Advertisement
E-Paper

ছোট আয়তনেও ‘স্কা’র বলিষ্ঠ প্রদর্শন

তাঁদের নিজস্ব গ্যালারিতে সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস-এর সদস্যরা ‘স্মল ফরম্যাট’ ভাস্কর্য ও ছবির প্রদর্শনী করলেন সম্প্রতি।

অতনু বসু

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৫৫
যোদ্ধা: ‘সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস’-এর একটি কাজ

যোদ্ধা: ‘সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস’-এর একটি কাজ

তাঁদের নিজস্ব গ্যালারিতে সোসাইটি অব কনটেম্পোরারি আর্টিস্টস-এর সদস্যরা ‘স্মল ফরম্যাট’ ভাস্কর্য ও ছবির প্রদর্শনী করলেন সম্প্রতি। এঁদের প্রকাশনায় মুদ্রিত সুদৃশ্য বই, ক্যাটালগ, প্রচুর প্রিন্ট সংবলিত গ্রাফিক্স অ্যালবামের আয়োজনও বিস্ময়কর।

দিল্লিনিবাসী মনু পারেখের দুটি কাজে কালো রেখার ছন্দময় কাব্য যেন ঝলমল করে ওঠে টকটকে লালের বিচ্ছুরণে। বিস্তর চোখ, পাখির দুই স্তন, ঘষা কালোর ব্যবহার রোমাঞ্চকর। দৃষ্টি আটকে যায়। অল্প রেখায় রোম্যান্টিক রচনা।

রহস্যময় দুই মুখোশ বা মুখ— যেখানে জাপানি আদল এবং একই সঙ্গে মেক্সিকান মাস্ক-সদৃশ মুখ দুটি ড্রাগের আচ্ছন্নতায় ভয়ংকর সুন্দরের মতো। লাবণ্য নষ্ট করা বিক্ষিপ্ত ছিটোনো রং, প্রায় অন্ধকার বা নিদ্রিত কোটরাবদ্ধ চোখ, কালচে লাল ওষ্ঠাধরের আকর্ষক সমগ্র অবস্থাকে ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে দিয়েছেন। সরু সাদা রেখায় চুলের আদল ও চিবুকের আলোর অসাধারণত্বের উপর-নীচে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র স্টিলের বল সাজিয়ে, অন্ধকার পটভূমিতে ড্রাগে আচ্ছন্ন নারী-মুখোশের কাজ দুটি আদিত্য বসাকের ড্রাগের বিরুদ্ধে বার্তা!

সনৎ কর কালো মনোক্রোমে যেন রহস্যনাটকের পটভূমি তৈরি করেছেন তাঁর চিরাচরিত স্টাইলে। টব থেকে উত্থিত গুচ্ছমুখের নীরব কোলাহল ও বিস্ফারিত সব চোখ, একফালি চাঁদ, চোখের কোণে ক্ষুদ্র কাগজের সাদা অংশ ছেড়ে যে অদ্ভুত প্রাণ এনেছেন, তা অসাধারণ! গোটা ছবির আঁধারে ওই আলোই রোমাঞ্চ জাগায়।

যে কাজে নিজস্ব জ্যামিতিক স্টাইল ও টেকনিকে ভাস্কর্যের একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন তৈরি করেন, এখানে হঠাৎ তা থেকে সম্পূর্ণ সরে এসে জ্যামিতিহীন ফর্মের সলিড ভলিউমকে এতটা গুরুত্ব দিলেন বিমল কুণ্ডু? অতি চকচকে ব্রোঞ্জের একটি নিরীহ ও একাকী আপেল আর ডিম আলাদা ভাবে পেডেস্টালে রাখা। শৈল্পিক চেতনায় পরীক্ষানিরীক্ষার পর বিমল কি সুষম খাদ্য ও প্রোটিনে মন দিলেন? তবে নিঃসন্দেহে আধুনিক দর্শনের ছোঁয়া রেখেছেন কাজে।

ইদানীং কালে অত্যল্প রেখার কবিতায় নিসর্গ, শহর, ঘরবাড়ি, মাঠ-ময়দানের ছবি আঁকেন গণেশ হালুই। এই অবিশ্বাস্য সরলীকরণের গভীরে থাকে তাঁর দীর্ঘ দর্শনের সামগ্রিক নিরেট ফর্মেশন, ব্যবধান, সমুন্নতি। যে সব ডায়মেনশনের ভাব সম্প্রসারণে কখনও হাল্কা রঙে জল মেশানো ছায়াতপের আবহ রেখার সঙ্গে মিলে মিশে এক স্বাতন্ত্র্যচিহ্নিত অধ্যায় তৈরি করেছে।

পড়ে থাকা ঠাসা দ্রব্যে মজুত মুখ-বাঁধা বস্তার অবস্থানকে টেক্সচারের মজায় ধরেছেন সুনীলকুমার দাস। বাঁধা মুখের উপরিভাগ মনুষ্যমুখ। ফাইবারের কাজ হলেও সলিড ফর্মের ভার এবং গালা স্পিরিটের টোনে পাথরের বিভ্রম তৈরি করেছেন।

দুই শরীরী বিভঙ্গের বিন্যাসে বিমূর্ত রচনার জ্যামিতি দিয়ে এক কাব্যভাষা তৈরি করেছেন নিরঞ্জন প্রধান তাঁর ছোট্ট ব্রোঞ্জ ভাস্কর্যে। ইন্ডিয়ান রেড কালার পেপারে ড্রাই প্যাস্টেলে দুটি বড় বেশি নীরব স্থির মুখ এঁকেছেন লালুপ্রসাদ সাউ। লাইন টোনে ও কাগজের টেক্সচারের মজায় যা বেশ অন্য রকম।

হাড়গোড়ের মিশ্র ডিজ়াইন-সদৃশ কাঠামোর ঝুলন্ত রচনার নীচে একদল চড়াইয়ের নিঃসঙ্গ জীবন। টেম্পারায় সূক্ষ্ম স্ট্রোক, ধুয়ে তুলে ফেলে টেক্সচার বের করে আনা শুকনো আবহের মজা। কাজ দুটি দারুণ রোম্যান্টিক। পাখির মুখের স্কেলিটনে বসা চড়াই! অনবদ্য। মনোজ মিত্রের ‘গোয়াশ’ পুরনো মুঘল চিত্রকে মনে পড়ায়। জোরালো রচনা।

ঘাড় ঘোরানো ঘোড়ার ভঙ্গি-সহ বিশাল মাথা ও পাতিনার ব্যবহার অখিলচন্দ্র দাসের ভাস্কর্যে অন্য মাত্রা দিয়েছে। ব্রোঞ্জের শরীরের মধ্যভাগ কাঠের টেক্সচার-সদৃশ। জিভ বার করা ছাগলের পিঠে তরবারি-সহ তিন যোদ্ধা। উঁচু গ্রীবা ছাগলের ভঙ্গিকে এক জ্যামিতির দিকে নিয়ে গিয়েছে। বেশ ভাল কাজ।

জলরঙের এক ধারাবাহিকতা দীর্ঘ কাল লালন করে আসার ফলে প্রদীপ মৈত্রর হাতে অতি সহজেই তৈরি হয় দৃষ্টিনন্দন অলৌকিক কম্পোজ়িশন। কখনও অতিলৌকিক সারল্য চোখের আরাম তৈরি করে। ভগ্ন কাষ্ঠফলক ও অবয়বে যিশুর আবহ যেমন আলো-অন্ধকার রহস্যের মধ্যে বিমূর্ত রূপবন্ধ নিয়েও ভিন্ন ছায়াতপে অনন্য।

কালো অ্যাক্রিলিক দিয়ে জোরালো চওড়া ব্রাশিংয়ে, সাদা কাগজে দ্রুত টানটোনে পাখির ড্রয়িং বড় অসামান্য ধরেছেন অতনু ভট্টাচার্য।

প্রদর্শনীতে মানিক তালুকদার, পঙ্কজ পানোয়ার, রাজেন মণ্ডল, শ্রীকান্ত পাল, মনোজ দত্ত প্রমুখ অংশ নিয়েছিলেন।

Exhibition Arts
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy