বেশ কিছু দিন ধরেই পেট ব্যথা, ব্লিডিং নিয়ে কাহিল মণীষা। ক্রমশই দুশ্চিন্তা বাড়ছিল। সোনোগ্রাফি করে দেখা গেল বেশ বড়সড় এক টিউমার বসে আছে জরায়ুর মধ্যে। শুরু হল ওষুধপত্র, হরমোন। মাস ছয়েক চিকিৎসা চলল। তাতে টিউমার একটু ছোট হলেও কষ্ট কমল না তেমন। তার উপর আরেক বিপদ। হাজার চেষ্টা করেও বাচ্চা আসছে না। আর দেখতে দেখতে বয়স চলে যাচ্ছে ত্রিশের ওপারে। সবাই বলছেন অপারেশন করে টিউমার বাদ দিলে তবে এর সুরাহা হবে। কিন্তু যদি না হয়? শেষমেশ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতেই হল।
প্র: টিউমার বাদ দিয়ে দিলে গর্ভসঞ্চার হবে এমন গ্যারান্টি কি আছে?
উ: অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধে হয় না। টিউমার তো আজকাল ঘরে ঘরে। একশো জন মহিলার মধ্যে ২০-৩০ জনই এই সমস্যায় ভোগেন। তার মধ্যে বহু কমবয়সি মহিলাও আছেন। হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করে তাঁদের কষ্ট না কমলেও গর্ভসঞ্চার না হলে অপারেশন করতে হয়। আমরা দেখেছি তাতে বেশির ভাগ মহিলার ক্ষেত্রে কাজ হয় ম্যাজিকের মতো।
প্র: ওষুধেও তা হলে কমে টিউমার?
উ: কমে তো অবশ্যই। তিন থেকে ছ’ মাস চিকিৎসা করলে অনেকের ক্ষেত্রে টিউমারের মাপ প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই কমে যায় সব কষ্ট। তবে এর দু’একটা অসুবিধেও আছে। ওষুধ বন্ধ করার পর বছর খানেকের মধ্যে টিউমার আবার আগের অবস্থায় ফিরেও আসতে পারে। তা ছাড়া চিকিৎসা চলাকালীন কখনই প্রেগন্যান্সি নেওয়া যায় না। অপেক্ষা করতে হয়। ফলে কিছুটা সময় নষ্ট হয়।
প্র: তা হলে আর এত হরমোন শরীরে ঢুকিয়ে লাভ কী? যদি ফল না পেলাম।
উ: দুটো লাভ। প্রথমত, কোনও কারণে সেই মুহূর্তে অপারেশন করা সম্ভব না হলে সমসাময়িক ভাবে কষ্ট কম রাখার ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়ত, টিউমার ছোট হয়ে গেলে অনেক সময় নিজে থেকেই গর্ভসঞ্চার হয়ে যায়। বাচ্চা-টাচ্চা হওয়ার পর আবার যদি টিউমার বড় হতে শুরু করে, তখন অপারেশন করা যেতে পারে। তখন আর দুশ্চিন্তা কীসের।
প্র: আজকাল তো দেখছি আর পেট কেটে টিউমার অপারেশন হয় না। তাই না?
উ: না। তবে টিউমার কোথায় আছে তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কখনও পেট ফুটো করে নল ঢুকিয়ে বা কখনও ভ্যাজাইনার মধ্যে দিয়ে টিউমার বার করে আনা হয়।
প্র: টিউমার তো জরায়ুর মধ্যেই থাকে?
উ: জরায়ুর গায়ে বা বাইরেও তা হতে পারে। তখন সেখানে পৌঁছতে গেলে পেট ফুটো করে নল ঢোকাতে হয়। তাকে বলে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি। আর জরায়ুর গহ্বরের মধ্যে টিউমার হলে ভ্যাজাইনার মধ্যে দিয়ে নল ঢুকিয়ে অপারেশন করা হয়। বেশি দিন হাসপাতালে থাকতে হয় না। আর মাস খানের মধ্যে রোগের আর চিহ্ন থাকে না শরীরে।
প্র: টিউমার থাকলে কী অপারেশন করতে হবে?
উ: আগে দেখতে হবে টিউমারটি ছোট কি না। ছোট টিউমার থাকলে, সঙ্গে আর কোনও কষ্ট না থাকলে অপারেশনের দরকার নেই। তবে টিউমার বড় হতে শুরু করলে অপারেশন করে নিতে হবে। না হলে কিডনির উপর চাপ পড়ে কিডনি খারাপ হয়ে যেতে পারে। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে মানে তিন-চারশো জনের মধ্যে এক-আধ জন মহিলার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা খারাপ দিকে চলে যেতে পারে। চিন্তার কিছু নেই। সংখ্যায় তা খুবই কম।
প্র: খারাপ দিক বলতে কী বলছেন, ক্যান্সার?
উ: হ্যাঁ, ক্যান্সার!
প্র: টিউমার একবার হলে বার বার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্যান্সারেরও একটা সুযোগ থেকে যায়। সে ক্ষেত্রে অত কাণ্ড না করে পুরো জরায়ুটাই শরীর থেকে বাদ দিয়ে দেওয়াই ভাল নয় কী?
উ: কম বয়সে টিউমার হলে পুরো জরায়ু বাদ দেবেন কী করে? বাচ্চা নেওয়ার ব্যাপারে আছে তো। সেটাও তো ভাবতে হবে।
প্র: কোন পরিস্থিতিতে তা হলে জরায়ু বাদ দেওয়া হয়?
উ: বয়স যদি পঁয়তাল্লিশ পেরোয়, তা হলে জরাযু বাদ দেওয়ার কথা ভাবা হয়। বা দেখতে হবে টিউমার খুব বড় হয়েছে কি না অথবা অনেকগুলি টিউমার এক সঙ্গে রয়েছে কি না। ওই বয়সে তো আর বাচ্চা নেওয়ার প্রশ্ন নেই।
প্র: এই অপারেশন নিশ্চয়ই পেট পুরো কেটে করা হয় না?
উ: কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই হয়। তবে পেটে ফুটো করেই বেশি করা হয় আজকাল। যাকে বলে টিএলএইচ বা টোটাল ল্যাপারোস্কোপিক হিসটেবেকটমি।
প্র: ভ্যাজাইনা দিয়ে নল ঢুকিয়ে করা যায় না?
উ: তাও যায়।
প্র: কিন্তু এ ভাবে অপারেশন করলে শুনেছি যৌন জীবনের উপর আঁচ এসে পড়ে?
উ: টিএলএইচ করলে কোনও সমস্যা নেই। যৌন জীবনেও তার কোনও প্রভাব পড়ে না।
যোগাযোগ- ৯৮৩০৭৭৭৬৩৬
সাক্ষাৎকার: সুজাতা মুখোপাধ্যায়
নিয়মিত গ্রিন টি খান
•নিয়মিত ব্যয়াম জরুরি। ফাইব্রয়েড এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও কাটানো যায়।
•ওজন বাড়তে দেওয়া চলবে না। ওজন না কমালে ফাইব্রয়েড সমস্যা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে দশ থেকে কুড়ি শতাংশ।
•সময় করে অন্তত আধ-ঘন্টা হাঁটুন। সকালে না হলেও বিকেলে বা রাতে।
•গ্রিন টি খাওয়া অভ্যেস করুন। খুবই উপকারি।
•বাইরের খাবার কম খান। খাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন। ডায়েট মেনে চলুন।
•বছর-ভর সবুজ শাকসবজি বেশি করে খান। এর উপকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই।
•বয়স কম থাকতেই শরীর-চর্চায় নজর দিলে ভবিষ্যতে এই সমস্যা কাটানো যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy