রূপদান: শিল্পী মনোজ দত্তর প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম।
যে কোনও শিল্পীর জীবনই পরিচিতি পায় তাঁর শিল্পসম্ভার দিয়ে। এ ক্ষেত্রেও প্রয়াত শিল্পী মনোজ দত্তের জীবনের বহু উল্লেখ্য শিল্পকর্ম নিয়ে এক রেট্রোস্পেকটিভ প্রদর্শনী সাজিয়ে তুলেছিলেন বিশিষ্ট শিল্প ঐতিহাসিক ও লেখক দেবদত্ত গুপ্ত। দিল্লির সঞ্চিত আর্ট গ্যালারির সৌজন্যে, বিড়লা অ্যাকাডেমি অব আর্ট অ্যান্ড কালচারের প্রদর্শশালায় এটি আয়োজিত হয়েছিল সম্প্রতি।
শিশুমনের দেখা ও ভাললাগাগুলি মানুষ আজীবন বয়ে নিয়ে চলে। তা কখনও হয় সুন্দর, তো কখনও অসুন্দর। তেমনই শিশুবয়স থেকে দেখা লোকশিল্প ও তার সহজ আকার-আকৃতি শিল্পী মনোজ দত্তকে বিশেষ ভাবে নাড়া দিয়েছিল৷ যেমন, তাঁর ঠাকুমার দেওয়া এক মাটির বাঘ তাঁর শিল্পচর্চায় এক প্রতীকী রূপ ধারণ করে। তিনি এক জায়গায় লিখেছেন, “বাংলায় থেকেও আমি সত্যিকারের বাঘকে কখনও প্রত্যক্ষ করিনি। কিন্তু শৈশবের ওই পুতুল বাঘই আমার ছবির উল্লেখ্য এক পিকটোরিয়াল মোটিফ হয়ে বারংবার দেখা দিয়েছে।”
মনোজ দত্ত একজন স্বশিক্ষিত শিল্পী ছিলেন এবং সেই কারণেই হয়তো বা তিনি তাঁর সৃষ্টিকর্মে এমন এক অনন্য সাবলীলতা বহাল রাখতে পেরেছিলেন আমৃত্যু। শিল্পের ব্যাকরণগত দক্ষতা যেমন প্রয়োজন, তেমনই ব্যাকরণের অতিরিক্ত ব্যবহারও বহু সময়ে সৃষ্টির আনন্দধারাকে করে দেয় রুদ্ধ। এ ক্ষেত্রে, অহেতুক সেই বেড়াজালকে অতিক্রম করে, ছবিকে সহজ ভাষায় এক অনাবিল সাবলীলতায় সমৃদ্ধ করেছেন শিল্পী। এ যেন সব পেয়েছির দেশে এক সহজ বিচরণ, নেই তাতে ‘তাসের দেশ’-এর মতো কোনও আইন ও নিয়মানুবর্তিতার শৃঙ্খল। আত্মপ্রকাশের এমন ছন্দোময় রঙিন বর্ণনই শিল্পীকে করে তুলেছে অনন্য।
তাঁর কাজে বিষয়গত দিক থেকে তাই আমরা দেখতে পাই— পদ্মবন, ফুলের ডালি, মাটির বাঘ, গ্রামীণ খেলা ইত্যাদি। মূলত গোয়াশ, টেম্পেরা, জলরঙে সৃষ্ট তাঁর বেশির ভাগ ছবি। তবে শুধুমাত্র কালো কালি ও তুলির বেশ কিছু রৈখিক কাজও অত্যন্ত আকর্ষক। রেখার পেলব ও সুঠাম গতি শিল্পীর দীর্ঘ চর্চার আভাস দেয়। এ ছাড়া, বাংলার গোলাকৃতি পট অবলম্বনে তাঁর কিছু কাজ লোকশিল্পের সঙ্গে সমকালীনত্বের এক সুষম সমন্বয়কে তুলে ধরে। শিল্পমাত্রই যে এক ‘ইনস্টিঙ্কটিভ আর্জ’, তা এই প্রদর্শনীর কাজগুলির মধ্য দিয়ে বিশেষ ভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। নানা রকম পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়ে শিল্পীর ছবির যে নান্দনিক উন্মেষ, তা খুবই আকর্ষক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy