E-Paper

স্মৃতিতর্পণে মুখরিত সন্ধ্যা

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আবৃত্তি শোনালেন পারমিতা সরকার। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতা ‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার’ ও কাজী নজরুল রচিত ‘দাও সূর্য’।

মঞ্চে শিল্পীরা।

মঞ্চে শিল্পীরা।

সৌম্যেন সরকার

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:০৯
Share
Save

গত জুলাই মাসে প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় নিবেদিত সুন্দরনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৯৮তম স্মৃতিসন্ধ্যা উদ্‌যাপিত হল রবীন্দ্রসদন মঞ্চে। পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ছিলেন রূপরেখা চট্টোপাধ্যায়। এই অনুষ্ঠান পরম্পরার কথা বলে, সঙ্গীতের আবহমানতার কথা বলে, আর একটি সুন্দর পরিবারের গল্প বলে। সুন্দরনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিতে যে অনুষ্ঠান নিবেদিত হল, তা উপস্থাপন করলেন তাঁর সুযোগ্য দুই কন্যা রূপরেখা চট্টোপাধ্যায় ও বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানের সূচনা হল একটি সমবেত রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ’ দিয়ে। ঠিক মহড়া না থাকায় গানটি সুখশ্রাব্য হয়ে উঠল না। দ্বিতীয় গানটি ‘আজি ঝরঝর মুখর বাদর দিনে’ তুলনায় ভাল। সুন্দরনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে পারদর্শী ছিলেন। তাঁরই উৎসাহে তাঁর দুই কন্যা রূপরেখা ও শ্রীরাধা সঙ্গীতের তালিম পান।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আবৃত্তি শোনালেন পারমিতা সরকার। ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত কবিতা ‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার’ ও কাজী নজরুল রচিত ‘দাও সূর্য’। পরিবেশনা যথাযথ। অলোককুমার দাস হারমোনিকায় বাজিয়ে শোনালেন হিমাংশু দত্তের সুরে ‘তোমারই পথপানে চাহি’ ও শঙ্কর জয়কিষণের সুরে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া বিখ্যাত গান ‘ইয়াদ কিয়া দিল নে কহাঁ হো তুম’। চমৎকার উপস্থাপনা। বাজনা শুনতে শুনতে মিলন গুপ্তের কথা মনে পড়ে। প্রখ্যাত সুরকার প্রয়াত অজয় দাসের কন্যা সায়রী দাস শোনালেন অজয় দাসের কথা ও সুরে ‘সন্ধ্যা ঘনাক ক্ষতি নেই, রাত্রি আসুক ক্ষতি নেই’। সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরে ‘সবার আড়ালে সাঁঝ সকালে’। ‘অবাক রাতের তারা’ ছায়াছবিতে এই গানটি গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। এ ছাড়া তিনি গাইলেন অজয় দাসের সুরে ও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় কিশোরকুমারের গাওয়া ‘মিলনতিথি’ ছায়াছবির গান ‘সুখেও কেঁদে ওঠে মন’। শ্রোতাদের অনুরোধে গাইলেন সলিল চৌধুরীর কথায় ও সুরে ‘ও মোর ময়না গো’। প্রত্যেকটি গানই সুগীত। পরবর্তী শিল্পী ইন্দ্রনীল দত্তের কণ্ঠে শোনা গেল ‘যদি কাগজে লেখো নাম’, বর্ষণমুখর দিনে শোনালেন ‘ও বর্ষা তুমি ঝোরো না গো’, ‘জানি না, কখন যে সে পিছুটান রেখে গেছে’, ‘ক’ফোঁটা চোখের জল’, ‘যখন কেউ আমাকে পাগল বলে’। উদীয়মান এই শিল্পীর গান শ্রোতাদের আপ্লুত করে তোলে। শ্রোতাদের অনুরোধে শেষ গান শোনালেন সুধীন দাশগুপ্তের কথায় ও সুরে ‘এত সুর আর এত গান’। রূপরেখা চট্টোপাধ্যায় শোনালেন ‘আমার মালতীলতা’, ‘বৃষ্টি থামার শেষে’, ‘দূরে দূরে, কাছে কাছে’ এবং সব শেষে ‘সানি’ ছায়াছবির গান রাহুল দেব বর্মনের সুরে ‘জানে কেয়া বাত হ্যায়’।

প্রথমার্ধের শেষ ভাগে শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করলেন সরস্বতীবন্দনা দিয়ে। চমৎকার সুরেলা কণ্ঠে প্রেক্ষাগৃহ ভরে গেল। অপূর্ব উপস্থাপনা। অন্যান্য গানের মধ্যে ছিল হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরের সুরে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘তুমি তো শীতল চন্দনবৃক্ষ, তুমি পাথর চোখেও যে দৃষ্টি’, অজয় দাসের সুরে ‘পাপপুণ্য’ ছায়াছবির গান, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘ভালবাসা ছাড়া আর আছে কি’... মন ভরে গেল। শ্রীরাধা অনুষ্ঠান শেষ করলেন জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘বাঁশিটির একটাই দোষ, বলে রাধা রাধা’ গানটি দিয়ে। যে সুরের মায়াজাল তিনি বিস্তার করে গেলেন, তা মনে রাখার মতো।

দ্বিতীয়ার্ধে উপস্থাপিত হল নিউ আলিপুর মাল্টিপারপাস স্কুলের প্রাক্তনীদের সাংস্কৃতিক শাখার প্রযোজনায় একাঙ্ক নাটক ‘একটি অবাস্তব গল্প’। কাহিনি, বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্পাদনা ও নির্দেশনায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। নাটকটি আগাগোড়া হাসির মোড়কে তৈরি এক জটিল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উপস্থাপিত হল। জেলারের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করলেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। উল্লেখযোগ্য অভিনয় করলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং অরূপ দে। অন্যান্যদের মধ্যে বাসুদেব মুখোপাধ্যায়, বিশ্বপ্রেম নায়ক, প্রতীক দাশগুপ্ত, অরুণাংশু চক্রবর্তী ও পার্থ পুরকায়স্থ উল্লেখ্য। নাটকটি মনোগ্রাহী হয়ে উঠেছিল। তবে একই সন্ধ্যায় নাটক ও গান পরিবেশিত হওয়ায় কোনওটিকেই আলাদা করে প্রাধান্য দেওয়া গেল না। উদ্যোক্তারা ভবিষ্যতে এ বিষয়ে একটু ভাবনাচিন্তা করতে পারেন। অনুষ্ঠানে যন্ত্রসঙ্গীতে সহযোগিতা করেছেন সিদ্ধার্থ গঙ্গোপাধ্যায় (গিটার), গৌতম চৌধুরী (কী বোর্ড), দেবজ্যোতি গোস্বামী (তবলা), সুবল মজুমদার (অক্টোপ্যাড)। এঁদের মধ্যে দেবজ্যোতি গোস্বামীর বাদন স্মরণীয়।

অনুষ্ঠান

  • বিশ্ব সঙ্গীত দিবস উপলক্ষে হাওড়া শরৎ সদনে হয়ে গেল ড্যাফোডিলস আয়োজিত এক অনুষ্ঠান। সঙ্গীতশিল্পী আরতি মুখোপাধ্যায়কে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে। ‘এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে’, ‘এক বৈশাখে দেখা হল দু’জনায়’-এর মতো গান পরিবেশন করেন তিনি। রাঘব চট্টোপাধ্যায় পরিবেশন করেন ‘তুমি নেই বলে’ নিজের জনপ্রিয় আধুনিক বাংলা গান, ‘তুমি রবে নীরবে’ রবীন্দ্রসঙ্গীত। রূপঙ্কর বাগচী পরিবেশন করেন ‘গভীরে যাও’, ‘এ তুমি কেমন তুমি’। নচিকেতা চক্রবর্তী পরিবেশন করেন ‘তুমি আসবে বলেই’। অন্বেষা বন্দ্যোপাধ্যায় গাইলেন ‘দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার’। ঝুমকি সেন পরিবেশন করেন ‘হায় হায় প্রাণ যায়’, ‘তোমার কাছে ফাগুন চেয়ে’। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় ছিলেন রুদ্র সেন।
  • সম্প্রতি ভরতনাট্যম নৃত্যশিল্পী প্রেরণা গঙ্গোপাধ্যায় এবং ঠাকুরপুকুর চিদানন্দ ডান্স অ্যাকাডেমি উপস্থাপনা করেছিল তাদের ষষ্ঠ বার্ষিক নৃত্যানুষ্ঠান অঙ্কুরণ ২০২৫। সে দিনের এই উপস্থাপনা পরিবেশিত হয় মধুসূদন মঞ্চে। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ভরতনাট্যম নৃত্যশৈলীর উপরে আধারিত আলারিপু দিয়ে। সে দিনের সন্ধ্যার বিশেষ আকর্ষণ ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’। শ্যামার ভূমিকায় ছিলেন প্রেরণা গঙ্গোপাধ্যায়, বজ্রসেনের ভূমিকায় রুদ্রাভ নিয়োগী। দীপাঞ্জন বক্সী কোটালের চরিত্রে অনবদ্য। উত্তীয়র ভূমিকায় ছিলেন বিশ্বপ্রতিম বসু। বন্ধুর ভূমিকায় কুশল চক্রবর্তী যথাযথ পরিবেশনা করেছিলেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

cultural Review

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy