শৈশব-কৈশোরের যে নির্ভেজাল, সরল, স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের জীবনে তাদের থাকার কথা, রাষ্ট্র ও সমাজ সে সুযোগ তাদের দেয়নি। আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ছবিটি বড়ই নির্মম। এ দিকটি তুলে ধরে যে বিশেষ সম্প্রদায়কে নিয়ে এক তরুণ শিল্পী দীর্ঘ দিন ধরে তাঁর সাদা-কালো ড্রয়িংগুলোয় এই সমাজের দিকে আঙুল তুলতে চেয়েছেন, তারা সবাই শিশুশ্রমিক। বালক বালিকা নির্বিশেষে। ‘ইমপ্রিজ়নিং— আ সোশিও পলিটিক্যাল সাইকেডেলিয়া’— এ নামেই সম্পূর্ণ অন্য রকম ভাবনায় এক ড্রয়িংয়ের প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল আর্ট মাল্টি ডিসিপ্লিন্স গ্যালারি। সদ্য শেষ হওয়া প্রদর্শনীটির শিল্পী সঞ্জীব মণ্ডল। মোট আঠেরোটি সাদা-কালো ফুলশিট কাজ। প্রায়ান্ধকার, চতুর্দিকে কালো দেওয়াল, সিলিং। একটি মাত্র ঝোলানো অল্প আলোর বাল্ব— এমনই সে গ্যালারির ছোট কক্ষের মাঝে টেবিলের উপরে রাখা সমস্ত কাজ। দর্শক প্রতিটি কাজ হাতে নিয়ে দেখতে পারবেন, বিষয়টির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে দর্শকের একটি সম্পর্ক তৈরি হবে— এই ভাবনা থেকেই এমন ডিসপ্লের আয়োজন। প্রদর্শনীর অঙ্গ হিসেবে কিছু লেআউট এবং শিল্পীর নিম্নবিত্ত যাপনচিত্রের কাজকর্ম ও পারিবারিক কিছু আলোকচিত্রও বিন্যস্ত করা হয়েছে গ্যালারির দেওয়ালের দু’দিকে।
শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জনমতকে বহু মাধ্যমে তুলে ধরার বৃথা চেষ্টা হয়েছে। আশ্চর্যের যে, শিল্পী কোনও ড্রয়িংয়েই চরিত্রকে স্থান দেননি। প্রতীকী ছবিগুলির সবই শ্রমের স্থান-কাল ও ইংরেজি লিখিত কিছু লাইনের মাধ্যমে এক নীরব খোঁচাকে উপস্থাপনা করেছেন। চারকোল, কন্টি, টেলারিং চক, পেন্সিল ছাড়াও ছবির উপরের দিকের লেখাগুলির ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন নীল রেডিয়াম শিট।
ছবির দু’টি ভাগ। পটভূমির সাদা দেওয়াল, সামনে শ্রমের চিহ্নস্বরূপ জমে থাকা বা রেখে দেওয়া কিছু জিনিসপত্র, ব্যবহারের সামগ্রী। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, কোনও ড্রয়িংয়ে স্তূপীকৃত জামাকাপড়, উপরে লেখা এগেইন প্লেয়িং, আবার তার খেলা শুরু হবে। ড্রয়িংগুলোয় প্রধানত লাইন, ছায়াতপের বিন্যাস, ফর্ম, দূরত্ব, ফর্মেশনের ডিটেলিং, উচ্চতা, স্থাপত্যের আংশিক দৃশ্যবাহ্যতাকে গুরুত্ব দিয়েছেন শিল্পী। কিন্তু কোথাও নেই ‘ছোটু’ বা ‘লতিকা’রা। তারা উহ্য। কিন্তু বর্ণ তাদের চিনিয়ে দিচ্ছে। শ্রেণিবিভাজনের বিরুদ্ধে, দারিদ্র্যের বিপক্ষে, যন্ত্রণার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মানুষকে এ ভাবে সচেতন করার প্রতীকী অঙ্কনের রক্তমাংস সঞ্জীবের এই সমস্ত ড্রয়িং।