E-Paper

নৃত্য-গীতিতে ভরা স্মৃতিসুধা

‘ললিতা, ওকে আজ চলে যেতে বল না’ গানের সঙ্গে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন তপজা চক্রবর্তী ও তৃষ্ণা চক্রবর্তী এবং ‘ঝরনা ঝরঝরিয়ে’ গানের সঙ্গে একক নৃত্য পরিবেশন করেন তপজা।

শর্মিষ্ঠা দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৩২
নৃত্যলিল্পী।

নৃত্যলিল্পী।

সম্প্রতি কথাকলি নৃত্যশিল্পী গোবিন্দন কুট্টি ও সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে’কে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কলামণ্ডলম শিক্ষায়তন— গল্ফ গ্রিনে কলামণ্ডলমের অডিটোরিয়ামে। অভিনব এই অনুষ্ঠানের শুরুতে গোবিন্দন কুট্টির সুযোগ্য পুত্র সোমনাথ কুট্টি জানান, ২০০৫ সালে মান্না দে তাঁর কাছে গোবিন্দন কুট্টির নৃত্য সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করেন। ষাটের দশকের শেষে নিউ এম্পায়ারে গোবিন্দন কুট্টির নৃত্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন মান্না দে।

এ দিনের অনুষ্ঠানে মান্না দে’র গাওয়া ২৭টি গানের সঙ্গে ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্য ও সৃজনশীল নৃত্যের মিশ্রণে নৃত্য পরিবেশন করেন ১৩ জন ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী, যাঁরা কোনও না কোনও সময়ে কলামণ্ডলম শিক্ষায়তনে নৃত্যশিক্ষা লাভ করেছেন। শুরুতে জলসা চন্দ কত্থক আঙ্গিকে মান্না দে’র গাওয়া ‘ভালবাসার আগুন জ্বালাও’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন। এর পর ‘কী দেখলে তুমি আমাতে’ গানের সঙ্গে স্নিগ্ধা দত্তের নৃত্য নিবেদন। ‘গহন মেঘের ছায়া ঘনায়ে’ এবং ‘ও আমার মন যমুনার’ গানের সঙ্গে নৃত্য মঞ্চস্থ করেন শতাক্ষী মুখোপাধ্যায়। ‘রঙ্গিনী কত মন’ এবং ‘ওগো বেশি দাম বলো কার’ গানের সঙ্গে কত্থক আঙ্গিকে নৃত্য পরিবেশন করেন মালবিকা সেন। স্বর্ণদীপা মোহিনীআট্টম আঙ্গিকে উপস্থাপন করেন ‘সুন্দরী গো’ এবং ‘না, না যেয়ো না’। শ্যামাদিত্য দাস নিবেদন করেন ‘শাওন রাতে যদি’। পরে শ্যামাদিত্য ও ইলিনা বসুর নৃত্য নিবেদন ‘ও কেন এত সুন্দরী হল’ গানটির সঙ্গে। সুগতা রায় কুচিপুড়ি আঙ্গিকে নিবেদন করেন ‘স্বপনে বাজে গো বাঁশি’ এবং ‘এসো যৌবন এসো হে, বন্ধু’ গানের সঙ্গে।

‘ললিতা, ওকে আজ চলে যেতে বল না’ গানের সঙ্গে দ্বৈত নৃত্য পরিবেশন করেন তপজা চক্রবর্তী ও তৃষ্ণা চক্রবর্তী এবং ‘ঝরনা ঝরঝরিয়ে’ গানের সঙ্গে একক নৃত্য পরিবেশন করেন তপজা। সৌমিতা ঘোষের নৃত্য উপস্থাপনা ‘ঝনক ঝনক তোরি বাজে পায়েলিয়া’ এবং ‘আমি যামিনী’। সম্রাজ্ঞী ঘোষ কত্থক নৃত্যের আঙ্গিকে নিবেদন করেন ‘কাহারবা নয়, দাদরা বাজাও’ এবং ‘লাগা চুনরি মে দাগ’। তাঁকে নৃত্যে সহযোগিতা করেন তাঁর দুই ছাত্রী স্নেহা সরকার ও সৌমী পাত্র। ঝিনুক সিংহ মুখোপাধ্যায়ের নিবেদন ‘এ নদী কেমন নদী’ ও ‘বাজে গো বীণা’। তানিয়া দেওয়ানজির উপস্থাপনা ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার হতে’ এবং ‘এ কী অপূর্ব প্রেম’। শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থাপনা ছিল ‘ও চাঁদ, সামলে রাখো’ গানের সঙ্গে। অপেক্ষা সাহার নিবেদন ‘ওগো বর্ষা, তুমি ঝোরো নাকো’ গানের সঙ্গে। ‘কে তুমি তন্দ্রাহরণী’ গানের সঙ্গে নৃত্য মঞ্চস্থ করেন তৃষ্ণা চক্রবর্তী।

স্বল্প পরিসরে আলাদা করে প্রত্যেকের নৃত্য পরিবেশনা নিয়ে বলা সম্ভব নয়। প্রায় সকলেই দীর্ঘ দিন ধরে ধ্রুপদী নৃত্যের চর্চা করছেন, কেউ বা একাধিক নৃত্যধারায় তালিম নিয়ে নিজের শিক্ষায়তন গড়ে তুলেছেন। তবে প্রত্যেকে একটি করে নৃত্য পরিবেশন করলে ভাল হত— অযথা অনুষ্ঠানকে দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। কোনও কোনও শিল্পী ঘুঙুর ব্যবহার না করায়, নৃত্য উপস্থাপনা নিষ্প্রভ মনে হয়েছে। সংযোজনায় দেবলীনা ভট্টাচার্যের ভূমিকা যথাযথ। ষাটের দশকে গোবিন্দন কুট্টি ও থাঙ্কমণি কুট্টি কলামণ্ডলম প্রতিষ্ঠা করে কলকাতায় দক্ষিণী নৃত্যশিক্ষার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। শান্তিনিকেতনে কথাকলি নৃত্যশিক্ষার প্রবর্তন করেন রবীন্দ্রনাথ, নিজস্ব নৃত্যনাট্যে তার প্রয়োগ ঘটিয়ে। গোবিন্দন কুট্টি কলকাতায় এসে রবীন্দ্র নৃত্যনাট্যের একজন প্রথম সারির নৃত্যশিল্পী হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন। সে দিনের অনুষ্ঠানে নানা ধরনের দক্ষিণী ধ্রুপদী নৃত্যের আঙ্গিকে নৃত্য পরিবেশিত হলেও, কথাকলি আঙ্গিকে কিন্তু কোনও নৃত্যের উপস্থাপনা ছিল না।

অনুষ্ঠান

নৃত্যলোক-এর ২৫ বছর উদ্‌যাপন অনুষ্ঠিত হল গিরিশ মঞ্চ এবং কামারহাটি নজরুল মঞ্চে। প্রথম দিন সন্ধ্যায় গিরিশ মঞ্চে অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চস্থ হল নৃত্যলোকের শিক্ষার্থীদের ভরতনাট্যম। এর পর সুতর্পণ প্রধানের একক অভিনয় সুকুমার রায়ের ‘যতীনের জুতো’। এ দিনের মূল আকর্ষণ ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য ‘বিসর্জন’। নির্দেশনা সুতপা আওন প্রধান। আবহসঙ্গীতে কল্যাণ সেন বরাট। আলো ও মঞ্চ করেছেন ধনপতি মণ্ডল, অনির্বাণ সরকার ও ড. তরুণ প্রধান। নৃত্যনাট্যে অভিনয় করেছেন সুষমা মণ্ডল, প্রতাপ কুমার মণ্ডল, মেঘা শাসমল, সাগর সর্দার, শর্মিলা দে, সুমন মজুমদার, অস্মিতা দে, সুচন্দ্রা সাহা, পারমিতা দত্ত, স্নেহা দত্ত, শঙ্খদীপ চক্রবর্তী প্রমুখ। বিশেষ অতিথি ছিলেন গৌরী বসু, তাপস সামন্ত, দেবাশীষ মজুমদার, শঙ্কর নারায়ণ স্বামী। দ্বিতীয় দিন কামারহাটি নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল নৃত্যলোকের ভরতনাট্যম। পরিবেশিত হয় অভিভাবকদের জারি নৃত্য। ছিল ষড়ভুজ-এর রণপা। মঞ্চস্থ হল শিশুদের নৃত্যনাট্য পঞ্চতন্ত্রের গল্প, শিশু ভোলানাথ ও নৃত্যলোক আয়োজিত তাসের দেশ। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন নৃত্যলোক-এর কর্ণধার ও নৃত্যশিল্পী সুতপা আওন প্রধান।

অর্কেস্ট্রায় কিংবদন্তি বাঙালি সুরকারদের সুরের মূর্ছনা সঙ্গে কবিতার কোলাজ, মঞ্চে অন্য স্বাদের অনুষ্ঠানের আয়োজন করল হৈমন্তীর কণ্ঠে সংস্থা। তাদের সাংস্কৃতিক মহোৎসবের পঞ্চম বর্ষপূর্তি উদ্‌যাপন হয়ে গেল সম্প্রতি সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে। এ দিনের সন্ধ্যা ছিল সঙ্গীত ও নৃত্য মিলিয়ে এক সংস্কৃতির মহাসম্মেলন। ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত, বাংলা-হিন্দি আধুনিক গান, গজ়ল এবং লোকসঙ্গীত, তার সঙ্গে নানা কবিতার কোলাজ। এ ছাড়া ছিল লাইভ অর্কেস্ট্রায় বাঙালি সুরকারদের সুরের মূর্ছনায় সলিল চৌধুরী, রাহুল দেব বর্মন, সুধীন দাশগুপ্ত, শচীন দেব বর্মণদের মতো দিকপাল সুরকারদের গানের সুর গ্রুপ ভায়োলিনে মন ভরিয়ে দেয়। পরিচালনায় কলকাতা ইয়ুথ অঁসম্বলের অমিতাভ ঘোষ। মহোৎসবে মঞ্চস্থ হল ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য। কত্থক থেকে ভরতনাট্যম নানা স্বাদের ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্য পরিবেশিত হল। এ বছরের বিশেষ আকর্ষণ ছিল হৈমন্তী রায়ের গান, আবৃত্তি ও কত্থক নৃত্য পরিবেশনা। গানে, গানে স্মরণ করলেন সদ্যপ্রয়াত সঙ্গীতশিল্পী জ়ুবিন গর্গকে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dance Singing

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy