একটা বড় ঘরের এক দিকের সাদা দেওয়াল পুরোটাই ফাঁকা। আসবাব বলতে কয়েকটা বেতের চেয়ার, একটা সেন্টার টেবিল আর খান দুয়েক ছোট গাছ। কিন্তু ঘরে ঢুকলে আর বেরিয়ে আসা যায় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকতে হয় দেওয়ালের দিকে। কারণ ওই সাদা দেওয়ালখানা জুড়ে ঝোলানো রয়েছে ট্যাপেস্ট্রি। আর তাকে কেন্দ্র করেই ঘিরে ধরেছে যত মুগ্ধতা!
গোড়ার কথা
বসার ঘর হোক কিংবা একান্ত ব্যক্তিগত পরিসর— ট্যাপেস্ট্রি যুগ যুগ ধরে বদলে দিয়েছে বাড়ির চেহারা। আভিজাত্য আর সৌন্দর্যের এই অসাধারণ সংমেল আসলে কথা বলে সময়েরও। ভাল মতো চিনে, সঠিক দাম বুঝে ট্যাপেস্ট্রি কেনার কাজটা কিন্তু বেশ কঠিন। অনেক ক্ষেত্রেই ট্যাপেস্ট্রির সঙ্গে গুলিয়ে যায় হাতে বোনা শিল্পের কারুকাজ। ট্যাপেস্ট্রি আদতে এমন এক ধরনের বয়ন শিল্প, যা তৈরি হয় তাঁতে। রংবেরঙের সুতো মিলিয়ে বোনা হয় এ ধরনের কাজ। ট্যাপেস্ট্রি তাই হাতে বোনা এমব্রয়ডারি জাতীয় কাজের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। ট্যাপেস্ট্রির সূচনা ইউরোপের হাত ধরে হলেও নবজাগরণ এবং পরবর্তী সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলেছে এর রং, রূপ, ডিজ়াইন। পাশাপাশি ট্যাপেস্ট্রির মূল্যও তাই বেড়েছে বই কমেনি।
কী করে চিনবেন?
• যদি খুঁটিয়ে লক্ষ করেন, তা হলে চোখে পড়বে কী ধরনের সুতোয় বোনা হয়েছে ট্যাপেস্ট্রি। পলিয়েস্টার, নায়লন বা সিন্থেটিক ফ্যাব্রিক দিয়ে বোনা হলে বুঝবেন, তা সাম্প্রতিক কালে তৈরি। ভিন্টেজ ট্যাপেস্ট্রি সাধারণত উল বা কটন দিয়েই তৈরি হত। পরে তা ধরেছে সিল্কের হাত।
• ট্যাপেস্ট্রির কাজ বোঝার জন্য ব্যবহার করুন আতসকাচ। যে ট্যাপেস্ট্রির সুতোর বুনোট ভীষণ সূক্ষ্ম, বুঝবেন তা মেশিনে তৈরি। হাতে তৈরি ট্যাপেস্ট্রির কাজ যতই সূক্ষ্ম হোক না কেন, তাতে সামান্য এ দিক-ও দিক থাকবেই।
• পতঙ্গ বা গাছ থেকে তৈরি ডাই ব্যবহারের ফলে কমবেশি কুড়িটি রঙের ব্যবহার থাকত পুরনো ট্যাপেস্ট্রিতে। এখন প্রযুক্তির মাধ্যমে রঙের তালিকায় বেড়েছে শেডও।
• সর্বোপরি, ছবি কথা বলে। ট্যাপেস্ট্রির ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। গোটা ট্যাপেস্ট্রি যদি কোনও শিকার, রাজসভা, পরিবার, পুরাণ অথবা বাইবেলের দৃশ্য ফুটিয়ে তোলে, তা হলে তা ভিন্টেজও হতে পাের।
অন্দরমহলে ট্যাপেস্ট্রি
