E-Paper

বর্ষার রেশমাখা এক সন্ধ্যা

গানের শিল্পীদের সকলেরই বেড়ে ওঠা শান্তিনিকেতনে। তাই বর্ষাকে, রবীন্দ্রনাথের গানকে তাঁরা পেয়েছেন বড় নিবিড় করে।

শ্রীনন্দা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৩৫
মঞ্চে শিল্পীরা।

মঞ্চে শিল্পীরা।

গত জুলাই মাসে শিশির মঞ্চে পাওয়া গিয়েছিল এক টুকরো বৃষ্টিভেজা শান্তিনিকেতনকে। কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় মেমোরিয়াল ট্রাস্ট নিবেদিত এক অনুষ্ঠান— ‘বর্ষা... শান্তিনিকেতন’। অনুষ্ঠান শুরু হল সমবেত ‘বিশ্ববীণা রবে’ গান দিয়ে। প্রিয়ম মুখোপাধ্যায়, ঋতপা ভট্টাচার্য ও রঞ্জিনী মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে একে একে বর্ষার নানা রূপ ধরা পড়ল। চৈতালী দাশগুপ্ত তাঁর অতি পরিচিত ভঙ্গিতে পাঠ করলেন রানী চন্দর লেখা, কখনও বা আশ্রয় নিলেন রবীন্দ্রনাথে। গল্প, স্মৃতি দিয়ে ভরিয়ে দিলেন অনুষ্ঠান।

গানের শিল্পীদের সকলেরই বেড়ে ওঠা শান্তিনিকেতনে। তাই বর্ষাকে, রবীন্দ্রনাথের গানকে তাঁরা পেয়েছেন বড় নিবিড় করে। সান্নিধ্য পেয়েছেন কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তিদেব ঘোষের মতো গুণিজনদের। প্রিয়মের কণ্ঠে ‘ওই যে ঝড়ের মেঘে’ বা ‘এই শ্রাবণের বুকের ভিতর’ গানগুলিতে লয় নির্বাচনে শান্তিদেব ঘোষের ছায়া দেখতে পাই। তেমনই কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রভাব দেখি ঋতপার কণ্ঠে ‘কোথা যে উধাও’ বা ‘সখী আঁধারে’ গানে। মুক্ত ছন্দের গানেরও যে নির্দিষ্ট ছন্দ থাকে, তা বোঝালেন ঋতপা। তাঁর গানে মীড়ের প্রয়োগে কোথাও আধিক্য নেই। রঞ্জিনীর কণ্ঠে ‘আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে’ বা ‘ছায়া ঘনাইছে’ মনকে শান্ত করে। দ্বৈতকণ্ঠের গান ‘এ কী গভীর বাণী’ বা ‘শ্রাবণের পবনে’ চমৎকার। ঋতপার ‘আমি শ্রাবণ আকাশে’ গানে লয় নির্বাচন প্রশংসার দাবি রাখে।

কোনও নির্দিষ্ট স্ক্রিপ্ট না রেখে, গল্পের ছলে চৈতালী শোনান— ছায়া রঙ্গমঞ্চে রবীন্দ্রনাথ। সেখানে উঠে আসছে কণিকার গানের কথা, কখনও বা হলকর্ষণ, কখনও বৃক্ষরোপণের কথা। এস্রাজে দেবায়ন মজুমদার সঙ্গত করেন। ‘নীলাঞ্জন ছায়া’ গানে তাঁর বাজনা আলাদা পরিবেশ তৈরি করে। এ দিন শিশির মঞ্চে এসেছিলেন শান্তিনিকেতনের বহু প্রাক্তনী। তাঁরা গলা মেলালেন ‘মরুবিজয় কেতন’ ও ‘আমাদের শান্তিনিকেতন’ গানে। যন্ত্রসঙ্গীতে দেবাশিস সাহা, দেবায়ন মজুমদার, স্বপন অধিকারী ও অমিতরঞ্জন রায় অনুষ্ঠানকে সম্পূর্ণ করলেন। অপূর্ব মঞ্চসজ্জা। কলকাতা যেন এক টুকরো শান্তিনিকেতনের বর্ষা উপহার পেয়েছিল সে দিন।

অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠানের একটি অংশ।

অনুষ্ঠানের একটি অংশ।

  • শারদীয়ার প্রাক্কালে ঘরের লোকসংস্কৃতির নির্যাসকে ভিত্তি করে তান প্রযোজনায় ‘উমা এল’ অনুষ্ঠিত হল গত ১৬ সেপ্টেম্বর, কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে। এই নৃত্যনাট্যের ভাবনা, নির্মাণ ও বিন্যাসে ছিলেন পরিচালক আদিনাথ দাস। বিভিন্ন চরিত্রে ছিলেন হর- রণিত মোদক, উমা- সাধনা হাজরা, গিরিরাজ- মিথুন বন্দ্যোপাধ্যায়, মেনকা- কাবেরী কর। এই নৃত্যনাট্যতে তিরিশটি গান আছে। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন চন্দন কুমার রায় ও প্রমিতি রায়। মঞ্চনির্মাণে সমীর কুণ্ডু, স্বপন শীল এবংআলোয় মিঠু মণ্ডল বিশেষ মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। সব মিলিয়ে দুর্গার আবাহন নিয়ে দু’ঘণ্টার জমজমাট এই নৃত্যনাট্য। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন কৌশানী কুণ্ডু।
  • পণ্ডিত শুভেন চট্টোপাধ্যায় চার দশকের উদ্‌যাপন মঞ্চে রক ফিউশন নিয়ে হাজির হলেন রূপম, সিধু, জোজো, নিকিতা, সুরজিৎ, অমিত দত্ত সহ আরও শিল্পীরা। গানে ফিউশনে– সিজন ৩: রক ফিউশন নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল। অ্যালগোস ইভেন্টস অ্যান্ড ডেকোর-এর ভাবনা, পরিকল্পনা ও পরিচালনায় এই সিজ়নে ফিউশন সঙ্গীতে পণ্ডিত শুভেন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গীত যাত্রার চল্লিশটি গৌরবময় বছর উদ্‌যাপন করা হল, একটি ঐতিহ্য যা আধুনিক অভিব্যক্তির সঙ্গে ধ্রুপদী ঐতিহ্যকে সুন্দর ভাবে সংযুক্ত করল। রক ফিউশন ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীত এবং রকের সঙ্গে বিশ্ব সঙ্গীতের এক অভূতপূর্ব মিশ্রণের ফসল যা রূপম ইসলাম, নিকিতা গান্ধী, সিধু, জোজো, সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং অমিত দত্তের মতো বিভিন্ন ধারার সেরা সঙ্গীতজ্ঞদের এক মঞ্চে একত্রিত করল। দুস্থ শিশুদের হার্ট সার্জারির জন্য এক লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় হৃদয়ার হাতে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Review Sisir Mancha

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy