসায় শান্তিনিকেতনের ‘আশ্রমকন্যা’ হয়ে ঘুরে বেড়াতেন তাঁর আশ্চর্য কণ্ঠস্বরে রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে।
আশ্রমকন্যা
ক্ষিতিমোহন সেনের মেয়ে অমিতা, যিনি ওই একই সময়ে গুরুপল্লীর বাসিন্দা ছিলেন, তাঁর লেখায় আছে, ‘বাড়ির জানলা দিয়ে কতদিন দেখেছি মাঠের মধ্যে দিয়ে মোহর ছুটছে গুরুদেবের কাছে। রাস্তা দিয়ে যেত না, পাছে দেরি হয়ে যায়। মাঠের কাছে একটা বনপুলকের গাছ ছিল। বসন্তে ফুল ফুটলে গন্ধে চারদিক ভরে উঠত। তার তলা দিয়ে মোহর দৌড়োচ্ছে, তাড়াতাড়িতে ফ্রকের পিঠের সব বোতামও হয়তো লাগানো হয়নি।’
এই ছবি শান্তিনিকেতন আশ্রমের বাইরে আর কোথাও সম্ভবই হত না। মোহরের লেখায় আছে, ‘পড়াশুনার সঙ্গেই নাচ-গান-খেলা-ছবি আঁকা শিখেছি। ...প্রকৃতির সঙ্গে ছিল আমাদের আত্মিক যোগ। পাখির ডাক শুনে বুঝতাম কোন পাখি ডাকছে। কোন প্রজাপতি কোন গুটিপোকা থেকে হয়েছে... গাছপালার সঙ্গেও তাই ছিল আমাদের অচ্ছেদ্য সম্পর্ক। আর নানা ঋতুতে নানা ফুল আমাদের মনটাকে সবসময় রাঙিয়ে রাখত।’ এই ভাবেই প্রকৃতি ও রবীন্দ্রনাথের স্নেহ, ভালবাসায় মোহর বড় হয়ে উঠেছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের সান্নিধ্য ও গান
“গুরুদেবের সান্নিধ্য পেয়েছি সেই থেকেই। যখনই ওঁর কাছে যেতাম তখনই উপহারস্বরূপ হাতে এসে যেত লজেন্স বা বাদাম। আমার নানা দেশের স্ট্যাম্প জমানোর নেশা ছিল। রোজই প্রায় তাঁর কাছে যেতাম স্ট্যাম্প নিতে,” স্মৃতিচারণা মোহরের। তাঁকে গড়ে তোলার প্রসঙ্গে মোহর জানিয়েছেন, “আমার গানের দিকে নজর পড়েছিল স্বয়ং গুরুদেবের। আমি গান শিখতে যেতাম দিনুদার (দিনেন্দ্রনাথ) কাছে। তাঁর সেই বিরাট চেহারা। আমরা তাঁর ঘাড়ে-পিঠে চেপেই গান শিখেছি... শান্তিদা চিনা ভবনের কাছে এক টিনের ঘরে আমাদের গানের ক্লাস নিতেন। আর ছিলেন শৈলজাদা। গুরুদেব সবসময়েই শৈলজাদাকে বলতেন আমার গানের দিকে নজর দিতে।” শৈলজারঞ্জন মজুমদার, রবীন্দ্রনাথ ও দিনেন্দ্রনাথের কাছ থেকেই গান গাওয়ার তালিম নিয়েছিলেন মোহর। যদিও শৈলজারঞ্জন বিশ্বভারতীতে যুক্ত হয়েছিলেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে। পরে তিনি সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ হন রথীন্দ্রনাথের প্রচেষ্টায়। কণিকা তাঁর সঙ্গীত শিক্ষার গুরু হিসেবে যাঁর নাম উল্লেখ করে গিয়েছেন, তিনি হলেন বিশ্বভারতীর শৈলজারঞ্জন।
শান্তিনিকেতনের যে সাঙ্গীতিক পরিবেশ ছিল, সেখানে বিষ্ণুপুরের প্রভাব পড়েছিল। বিষ্ণুপুর থেকে অনেক প্রখ্যাত গাইয়ে ও বাজিয়ে শান্তিনিকেতনে এসেছেন ও মিশে গিয়েছেন সেখানকার জীবন যাপনের সঙ্গে। রমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়, অনাদিনাথ দত্তরা শান্তিনিকেতনের সঙ্গীতভবনকে ঋদ্ধ করে তুলেছিলেন। এঁরা ছিলেন শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রগানের পরিবেশ বা ঘরানার অপরিহার্য ব্যক্তিত্ব। সেই ঘরানাই কণিকাকে তাঁর পূর্ববর্তী অমিয়া ঠাকুর, রমা কর, অমিতা সেনদের রবীন্দ্রগানের ধারার স্বয়ংসম্পূর্ণ এক প্রতিনিধি হিসেবে গড়ে তুলেছিল। প্রসঙ্গত তাঁর মতোই ওই ধারার আরও যে ক’জন প্রতিনিধির নাম করতে হয়, তাঁরা সেবা মিত্র, সুচিত্রা মিত্র, নীলিমা সেন, অরুন্ধতী গুহঠাকুরতা, আরতি বসু প্রমুখ।
কৈশোর ছাড়িয়ে বড় হয়ে উঠতে উঠতে মোহর ক্রমশ শান্তিনিকেতনের পাঠভবন, শিক্ষাভবন পাশ করে সঙ্গীতভবন থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত ও ভারতীয় মার্গসঙ্গীত নিয়ে ডিগ্রি পান ১৯৪৩ সালে। এরই মধ্যে মোহর যেমন রবীন্দ্রনাথের কাছে অপরিহার্য এক গায়িকা হয়ে উঠেছিলেন, তেমনই রবীন্দ্রনাথও মোহরের জীবনে এক বড় নির্ভরতার জায়গা নিয়েছিলেন। তাঁর গুরুদেবের কাছে মোহর যখন-তখন হাজির হতে পারতেন। আবার গান শেখার জন্য রবীন্দ্রনাথের ডাক আসত দিনের যে কোনও সময়ে। শিক্ষকদের কাছে বকুনি খেয়ে ক্রুদ্ধ মোহরের নালিশ জানানোর মানুষটিও ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
কিশোরী মনের বিক্ষুব্ধতায় অশ্রুসজল নেত্রের মোহরকে প্রবোধ দিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সদ্য লেখা গান ‘কেন নয়ন আপনি ভেসে যায়’ তুলিয়ে দিয়েছেন মোহরকে, তেমনও ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ ‘তাসের দেশ’-এর ‘দহলা’, ‘ডাকঘর’-এর ‘সুধা’, ‘বিসর্জন’-এর ‘অপর্ণা’ ইত্যাদি নাটকে অভিনয়ের জন্য মোহরকে দিয়ে রিহার্সাল করিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আবার রিহার্সালের শেষে কোনও দিন তিনি নিজেই গেয়ে উঠেছেন ‘সমুখে শান্তি পারাবার’ আর বলেছেন “আমি চলে যাওয়ার পর তোমরা এই গান গেও।”
প্রথম অনুষ্ঠান, প্রথম রেকর্ড
রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ‘ভিক্ষাপাত্র কণ্ঠে নিয়ে’ সারা ভারত চষে বেড়াতেন। এই সূত্রেই কণিকা শান্তিনিকেতনের বাইরে কলকাতার ‘ছায়া’ প্রেক্ষাগৃহে রবীন্দ্রনাথ পরিচালিত ‘বর্ষামঙ্গল’ অনুষ্ঠানে প্রথম বার সঙ্গীত পরিবেশন করেন ১৯৩৭ সালে। বয়স তখন তাঁর তেরো। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কলকাতায় এই অনুষ্ঠানটি ছিল তাঁর জীবনের প্রথম অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, “ছায়া সিনেমা হলে বর্ষামঙ্গলের দিন গুরুদেব বসেছিলেন স্টেজের ওপরেই, চেয়ারে, একপাশে। আমি তাঁর হাতলের পাশটিতে দাঁড়িয়ে গাইছি ‘ছায়া ঘনাইছে বনে বনে’। ভালই গাইছিলাম! কী জানি, গুরুদেবের বোধহয় মনে হয়েছিল আমি নার্ভাস। একসময় দেখি, উনিও আমার সঙ্গে গাইতে শুরু করেছেন। সত্যি কথা যদি বলতে হয়, খুবই রাগ হয়েছিল আমার। কেন আমার সঙ্গে গাইলেন?” দু’জনের সম্পর্কের মধুরতার প্রকাশ এই ঘটনা। মোহরকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের দল ভারতের নানা শহরেও গিয়েছিল। এই ভ্রমণকালে শুধু গান নয়, সাহেবি ঢঙে কাঁটা-চামচ দিয়ে খেতেও মোহরকে শিখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ।
মোহরের খ্যাতি
শান্তিনিকেতনের গণ্ডি ছাড়িয়ে শহর কলকাতার ঘরে ঘরে পৌঁছেছিল তাঁর প্রকাশিত প্রথম রেকর্ডের সূত্রে। ১৯৩৭ সালে কাকা গোকুল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কলকাতা বেড়াতে এসেছিলেন মোহর। সেই বেড়ানোর শেষে কাকা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন ৬/১ অক্রুর দত্ত লেনে হিন্দুস্থান কোম্পানির অফিসে কী করে গান রেকর্ড হয়, তা দেখাতে। এই দেখার সূত্রেই কোম্পানির মালিক চণ্ডীচরণ সাহা ও ট্রেনার যামিনী মতিলাল মোহরের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে যান। তাঁরা তখনই ঠিক করেন মোহরকে দিয়ে নতুন গান রেকর্ড করবেন। কিন্তু গান নির্বাচন করতে গিয়ে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের গানের উপরে ভরসা করতে পারেননি ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কায়। সে কালের বিখ্যাত গীতিকার নীহারবিন্দু সেন ও সুরকার হরিপদ চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে এনে দু’টি আধুনিক গান তৈরি করে রেকর্ড করালেন মোহরের গলায়। গান দু’টি ছিল, ‘গান নিয়ে মোর খেলা’ ও ‘ওরে ওই বন্ধ হল দ্বার’। ১৯৩৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রেকর্ডটি বাজারে আসে ও বাণিজ্যিক সাফল্য পায়। এই রেকর্ডিংয়ের সময়ে ‘ফুলপরী’ নামে একটি শিশুগীতিনাট্যের জন্যেও মোহর গান গেয়েছিলেন।
কিন্তু এই ঘটনায় দুঃখ পেলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি মোহরকে ডেকে বলেই দিলেন, “তুমি যদি এই সব গান গাও তবে আর আমার গান গেয়ো না।” রবীন্দ্রনাথের এই অভিমান দীর্ঘস্থায়ী না হলেও বোঝা যায় কেন তিনি ক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন।
প্রথম রবীন্দ্রগানের রেকর্ড
ফলে দেরি না করে ওই ১৯৩৮ সালেই তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে মোহরকে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সেই অক্রুর দত্ত লেনের হিন্দুস্থান রেকর্ডের অফিস ঘরে। রেকর্ড করা হয়েছিল ‘মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে’ এবং ‘না না না ডাকব না’ গান দু’টি। এই রেকর্ডটিই কণিকা মুখোপাধ্যায়ের প্রথম রবীন্দ্রগানের রেকর্ড। এর পরে ১৯৪০ সালের ২৮ জুলাই বোলপুরে টেলিফোন চালু হওয়ার দিন। সে দিন সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ আবৃত্তি করেছিলেন আর মোহরকে দিয়ে গাইয়েছিলেন ‘ওগো তুমি পঞ্চদশী’ গানটি। যা রবীন্দ্রনাথই মোহরকে শিখিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানটি রেডিয়োয় প্রচারিত হয়েছিল।
দুঃসহ বাইশে শ্রাবণ
১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথ ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। ওই বছর উদয়নের বারান্দায় ‘বশীকরণ’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। সেই নাটকের রিহার্সালে রবীন্দ্রনাথ অনুপস্থিত। এই নাটকে মোহর অভিনয় ও গান করেছিলেন। অসুস্থ শরীর নিয়েই রবীন্দ্রনাথ উদয়নের বারান্দায় এসে বসেছিলেন। নাটক দেখে মাঝেমাঝে হেসে উপভোগ করছিলেন। মোহর ভেবেছিলেন, ‘বোধহয় তাঁর অসুস্থতা এবার সেরে যাবে।’ কিন্তু তা হয়নি। তবে অসুস্থ শরীরেই মোহরকে রবীন্দ্রনাথ যে গানটি শিখিয়েছিলেন, তা ‘ওই মহামানব আসে’। উদয়নের বারান্দায় ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধ পাঠের দিনেই গীত হয়েছিল গানটি।
আর তার পরের কথা মোহরের বয়ানেই পড়ে নিই আমরা তাঁর আত্মজীবনীর পাতা থেকে— ‘শেষ পর্যন্ত এল দুঃসহ বাইশে শ্রাবণ। বাইরে সেদিন ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি। এক ঝড় বৃষ্টির দিনেই আমার তাঁর কাছে যাওয়া। আজকের ঝড়বাদল তাঁর না-থাকার খবর নিয়ে এল। এমন একটা খবরের জন্য রোজ শঙ্কিত হয়ে থাকতাম আমরা...আশ্রমের সবাই তখন সে খবর জেনে গেছে। সবাই বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়। বৃষ্টির মধ্যে নীরবে নিঃশব্দে পুরনো লাইব্রেরির সামনে পৌঁছে গেলাম সবাই। সেই যে ডাকঘরের রিহার্সাল দিতে-দিতে কতবার গাইতেন আর বলতেন, ‘আমার মৃত্যুর পর তোমরা গেয়ো— ‘সমুখে শান্তি পারাবার’। ...আজ এই দুঃসহ দিনে সেই গানই আমরা গাইলাম। যেন তিনিই গাইয়ে নিলেন।’
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে
কণিকা এর পরে ক্রমশ খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে গেলেন। ছড়িয়ে পড়লেন সারা বিশ্বে। রবীন্দ্রনাথের গান ছাড়াও আরও অনেক ধরনের গান গেয়েছেন। তৈরি করেছেন নতুন গায়ক-গায়িকা। দেশবিদেশে আজ তাঁর ভক্তের সংখ্যা অগণিত। কিন্তু কণিকা আজীবন মনে করেছেন, রবীন্দ্রনাথের গান তিনি গাইতেন না, নিবেদন করতেন। যেন রবীন্দ্রনাথই তাঁকে দিয়ে গানগুলি গাইয়ে নিচ্ছেন এমনই মনে হত তাঁর।
১৯৪৩ সালে কণিকা আকাশবাণীতে নিয়মিত শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। আকাশবাণীর ‘রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষার আসর’ পরিচালনা করেছেন একাধিক বার। ১৯৪৩ সালেই তিনি অধ্যাপিকা হিসেবে সঙ্গীতভবনে যোগদান করেন। পরে অধ্যক্ষ পদেও যোগ দেন। নিয়মমাফিক অবসর গ্রহণের পরেও সাম্মানিক অধ্যাপিকা হিসেবে গান শিখিয়েছেন শেষ দিন পর্যন্ত। ১৯৪৫ সালে তিনি বিয়ে করেছিলেন বীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আজীবন বীরেনবাবু কণিকাকে সঙ্গ দিয়েছেন নীরব ভক্তের মতো। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে মোট পাঁচ বার কণিকা বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। শেখ মুজিবর রহমান স্বয়ং তাঁর গানের ভক্ত ছিলেন। কণিকার গানের টানে বাংলার বহু দিকপাল খ্যাতিমান কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, গায়ক তাঁর বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন। তাঁরা কণিকাকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন। ১৯৭০ সালে হীরেন নাগ পরিচালিত ‘বিগলিত করুণা জাহ্নবী যমুনা’ ছবিতে ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ গানটি গেয়ে তিনি বিএফজেএ পুরস্কার পান। ‘সংগীত নাটক আকাডেমি’ পুরস্কার পান ১৯৭৯ সালে। ১৯৮০ সালে ই এম আই গ্রুপ তাঁকে ‘গোল্ডেন ডিস্ক’ পুরস্কার দেয়। ১৯৮৬ সালে ‘পদ্মশ্রী’, ১৯৯৬তে শিরোমণি ও ১৯৯৭তে বিশ্বভারতী তাঁকে দেশিকোত্তম প্রদান করে।
রবীন্দ্রনাথের ‘আকবরী মোহর’ ২০০০ সালের ৫ এপ্রিল ভোরবেলা আমাদের ছেড়ে চলে যান।
ঋণ: স্বপনকুমার ঘোষ, ‘মোহর’— সম্পাদনা সুমিতা সামন্ত