ভিন্টেজ হোক অথবা সাম্প্রতিক কালে মেশিনে তৈরি— ট্যাপেস্ট্রির কদরই আলাদা। তাই ফ্ল্যাট বা বাড়ির চেহারা বদলাতে ট্যাপেস্ট্রির জু়়ড়ি মেলা ভার।
• ঘরে একাধিক জিনিস একই রকম ভাবে গুরুত্ব পেলে কোনওটারই বিশেষত্ব থাকে না। তাই একটাই ট্যাপেস্ট্রি ঝোলান। আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠুক সেটি।
• প্রাকৃতিক দৃশ্য, পছন্দের ফোটোগ্রাফ কিংবা গোটা বিশ্বের মানচিত্র— ট্যাপেস্ট্রি বাছুন ঘরের রং ও থিমের কথা মাথায় রেখে।
• গোটা দেওয়াল জুড়ে একটা ট্যাপেস্ট্রি না লাগিয়ে ওই একই ট্যাপেস্ট্রির ছোট ছোট টুকরোর প্যাচ ঝোলাতে পারেন।
• বিশেষ দিনে বিছানার উপরেও ট্যাপেস্ট্রি পেতে দিতে পারেন।
• হলদেটে কিংবা সাদা ঘরের মাঝে হালকা রঙের আসবাব রাখলে, কোনও চেয়ারের উপরে সাজিয়ে রাখতে পারেন ট্যাপেস্ট্রি।
• কাঠের ফ্রেমবন্দি করেও রাখতে পারেন ট্যাপেস্ট্রি।
• ফ্যাব্রিকে উপহার মুড়ে দেওয়ার রেওয়াজটা আজকের নয়। কাউকে উপহার হিসেবে তো ট্যাপেস্ট্রি অবশ্যই দিতে পারেন। কিন্তু ট্যাপেস্ট্রিতে বিশেষ উপহার মুড়ে দিলেও ব্যাপারটা দারুণ হয়।
• অনেক সময়ে ঘরের কোণে অথবা ধারে টেবিলের উপরে সারি সারি সাজানো থাকে রুপোর বাতিদান, কলস ইত্যাদি। সে ক্ষেত্রে টেবিলের উপরে আলগা করে বিছিয়ে রাখতে পারেন ট্যাপেস্ট্রি।
• খুদের জন্য তার ঘরে ট্যাপেস্ট্রি দিয়েই বানিয়ে দিন তাঁবু। দেখতে যেমন সুন্দর লাগবে, তেমনই অভিনবত্ব যোগ হবে ঘরের সাজে।
ট্যাপেস্ট্রির যত্ন
• ট্যাপেস্ট্রি ঝোলাতে ব্যবহার করতে পারেন পুশ পিন। খেয়াল রাখবেন, এতে যেন ছিদ্র না হয়।
• ভেলক্রো টেপ দিয়েও লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে দেওয়ালে ছিদ্র করারও প্রয়োজন হয় না।
• পর্দা ঝোলানোর রড লাগিয়ে সেখান থেকেও আলগা করে ঝুলিয়ে দিতে পারেন এটি।
• ট্যাপেস্ট্রির মাঝে ভাঁজের দাগ থাকে। তা তোলার জন্য ট্যাপেস্ট্রির উপরে তোয়ালে রেখে মিডিয়াম তাপমাত্রায় আয়রন করতে পারেন।
• এর আয়ু বাড়াতে গেলে সরাসরি সূর্যের আলোয় রাখবেন না।
• ট্যাপেস্ট্রি কটন দিয়ে তৈরি হলে ড্রাই ক্লিনিংও করাতে পারেন।
বসার ঘর, ব্যক্তিগত লাইব্রেরি অথবা শোওয়ার ঘর... ট্যাপেস্ট্রির হাত ধরে অন্দরসজ্জা এ ভাবেই হতে পারে নজরকাড়া। এর জন্য দরকার নেই অতিরিক্ত কোনও উপকরণেরও। শুধু নিজের রুচি অনুযায়ী পছন্দ করে ট্যাপেস্ট্রি কিনে, সামান্য যত্নআত্তি করলেই হল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy