শুরু সেই মিশর সাম্রাজ্যে। তার পরে পাঁচ হাজার বছর ধরে নানা চেহারায় অন্দর সাজিয়ে চলেছে পর্দা। ঘরের আব্রুও রক্ষা করে, আবার অন্দরমহলের সৌন্দর্যও বাড়ায়। আলো-তাপ আটকায়, ধুলোময়লা থেকে ঘরকে বাঁচায়। বাড়ির ভিতরে কতটা হাওয়াবাতাস খেলবে, সে-ও পর্দা লাগানোর কৌশলের উপরে নির্ভর করে। তা, এত দায়িত্ব যখন পর্দার গর্দানে, তখন বাছাই পর্বে বিশেষ কয়েকটা কথা মাথায় রাখতে হবে বইকি। সেই ফর্দে চোখ বুলিয়ে নিন।
পর্দার কাপড়, কাপড়ের রং
লিনেন, সিল্ক, ভেলভেট, মিক্সড সিল্ক, ভয়েল এই ক’ধরনের পর্দা বেশি মেলে। সুতির পর্দার চাহিদা বেশি। কারণ, নানা ভাবে কুচি দিয়ে বা আরবি কায়দায় প্লিট করে ইচ্ছেমতো ড্রেপ করা যায়। জামদানি বা মসলিনের পর্দা খুবই শৌখিন। তবে, ঘরে হাতির দাঁতের পালঙ্ক, গাছের গুঁড়ির টেবিল জাতীয় আসবাব না থাকলে এই ধরনের জমিদারি পর্দা মানাবে না। সে ক্ষেত্রে হ্যান্ডলুম পর্দা ঝুলিয়ে শখ মেটান।
দেওয়ালের রঙের সঙ্গে কনট্রাস্ট হয় এমন পর্দা নেবেন, না কি ঘরের রঙেরই কয়েক শেড হালকা বা গাঢ় রং বেছে গোটা লুকটা অ্যাকসেনচুয়েট করবেন, তা ঠিক করতে নিজের শিল্পবোধের উপরেই ভরসা রাখতে হবে। দোকানে পর্দা অর্ডার দিলে তাঁরা জানালা-দরজার মাপ নেওয়ার সময়েও ক্যাটালগ দেখিয়ে রং সম্পর্কে পরামর্শ দেন। ঘরে ওয়ালপেপার থাকলে বা নানা রঙের দেওয়াল হলে একরঙা পর্দা লাগান। ডাবল বা ট্রিপল লেয়ারড কার্টেনসও ব্যবহার করতে পারেন। ছিমছাম ঘর ছাড়া প্রিন্টেড বা ফুলকাটা পর্দা একেবারেই ভাল দেখায় না।
কোন ঘরে কোন পর্দা
জানালা, দরজার আকার-আয়তন, ঘরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-রং এমন হাজারো বিষয় পর্দা লাগানোর আগে মনে রাখতে হয়। কিন্তু অন্দরসজ্জার শিল্পীরা সবচেয়ে গুরুত্ব দেন ঘরের প্রকৃতি অনুযায়ী পর্দা নির্বাচনের উপরে। কারণ মেঝের টাইলস, দেওয়ালসজ্জা, আলোর ব্যবহার, আসবাব কী রকম— ঘর অনুযায়ী সব কিছুরই রদবদল হয়। তাই, শোওয়ার ঘরের আবরণ আর বসার ঘরের আভরণ এক হবে না। এখন খাবার ঘর রান্নাঘরের পাশেই থাকে। তাই ডাইনিংয়ের কার্টেন বাছার সময়ে এঁটো হাত, খাবারের ধোঁয়া, চিমনির হাওয়া এই ঘরোয়া বিষয়গুলি খেয়াল রাখুন। ওখানে শ্যাওলা বা ধূসর রঙের পর্দা বাছা বুদ্ধির পরিচয় হবে। ড্রয়িংরুমেই সবচেয়ে নজরকাড়া পর্দাটা লাগান। ডাবল রড লাগিয়ে জানালার দিকে হেভি সিল্কের পর্দা লাগান। এতে রোদ্দুর আড়াল হবে। আর তার উপরে ডিজ়াইন করা ভয়েলের ট্রান্সপারেন্ট পর্দা লাগান। ওই পর্দা মাঝখানে আলগোছে বেঁধে রাখলে বৈঠকখানা তারিফ কুড়োবেই। পরপর বিভিন্ন স্তরে তিনটে পর্দাও ঝোলাতে পারেন।
যেখানে আড়াল দরকার নেই, সেখানে লেস বা নেটের পর্দা লাগান। যেমন দরজা। বেডরুমের জানালায় ভেনিশিয়ান অথবা ডুপ্লে ব্লাইন্ডস (দু’রকম কাপড় জ়েব্রা ক্রসের মতো জুড়ে তৈরি, জানালায় এঁটে থাকে) ব্যবহার করতে পারেন। অথবা ডাবল রডে লেয়ারড পর্দা লাগান। এ ক্ষেত্রে কায়দাটা হবে ড্রয়িংরুমের ঠিক উলটো। একটা পাতলা দুধসাদা শিয়ার (স্বচ্ছ) লাগান জানালার কাচের উপরে। ভিতরে থাক গর্জাস ভেলভেটের পর্দা। আঁধার চাইলে দুটোই পুরো টেনে দেবেন। নরম আলো চাইলে ভেলভেটের পর্দা প্লিট করে দু’পাশে সরিয়ে শুধু শিয়ারটা মেলে রাখুন।
যত্নে রাখুন, সাবধানে টাঙান
পেলমেট বা ভ্যালেন্স (ঝালর) তৈরি করে পর্দা লাগানোর ফ্যাশন তো রয়েছেই। সামনে-পিছনে দুই বা তিনটে পর্দা ব্যবহার করতে চাইলে পেলমেটই প্রয়োজন হবে। ইদানীং শুধু রডেই পর্দা ঝোলানোর চল বেশি। হুক, রিং, লুপ (গিঁট), গবলেট (ওল্টানো গ্লাসের মতো)— নানা কায়দায় পরদা টাঙাতে পারেন। সবচেয়ে সহজ ভেলকো স্টাইল।
জানালা যেমনই হোক, মেঝেতে অল্প লোটানো লম্বা পর্দায় তাকে ভাল দেখাবেই। কিন্তু সেই মেঝে রোজ চকচকে রাখা চাই। ঘর ছোট হলে লম্বা পর্দা লাগাবেন না।
অন্তত দু’সেট পর্দা তৈরি করুন। অতিথি সমাগমের জন্য গ্ল্যামারাস এক সেট থাকুক। একপ্রস্ত লন্ড্রিতে গেলে অন্য সেটে চট করে ঘরের চেহারাও পাল্টে ফেলতে পারবেন।
অনেক সময়েই পর্দা কিনতে পকেটে চাপ পড়ে। নিজে কাপড় কিনে ইন্টারনেট থেকে ডিজ়াইন বেছে ভাল দর্জিকে বুঝিয়ে দিন, কী চাইছেন। সাশ্রয় হবে।
আপহোলস্ট্রির বিপণি থেকে কিনুন বা দর্জিকে দিয়ে বানান, মোদ্দা বিষয় একটাই। পর্দা যেন ঘরকে জমকালো করে। যাতে দিনের শেষে ঘরে ঢুকলে, আশার সুর ফিরে
আসে ক্লান্তি ছাপিয়ে— পর্দে মে রহনে দো…
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy