E-Paper

এসো পুণ্যপথ বেয়ে এসো হে কল্যাণী

এর পরে একবার শহরের এক পাঁচতারায় সুশান্ত প্রথম একটি প্রদর্শনী কিউরেট করার সুযোগ পেলেন।

শমিতা বসু

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:৩১
অভয়াশক্তি: চারুবাসনায় শিল্পী সুশান্ত দাসের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

অভয়াশক্তি: চারুবাসনায় শিল্পী সুশান্ত দাসের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

চারুবাসনার সুনয়নী শিল্পশালায় শিল্পী সুশান্ত দাসের দ্বিতীয় একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি। শিরোনাম ছিল, ‘আমার দুর্গা’। সুশান্তর দুর্গা রণংদেহী নন, বড় শান্ত, শীতল এই দুর্গা। তাঁকে অসুরদলনী হিসেবে সুশান্ত চিত্রিত করেননি। শিল্পীর চোখে তিনি রক্ষাকর্ত্রী। সমাজ-সংসারকে অশুভ থেকে কল্যাণের পথে নিয়ে যেতে তিনি আসেন মর্ত্যলোকে।

সুশান্ত দাস একজন স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী। কিন্তু সাহিত্যের হাত ধরেই তাঁর ‌ছবির পথ চেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি কলেজ স্ট্রিটের এক প্রকাশনী সংস্থায় কাজ শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই সম্পাদনার কাজের ভার নেন। বইয়ের প্রচ্ছদের দায়িত্বও তাঁর উপরে বর্তায়। একটি বইয়ের প্রচ্ছদের জন্য একদিন শিল্পী পরিতোষ সেনের দ্বারস্থ হতে হয় সুশান্তকে। সেই থেকে তাঁর চিত্রকলায় আগ্রহ জন্মায় এবং পরিতোষ সেনের সঙ্গে পরিচয় শিল্পজগতের প্রবেশদ্বার খুলে দেয় তাঁর কাছে। তখন থেকেই তাঁর ছবি আঁকা শুরু।

এর পরে একবার শহরের এক পাঁচতারায় সুশান্ত প্রথম একটি প্রদর্শনী কিউরেট করার সুযোগ পেলেন। কিছু নিজের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে, আর কিছু ছবি শিল্পীদের কাছ থেকে সরাসরি সংগ্ৰহ করে প্রদর্শনীটি করেন সুশান্ত। সেখানে তিনি হুসেন, রাজা, সুজা, রামকুমার প্রমুখ শিল্পীর কাজ দেখাতে সক্ষম হয়েছিলেন।

তার পরে সারা ভারতের নানা জায়গায় তিনি কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন বহু বছর। অনেক নামীদামি চিত্রশিল্পীর সংস্পর্শে এসেছেন সুশান্ত এবং সেখান থেকেই নিজের জায়গা পাকাপাকি ভাবে তৈরি করেছেন শিল্পজগতের আঙিনায়।

অভয়াশক্তি: চারুবাসনায় শিল্পী সুশান্ত দাসের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

অভয়াশক্তি: চারুবাসনায় শিল্পী সুশান্ত দাসের একক প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।

সুশান্ত দাসের সাম্প্রতিক একক প্রদর্শনীর বিষয় দুর্গা। এখানে শিল্পরসিকেরা তাঁর ২৪টি ছবি দেখতে পাবেন। ছবির মাধ্যম কখনও কন্টি, কখনও কালি-কলম,‌ আবার কখনও অ্যাক্রিলিক... আবার কিছু ছবি পরিপূর্ণ ভাবে মিশ্র মাধ্যমে করেছেন শিল্পী।

সুশান্ত দাস তাঁর দুর্গার অনুপ্রেরণা সম্ভবত পুরাণের দশমহাবিদ্যার কয়েকটি অবতারের থেকে পেয়েছেন। তার মধ্যে কমলা বা লক্ষ্মীরূপী দুর্গাকে ঘরের মেয়ের অবয়বে দেখাতে চেয়েছেন মনে হয়। এ ছাড়াও পুরাণে বর্ণিত আছে মাতঙ্গীর কথা। মাতঙ্গী হচ্ছেন ভাষা,‌ তার প্রকাশ এবং সঙ্গীতের রানি।‌ মাতঙ্গী বলেছেন যে, সত্যিকারের জ্ঞান হচ্ছে মুক্ত এবং সামাজিক বাধ্যবাধকতার বাইরে।‌ পুরাণে নবদুর্গার একটি রূপ হচ্ছে ব্রহ্মচারিণী। এ ছাড়াও সমস্ত কিছুর ঊর্ধ্বে আছেন পার্বতী। নির্মল, পবিত্র তাঁর চেহারা। হিমালয়পুত্রী থাকেন প্রকৃতির কোলে। আবার কখনও তিনি শিবকে লাভ করার জন্য ধ্যানস্থ।

শিল্পী সুশান্ত এই সব ভাবকে আকৃতি দিয়েছেন নিজস্ব এক আঙ্গিকে। প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যের দুর্গামূর্তির অনুপ্রেরণার ভাব‌ও আছে তাঁর দুর্গার অবয়বে। সব কিছুর মধ্যে তিনি প্রকৃতিকে পরম ঐশ্বর্য বলে মানেন। তাঁর দুর্গা সেই কারণেই যুদ্ধে, ধ্বংসে বিশ্বাস করেন না। প্রেম, শান্তি ও ভালবাসার বার্তা নিয়ে স্নেহময়ী জগন্মাতা মর্ত্যে অবতীর্ণ হচ্ছেন।

ছবিগুলির অধিকাংশই অবয়বের মাধ্যমে সঞ্চিত। বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করে এবং দুর্গার বিবিধ আদল নিয়ে সুশান্ত তাঁর দুর্গাকে বিনির্মাণ করেছেন। সেখানে নিয়ে এসেছেন প্রকৃতির অদ্ভুত রূপ। এ ছাড়াও এসেছে পশুপাখি, গাছপালা, লতাপাতা ইত্যাদি। পুরাতনী দুর্গামূর্তির আদলকে নিজস্ব স্টাইলে চারকোলে ড্রয়িং করেছেন। আকার দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন আকৃতিকে। আকারকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে মাথায় অনেক কিছু ভিড় করে আসে। সেই ভিড় থেকে বেরিয়ে এসে শিল্পীর দুর্গা যেন সমাহিত। তিনি যেন ত্রিভুবনের শান্তির বাহক। মনে রাখার মতো এক প্রদর্শনী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

exhibition

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy