Advertisement
০২ অক্টোবর ২০২৩

মাইরা ভালই করল্যান স্যার

মাস্টারমশাইয়ের পিটুনি খেয়ে সটান বলে দিয়েছিলেন তিনি! কেন? ছেলেবেলায় নিজের শয়ে শয়ে দুষ্টুমির এক দু’ঝলকে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়মার্কামারা দুষ্টু ছেলে বলতে যা বোঝায়, আমি ছিলাম তাই। স্কুলে, পাড়ায় মারপিট লেগেই থাকত। বড়দের পিটুনি, মাস্টারমশাইয়ের বেতের ঘা— কিছুতেই রোখা যেত না। এক বারের কথা বলি। তখন আমরা মনোহরপুকুর রোডে ভাড়াবাড়িতে থাকি। আমার বয়স বছর চার। জেঠিমাকে খুব ভালবাসতাম। জেঠিমাও আমায় চোখে হারাত। কত দিন গেছে, ঘুমনোর সময় আমি জেঠিমার বুকের ওপর শুয়ে পড়তাম।

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

মার্কামারা দুষ্টু ছেলে বলতে যা বোঝায়, আমি ছিলাম তাই।

স্কুলে, পাড়ায় মারপিট লেগেই থাকত। বড়দের পিটুনি, মাস্টারমশাইয়ের বেতের ঘা— কিছুতেই রোখা যেত না।

এক বারের কথা বলি। তখন আমরা মনোহরপুকুর রোডে ভাড়াবাড়িতে থাকি। আমার বয়স বছর চার। জেঠিমাকে খুব ভালবাসতাম। জেঠিমাও আমায় চোখে হারাত। কত দিন গেছে, ঘুমনোর সময় আমি জেঠিমার বুকের ওপর শুয়ে পড়তাম। আমি ওকে ডাকতাম বমা। বমার কাছে আমি ছিলাম সোনার গোপাল।

শীতের দুপুর। দোতলার বারান্দায় রোদছায়া আলো। বারান্দার মেঝেতে শুয়ে ঘুমোচ্ছিল জেঠিমা। আমায় হঠাৎ দুষ্টুমিতে পেয়ে বসল।

দেখলাম একটা মিষ্টির ভাঁড়ে বেশ খানিকটা রস পড়ে আছে। ব্যস্, বুদ্ধিটা খেলে গেল। কাত হয়ে ঘুমোচ্ছিল জেঠিমা। ভাঁড়টা নিয়ে ওর কানে পুরো রসটা যত্ন করে ঢেলে দিলাম। রসের সুড়সুড়ি খেয়ে তড়াক করে উঠে বসে কানে হাত দিয়ে জেঠিমা বলে উঠল, ‘‘কী দিলি রে, কী দিলি রে সোনার গোপাল?’’ আর কী দিলি! আমি পালাতে পারলে বাঁচি।

মা ঘর থেকে ছুটে এসে আমাকে এই মারে, তো সেই মারে। জেঠিমা কিন্তু কিচ্ছু বলল না। বরং মায়ের মা’র থেকে আমাকে বাঁচিয়ে দিল। এর পর থেকে ওই কানে জেঠিমা আর ভাল করে শুনতে পেত না।

ময়মনসিংহর মৃত্যুঞ্জয় ইস্কুলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমি তখন দশ কী এগারো। বাবা বদলি হওয়াতে আমরা তখন ওখানে।

বাড়ির কাছেই ছিল ব্রহ্মপুত্র নদী। ইস্কুলে যাওয়ার আগে ব্রহ্মপুত্রে সাঁতার না কাটলে যেন ভাত হজম হত না। সে’ও আবার দু’দশ মিনিট নয়, টানা এক-দেড় ঘণ্টা। কানে জল ঢুকত রোজ। আর সে জল সহজে বেরও হত না। ওই জলভরা কান নিয়েই ইস্কুলে চলে যেতাম। সে দিনও তাই।

তত দিনে সেই ইস্কুলেও দুষ্টুর শিরোমণি বলে নাম করে ফেলেছি। কিন্তু হাজার কুকাজ করলেও মনিটর বোর্ডে আমার নাম লিখতে ভয় পেত। সে দিন ও আর থাকতে পারেনি। ক্লাসেরই একটা ছেলের সঙ্গে এত মারপিট করেছিলাম যে, বেঞ্চি-টেবিল উল্টেপাল্টে একশা। মনিটর সোজা নাম তুলে দিয়েছিল বোর্ডে।

মাস্টারমশাই বাঙাল। খুব রাগী। এসেই আমার নাম দেখে বললেন, ‘‘কী করছিলা, ক?’’ আমি সোজা কথার ছেলে। সটান বললাম, ‘‘এট্টু মারপিট করতাসিলাম।’’ এত স্পষ্ট কথা ওঁর বোধ হয় সহ্য হয়নি। হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে পিঠে বিরাশি সিক্কার থাপ্পড় মেরে বললেন, ‘‘সইত্যবাদী যুধিষ্ঠির, না!’’ গদাম করে থাপ্পড়টা পিঠে পড়তেই হঠাৎ বুঝলাম কান দিয়ে জলটা বেরিয়ে গেল। তখন পিঠের ব্যথার চেয়ে কানের আরামটাই বেশি বোধ হচ্ছিল। কান মুছতে মুছতে মাস্টারের দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘‘মাইরা ভালই করল্যান স্যার, জল ঢুকছিল, বাহির হইয়্যা গ্যালো।’’ এ কথা শুনে কোন মাস্টারমশাই চুপ থাকতে পারেন! ফলে এ বার শুরু হল রামধোলাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE